![]() |
গল্প ঃ- সপ্নছায়া !
-গুড আফটারনুন ম্যাম
একটু চাপা হাসি দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম।এই রেস্টুরেন্টে আমি আগে কখনো আসিনি।অনেক বড় আর বেশ সুন্দর।হালকা নীল বাতি জ্বলছে।ভেতরের পরিবেশটা বেশ মনোরম,সন্ধ্যে সন্ধ্যে ভাব।এই মাত্র যে আমি ত্বক ফাটা রোদ্দুরে রিক্সা চড়ে এসেছি তা ভুলেই গিয়েছি। রোমান্টিক জুটির জন্য রোমাঞ্চকর পরিবেশ।খুঁজে খুঁজে কোণার দিকের একটা চেয়ারে বসলাম।
আমি আবার একটু কেমন যেন টাইপের মেয়ে ।হাসাহাসি,দুষ্টুমি,হৈচৈ,আড্ডা এসব পছন্দ করিনা।আসলে এসব আমার ভালোই লাগেনা।বন্ধুরা এইজন্য আমাকে 'নিরামিষ' উপাধিতে ভূষিত করেছে।বিকেলে ওরা যখন আড্ডা বা ঘোরাঘুরিতে ব্যাস্ত তখন আমি ব্যালকনিতে থাকা আর এফ এল প্লাস্টিক চেয়ারে বসে কানে হেডফোন গুঁজে দেই।আমার কানে বাজে নজরুল নয়তো রবীন্দ্র আর হাতে থাকে হুমায়ূন বা শরৎচন্দ্র।তবে কবিতা পড়তে আমার ভালো লাগেনা।এমন না যে বন্ধুদের সাথে যেতে আমাকে বাসা থেকে বারণ করা হয়,আমি নিজেই যাইনা।আর কখনো ওদের সাথে বের হলেও রাস্তা বদলে আমি চলে যাই নীলক্ষেতে।
আজকে একটা এডভেঞ্চারের জন্যই এই রেস্টুরেন্টে আমার আসা।পারিবারিক ভাবে বিয়ে ব্যাপারটা কি এডভেঞ্চারের আওতায় পড়েনা?আমার কাছে তো এটাই বিশাল এডভেঞ্চার।আর এই জন্যই প্রেম জিনিসটাকে আমি এক পাশে রেখে দিয়েছিলাম।
আমি আবার একটু নাক কুচকানো টাইপের।কোন কিছু দেখে তার প্রতি সহজে ভালো লাগা জন্মাতে পারিনা।কিংবা হুটহাট কারও প্রশংসা করে তার মন খুশী করতে পারিনা।বন্ধুরা যখন একে অন্যকে দেখে বলে
-'ওয়াও দোস্ত তোরে আজকে হেব্বী লাগতেছে,চরম মামী চরম।'
তখনো আমি চুপ করে থাকি।অনিচ্ছা সত্বেও সবার অনেক জোরাজুরিতে বলতে বাধ্য হই
-'খারাপ না।তবে সানগ্লাসটা না পরলে আরও ভালো লাগতো,চোখের কাজলটা দেখার সুযোগ পেত সবাই'
কিন্তু আজকে যার সাথে দেখা করতে এসেছি তার একটা ছবি দেখেই মনের ভেতর সামান্য একটু ভালোলাগা তৈরী হয়েছিল।যেমনটা এই রেস্টুরেন্টে এসেই আমার ভালোলেগেছিলো তেমন।আম্মুর কাছ থেকে মোটামুটি সব তথ্য ও জানতে পারলাম।তার নাম আবীর,প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টাডি কমপ্লিট করে কিছুদিন হলো একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে জব করছে।আমি পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে পড়লেও এই ব্যাপার টা আমার কাছে অস্বাভাবিক লাগেনি।কারণ চান্স না পেলে আমাকেও প্রাইভেটেই পড়তে হতো।
ঘড়িতে এখন সাড়ে পাঁচটা বাজে।আমি এসেছি আধা ঘন্টা হয়ে গেলো।এর মধ্যেই ওয়েটার কে বেশকয়েকবার বলতে হয়েছে 'একটু পর অর্ডার দিচ্ছি।'কারণ দেখা যাবে আমি কফির কাপে চুমুক দিতেই তিনি উপস্থিত হবেন আর ভাববেন তার জন্য অপেক্ষা করার মতো ধৈর্য্য নেই আমার যা আমার কাছে একটুও ভালো লাগবেনা।
আমার থেকে একটু দূরে কয়েকজন মেয়ে বন্ধু বসে আড্ডা দিচ্ছে।সম্ভবত ওদের কারোরি জন্মদিন।মেয়ে বন্ধু বললাম কারণ বান্ধবী শব্দটা আমার ভালো লাগেনা।বন্ধু শব্দের মধ্যে যেমন একটা অদৃশ্য ভালোবাসা আর দৃঢ় বন্ধন কাজ করে বান্ধবী শব্দটার মাঝে কেমন যেন একটা অদৃশ্য দূর্বলতা কাজ করে।এটা আমার ধারণা।সবার সাথে আমার ধারণা নাও মিলতে পারে।ওদের খাওয়া দাওয়া শেষে রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ একটা সেবা মূল্যায়ন কাগজ এনে দিলেন।পাজি মেয়েগুলো কি লিখেছে সেটা নিজেরাই পড়ে হাসাহাসি করছে 'অনুজ্জ্বল আলোর জন্য ছবি তোলা থেকে বঞ্চিত হলাম।দয়া করে লাল হলুদ উজ্জ্বল আলোর ব্যাবস্থা করবেন' ওদের কথা শুনে আমিও একটু হেসে উঠলাম আর তখনই আমার সামনে একজন এসে দাড়ালেন
-ইক্সকিউজমি,আমি কি এখানে বসতে পারি?
উনাকে দেখে আমি অপ্রস্তুত হয়ে দাড়ালাম।ইনিতো দেখছি আমার থেকেও বেশী ভদ্র। আমার কাছ থেকে বসার অনুমতি চাইলেন কেন বুঝলাম না।একটা ব্যাপার বুঝলাম না,ইনিই তো এতক্ষণ পাশের ঐ চেয়ারে সম্ভবত বন্ধুর সাথে বসেছিলেন।উল্টো দিকে ছিলাম বলে আমি চেহারা দেখতে পাইনি।
উনি সামনে আসাতে আমি লজ্জা পাচ্ছি কিনা বুঝতে পারছিনা। একটু হেসে বললাম
-প্লীজ বসুন
-থ্যাঙ্কস,আপনার সাথে আর কেউ নেই?
-জী?
-মানে আপনি কি একা এসেছেন?
-জী
-গুড,আপনি কি আমাকে একটু হেল্প করতে পারবেন?
-জী?
উনার এমন প্রশ্নে আমি অবাক না হয়ে পারলাম না।উনি বললেন
-আপনি আমার কথা বুঝতে পারছেননা তো?
-জীনা
-ওকে আমি আপনাকে বুঝিয়ে দিচ্ছি।
উনি আমাকে যা বোঝাতে চেয়েছেন আমি সম্ভবত তাই বুঝতে পেরেছি।উনি একজনের সাথে দেখা করতে এসেছেন যার সাথে উনার বিয়ের কথাবার্তা চলছে। আর উনার পরিবার এই মেয়েকে হাতছাড়া করতে চাচ্ছেননা ।কিন্তু তিনি এখন বিয়ে করবেননা কারণ তিনি লাভ ম্যারেজ করবেন।ছাত্রাবস্থায় মনের মতো কাউকে পাননি আর তার মেকআপ এর জিনিস পত্রের আর রেস্টুরেন্টের বিল দেয়ার মতো সামর্থ্য ছিলোনা বলে মানে বাবার কাছ থেকে নিবেননা বলে উনি প্রেমে জড়াননি।এখন নিজে উপার্জন করছেন আর এখন তিনি প্রেম করবেন আর প্রেমিকা খুঁজে বেড়াচ্ছেন তিনি।এরেঞ্জ ম্যারেজ করবেননা কারণ এতে অন্য কারও গার্লফ্রেন্ডকে বিয়ে করার ৯০% সম্ভাবনা থাকে আর উনি এই রিস্ক নিতে চাননা।আমি হেসে জানতে চাইলাম যার সাথে উনি দেখা করতে এসেছেন তার ছবি দেখেছেন কিনা।উনি বললেন
-ইনবক্সে পড়ে আছে।মেগাবাইট ছিলোনা বলে দেখিনি তবে আমি না দেখেই বলেছি আমার পছন্দ হয়নি। আব্বু বললেন সামনে থেকে দেখলে নাকি পছন্দ হবে তাই জোর করে পাঠিয়েছেন দেখা করতে
- তো আজকে দেখে যদি পছন্দ হয়?
-আরেহ ধুরর,মাথা খারাপ নাকি?পাবলিক ভার্সিটিতে পড়ুয়া মেয়েদের মাঝে ভাবের পর্বত।এই মেয়ে বিয়ে করবো আমি?তার ফেইসবুক প্রোফাইলে সবকিছুতেই তালা মারা
- তালা মারা থাকলেই ভাব?আচ্ছা আপনি যে আমার সাথে বসে কথা বলছেন সে যদি এসে দেখে
-এতো তাড়াতাড়ি আসবে?পাঁচটায় আসতে বলেছি এখন প্রায় ছয়টা।সে হয়তো এখনো আয়নার সামনে বসে চুল ইস্ত্রি করছে।
-স্ট্রেইট?
-ওইটাই।মেয়েরা না খেয়ে থাকবে তবুও মেকআপ না করে থাকবেনা।বিয়ের পর দেখা যাবে তার চুল স্টাইল করতেই সিনেমা হল,রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যাবে।
-আপনার কি লম্বা চুল পছন্দ না?টম বয় টাইপ মেয়ে গুলো পছন্দ?
-ঐগুলা মেয়ে নাকি?
-তাহলে আপনার কেমন মেয়ে পছন্দ?শান্ত চুপচাপ. ও না আবার চঞ্চল ও না?
-কোনোটাই অতিরিক্ত না ।দুটোই মেলানো মেশানো।
-আর যাকে দেখতে এসেছেন সে কেমন?
-আতেল টাইপের।সারাদিন নাকি বই নিয়ে থাকে।আচ্ছা যাইহোক আপনি এখন আমাকে হেল্প করেন
-কিভাবে?
-আপনাকে আমি ঐ মেয়ের নাম্বার দিচ্ছি।তাকে বলবেন আপনি আমার গার্লফ্রেন্ড
আমার অনেক হাসি পাচ্ছিলো।এইরকম কিছু আমার সাথে ঘটবে আমি ভাবতেও পারিনি।নিজের ফোন থেকে নিজের নাম্বারে কল দেয়াটার মতো হাস্যকর ব্যাপার আর কিইবা হতে পারে?অনেক কষ্টে হাসি চেপে রেখে ফোন দিলাম।ওপাশে কি বলছে তা শোনার জন্য উনি আমার দিকে তাকিয়ে কান পেতে রইলেন।কিন্তু ফোনের ওপাশের কথা উনার কান পর্যন্ত পোঁছানোর কথা না।আমি কানের সাথে ফোন ধরে বললাম
-হ্যালো সাবিহা বলছেন?
-
-আমার নাম তিশা।আমি কি আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি?
-
-না চেনারই কথা।কিন্তু আমি আপনাকে চিনি।আচ্ছা আপনি এখন কোথায়?
-
-আপনি বিরক্ত হবেননা প্লিজ,আমি আপনাকে সব খুলে বলছি।আমি আবীর এর গার্লফ্রেন্ড
-
-মানে আবীর আমার বয়ফ্রেন্ড।আপনি আজকে আবীরের সাথে সিটি মহল রেস্টুরেন্টে দেখা করতে আসছেননা?
-
-আমি কিছুই বাজে বকছিনা।আপনি এসেই দেখুন আমি আবীরের সাথে বসে আছি।বিশ্বাস না হয় আপনি কথা বলে দেখুন ওর সাথে।
উনার হাতে ফোনটা দিলাম।উনি কিছুক্ষণ হ্যালো হ্যালো বলেও ওপাশ থেকে সাড়া পেলেননা ,সাড়া পাওয়ার কথাও না।উনি না বুঝলেও আপনারা তো বুঝেছেন আমি এতক্ষণ কারও সাথেই কথা বলছিলাম না।উনি বললেন
-মনে হয় মেয়েটা রাগ করে ফোন কেটে দিয়েছে।যাক কাজ হয়েছে।আর আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।কি খাবেন বলুন?
-কিছু খাবোনা।আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।আপনার উপকার করতে পেরেছি এটাই আমার কাছে অনেক কিছু।কারও উপকার করতে পারলে ভালোই লাগে।আচ্ছা আমি এখন আসি।ভালো থাকবেন।
-আপনি কি এই রেস্টুরেন্টে প্রায়ই আসেন?
-আমি আজকেই প্রথম আসলাম আর কখনো আসবো কিনা জানিনা।
-অহ আমি এখানে মাঝে মাঝে আসি,এই রেস্টুরেন্ট ছাড়া কোথাও খুব একটা যাইনা
-ওহ আচ্ছা,আমার অবশ্য ভালোই লেগেছে।বিয়ের পর আসতেও পারি।আচ্ছা আসি আমি আর হ্যা বেস্ট অফ লাক
- বেস্ট অফ লাক কেন?
- ম্যারিড লাইফের জন্য
বাসায় এসে আব্বু আম্মুকে যা বলা উচিৎ তাই বললাম।আর আমি মিথ্যে কথা না বলার চেষ্টা করি।রাতে খাবার টেবিলে বসে জানতে পারলাম পাত্রপক্ষ পুরো পরিবার নিয়ে আমাকে কালকে বিকেলে দেখতে আসবেন।কথাটা শুনে নিজেই হেসে উঠলাম।হাসি লুকোনোর অনেক চেষ্টা করেও পারলাম না।দুলাভাই এই সুযোগে আমার সাথে একটু দুষ্টুমি করে নিলেন।একটু পরে আমার ফোনে কল আসলো।রিসিভ করে বললাম
-হ্যালো
-রাখেন আপনার হ্যালো।আপনি মিথ্যে বলেছেন কেন?
-আপনি এভাবে বিহেভ করছেন কেন?আর আমি কি মিথ্যে বললাম?
-মিথ্যে বলেননি?আপনি বলেননি আমাদের দেখা হয়েছে আর আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে?
-হুম বলেছি
-তো এটা মিথ্যে না?আমাদের তো দেখাই হয়নি।আর আমার গার্লফ্রেন্ড আপনাকে ফোন দিয়ে বলেছেনা আমি এই বিয়েতে রাজী না?
-সেটা আপনাদের ব্যাপার।আপনাকে আমার ভালো লেগেছে আমি বলেছি ব্যাস
-আপনি জানেন আপনার আব্বু আমার আব্বুকে ফোন দিয়ে এটা বলার পর আমার আব্বু আমাকে অনেক চিল্লানী শুনাইছে
-চিল্লাবেনা কেন?আপনি বলেছেন কেন যে আমি আপনাকে ফোন দিয়ে বলেছি আমার বয়ফ্রেন্ড আছে,আমি এই বিয়েতে রাজীনা?
-শোনেন আমি আপনাকে বিয়ে করছিনা।আপনি অনেক ঝগড়াটে একটা মেয়ে।আর যেই জন্য আপনাকে ফোন দিয়েছি তা হলো আমার গার্লফ্রেন্ডের নাম্বার টা আমাকে মেসেজ করে পাঠিয়ে দিবেন
-আপনার গার্লফ্রেন্ড এর নাম্বার আমি কোথায় পাবো?
-আপনাকে না বিকেলে কল দিলো?
-আপনার কাছে নেই?
-না নেই
-কেন?নাম্বার ডিলিট হয়ে গেছে?
-হ্যা
-মুখস্থ নেই?
-না নেই,দিতে বলেছি দেন তো
-কেমন বয়ফ্রেন্ড আপনি? গার্লফ্রেন্ড এর নাম্বার মুখস্থ করতে পারলেননা।আপনাকে বিয়ে করে তো ঠকতে হবে মনে হচ্ছে।
-এহহ আপনাকে কে বিয়ে করছে?আপনি নাম্বার সেন্ড করবেন কিনা?
-উঁহু,আচ্ছা আপনার গার্লফ্রেন্ডের নাম টা যেন কি?
-আ আম নাম? নাম হচ্ছে আ
-নামও ভুলে গেছেন?
-না ভুলবো কেন?আর আপনাকেই বা বলবো কেন?
-ওকে বইলেননা।আচ্ছা এগারোটা বেজে গেছে।আমাকে ঘুমুতে হবে।এখন ফোন রাখছি।কালকে দেখা হবে
-আমি কালকে আসবোনা।আপনি ওর ফোন নাম্বার দেন
-দিবোনা
-দিবেননা?
-উঁহু
-ওকে ফাইন।কালকে তাহলে আমাকে আসতেই হচ্ছে।আপনাকে দেখার জন্য না,নাম্বারের জন্য।
ফোন রেখেই হাসতে লাগলাম।আল্লাহ আমি দুষ্টুমি করতেও শিখে গেছি।একদিনেই উনি আমার ভেতর থাকা দুষ্টুমির সুপ্ত প্রতিভা জাগ্রত করতে পেরেছেন,ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই মিথ্যে কথা বলা টাও শিখিয়ে দিবেন।আজকে সারাদিন আমি যতো হেসেছি মনে হয়না হত এক সপ্তাহে এতো হেসেছি কিনা।বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম আর কালকে কি হবে তাই নিয়েই ভাবতে লাগলাম৷আমি মোটেই কল্পবিলাসী না তবুও আজ আমি নিজের অজান্তেই কল্পনা করছি।হারিয়ে যাচ্ছি অজানা এক স্বপ্নছায়ায়।
দোতলার বারান্দায় দাড়িয়ে দেখলাম উনারা আসছেন।বড় আপা এসে আমাকে সাজাতে নিয়ে গেলেন আর বললেন কালকে সাজগোজ না করাতে নাকি আমাকে ছেলের পছন্দ হয়নি তাই আজ আমাকে আটা ময়দা মাখার দায়িত্বটা উনিই নিলেন।কিন্তু আমি আবার রুটি পরোটা একটু কম খাই তাই বেঁচে গেলাম।
কিছুক্ষণ পরে আমি চা হাতে ঘরে প্রবেশ করলাম।আমাকে দেখেই উনি হঠাৎ দাড়িয়ে গেলেন।উনার বড় ভাই উনার হাত ধরে জোর করে বসালেন।উনি পকেট থেকে ফোনটা বের করে কিছু একটা দেখলেন আর তারপর আমার দিকে হা করে তাকালেন।হা করে না তাকিয়ে উপায় আছে?গতকালকের রেস্টুরেন্টের সেই মেয়েটি আর আজকে সাবিহা নামের যেই মেয়েটিকে উনি দেখতে এসেছেন তারা আলাদা কেউ তো নয়।
আমার হাত থেকে চায়ের কাপ নেয়ার সময় উনার হাতটা বেশ কাঁপছিলো।ব্যাস নিজের গায়েই চা ফেলে দিয়ে আউচ করে উঠে দাড়িয়ে গেলেন।আব্বু আমাকে বললেন উনাকে ওয়াশরুম টা দেখিয়ে দিতে।উনি শার্ট ঝেড়ে বোকা বোকা ভাব নিয়ে আমার পিছু পিছু আসছিলেন আর আমি ভাবছিলাম কোন প্রকার ব্যার্থতার ছাপ ছাড়াই আমি চোখ টেপায় সফলতা অর্জন করতে পেরেছি।
টাওয়াল হাতে আমি ওয়াশরুমের সামনে দাড়িয়ে আছি।উনি ভ্রুঁ কুঁচকিয়ে তাকিয়ে আমার হাত থেকে টাওয়াল টা নিলেন।উনার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে জিদে উনার গা জ্বলে যাচ্ছে।উনি বললেন
-আপনাদের ব্যালকনি টা কোথায়?
-কেন?গার্লফ্রেন্ডকে কল করবেন?
-গার্লফ্রেন্ডকে গলা টিপে দিবো।
-আল্লাহ!কেন?
-আমার সাথে ফাইজলামী তাইনা?
ব্যালকনির সাথে হেলান দিয়ে উনি দাড়িয়ে আছে।আর আমি গাছে ফুটে থাকা ফুলের পাপড়ি ছুঁয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছি।উনি বললেন
-এরেঞ্জ ম্যারেজ ব্যাপার টাই আসলে বেশী ভালো তাইনা?
-কিজানি।তবে লাভ ম্যারেজের প্রতি আমার ইন্টারেস্ট ছিলো
-মানেহ?
-মানে …
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম
-আমার একজনের সাথে সম্পর্ক ছিলো
-কি?আর ইউ সিরিয়াস?
-হুম
উনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে কি যেন ভাবলেন।তারপর বললেন
-সম্পর্ক ছিলো?এখন তো নেই?
-না
-তাহলে সমস্যা নেই তো।এইরকম বিয়ের আগে দু একটা সম্পর্ক থাকতেই পারে॥এটা ব্যাপার না।
-কিন্তু আপনি না বললেন অন্যের গার্লফ্রেন্ডকে বিয়ে করবেননা?
-অন্যের বউকেও বিয়ে করতে রাজি আছি যদি সে আপনি হোন।
আমি হেসে বললাম
-আপনি অনেক ভালো শিক্ষক হতে পারেন।মিথ্যে কথা শেখানোর জন্য একটা স্কুল খুলতে পারেন
-মানে?
-মানে আপনি গত দুইদিনে আমাকে প্রচুর মিথ্যে কথা শিখিয়েছেন
-তার মানে প্রেমের ব্যাপার টা মিথ্যা?আচ্ছা?থাকেন আমার সাথে তারপর দ্যাখেন আর কি কি শিখাই?
-কিন্তু আমি যে আতেল টাইপের মেয়ে?
-আমি অতো পড়তে দিবো নাকি?
-আমি যে পাবলিকে পড়ি?আমার যে ভাব বেশী?
-কিছু ভাব আমি নিয়ে নিবো
-কিন্তু আপনি তো লাভ ম্যারেজ করতে চেয়েছেন?
-বউয়ের সাথে প্রেম করা বারণ আছে নাকি?
দুলাভাইয়ের ডাক শুনে ব্যালকনি থেকে আবার সামনের ঘরে গেলাম।তিনি বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছিলেন।বড়রা সবাই এঙ্গেজমেন্টের তারিখ ঠিক করছিলেন।তিনি কাচুমাচু করে দুলাভাইয়েরমাশ কানে কানে কি যেন বললেন?দুলাভাই বললেন "এতো দেরী করার তো দরকার নাই।বিয়েটা আগামী সপ্তাহেই হয়ে যাক।" আমি উনার দিকে তাকাতেই উনি চোখ টিপ দিলেন।দুজনেই যখন রাজি তখন প্রেম ব্যাপারটার স্বাদ পেতে ক্ষতি কি?হোকনা সেটা বিয়ের পরে!
------------------------------------------------------------------
https://banglalovestory247.blogspot.com/
Tags:
Banglalovestory247, love story bangla, নতুন রোমান্টিক লাভ স্টোরি, লাভ স্টোরি, রোমান্টিক লাভ স্টোরি বাংলা, ভালোবাসার গল্প, বউ এর সাথে রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প, ভালোবাসার রোমান্টিক গল্প, সেরা ভালোবাসার গল্প, story ,ভালবাসার গল্প, মিষ্টি প্রেমের গল্প, রোমান্টিক ভালবাসার গল্প, Love story, bangla romantic love story,
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন