সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গল্প:- পাত্র বদল - ১ম পর্ব

 


     গল্প:- পাত্র  বদল
    ১ম পর্ব


একটা বিরাট বড় ভুল হয়ে গেছে। এই ভুল কোনদিন শুধরাতে পারবে না মিতু। এই জন্য সে ফুলশয্যার রাতে বিছানায় বসে হাউমাউ করে কাঁদছে।
তার কাঁদার কারণ হলো তার পাত্র বদল হয়েছে।যে আজ বর সেজে গাড়ি করে তাকে তোলে আনতে গিয়েছিল সে আসলে তার বর নয়।বরের জমজ ভাই।মিতু প্রথম প্রথম একটুও বুঝতে পারেনি।দু ভাই ঠিক একই রকম দেখতে।স্বাস্থ চেহারা কোন কিছুতেই তাদের ফারাক করা দায়। কিন্তু একটা জায়গায় বিরাট বড় ফারাক!


তার জন্য বর সেজে যে গিয়েছিল সে সুন্দর করে কথা বলতে পারে।আর এখন যে তার বাসর ঘরে এসেছে সে একটুও কথা বলতে পারে না।বোবা।
বোবা ছেলের কাছে মিতুর বাবা বিয়ে দিবে না কিংবা মিতুও এই বর পছন্দ করবে না এই জন্যই একটা মিথ্যে নাটক সাজিয়ে তাকে বউ করে আনা হয়েছে এ বাড়িতে।
মিতুর কান্না শুনে তার শাশুড়ি ইয়াসমিন বেগম এলেন ঘরে। এসে বললেন,'কাঁদো কেনো বউমা?


মিতু কাঁদতে কাঁদতেই বললো,'আপনারা এটা কীভাবে করতে পারলেন? আমার সর্বনাশ কেন করলেন আপনারা সবাই মিলে?


ইয়াসমিন বেগম মিতুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,'যা হয়ে গেছে মা তা নিয়ে আর মন খারাপ করে লাভ নাই। আসলে এইটা তোমার নিয়তি গো মা!
মিতুর এবার রাগ পেলো।সে বললো,'এই বিয়ে আমি মানি না।আমি ডিভোর্স চাই।আর আপনার ছেলেকে আপনি অন্য ঘরে নিয়ে যান।ওর সাথে এক ঘরে কিছুতেই আমি থাকবো না!


ইয়াসমিন বেগম মেজাজ দেখালেন না। তিনি খুব ভালো করেই জানেন যে রেগে যায় সে হেরে যায়। তিনি মিতুর একটা হাত ধরে ফেললেন। তারপর কেঁদে উঠে বললেন,'মা,মাগো, তুমি যদি আমার ছেলেরে ডিভোর্স দেও তাইলে আমার বোবা ছেলেডা গলায় দড়ি দিয়ে মরবো গো মা! এই মুখ সে আর কাউরে দেখাইবো না!


মিতু ইয়াসমিন বেগমের কাছ থেকে তার হাত ছাড়িয়ে নিলো। তারপর বললো,'শুনুন। আমার এসব মোটেও ভালো লাগছে না। আপনার ছেলেকে পারলে এখান থেকে নিয়ে যান অন্যতাই আমাকে অন্য ঘরে জায়গা দিন। এই বোবাটার সাথে এক মিনিটও আমি থাকতে পারবো না!
রাগে এবং দুঃখে মিতুর গা রি রি করছে। ইচ্ছে করছে গলায় ফাঁস দিয়ে মরে যেতে।


ইয়াসমিন বেগম আবার অনুনয় করতে লাগলেন মিতুকে। বললেন,'মা,তোমার কাছে আমি আমার ছেলেরে রাইখা যাইতেছি। এখন তোমার যদি ইচ্ছা হয় তারে ডিভোর্স দিবা তাইলে তারে গলা টিইপা মাইরা ডিভোর্স পেপারে ওর সাইন নিয়া নিও।আর যদি মায়া হয় তাইলে এক ঘরে থাইকো।
এই কথা বলে মিতুর শাশুড়ি ইয়াসমিন বেগম ঘর থেকে বেরিয়ে চলে গেলেন।মিতু পেছন থেকে ক্রন্দন করে চিৎকার করে বলতে লাগলো,'আমি এইখানে থাকবো না। আপনি আপনার ছেলেকে এখান থেকে নিয়ে যান।'
ইয়াসমিন বেগম শুনেও না শোনার ভান করে এখান থেকে কেটে পড়লেন।



ইয়াসমিন বেগম এখান থেকে যাওয়ার পরই মিতু বিছানা থেকে উঠে গিয়ে জুয়েলের কলার চেপে ধরে বললো,'আপনিও কী না করতে পারলেন না।চুরি করে বিয়ে করেছেন। ইচ্ছে করছে আপনাকে মেরে ফেলতে। বোবা হয়েছেন তো আরেকটা বোবাকেই বিয়ে করতেন। আমায় এনে মারলেন কেন!


মিতু রাগে ফুঁসছে। জুয়েলের চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে।মিতু সেই জলের দিকে তাকিয়ে হাসলো।আর মনে মনে বললো,এই বাড়ির সবকটা মানুষই এক্টর।যেন সিনেমায় অভিনয় করছে। ইচ্ছে হলেই কেঁদে ফেলতে পারছে। ইচ্ছে হলেই মন ভুলানো কথা বলে ফেলছে।
মিতু এবার জুয়েলকে ছেড়ে দিয়ে আবার খাটের উপর এসে বসলো। তারপর হাঁটুর ভেতর মাথা গুঁজে দিয়ে কাঁদতে লাগলো।



রাত বাড়ছে।মিতুর বোবা বরের নাম জুয়েল। জুয়েলের কিন্তু পড়াশোনা জানা আছে। দুনিয়ার সবকিছু সে বুঝে। কিন্তু তার সমস্যা এই একটাই।কথা বলতে পারে না। এখানে এতোক্ষণ কী হয়েছে জুয়েল সব বুঝতে পেরেছে। বুঝতে পেরেছে বলেই সে তার পাঞ্জাবির পকেট থেকে কলম বের করে বিছানা থেকে উঠে টেবিলের কাছে গেল। তারপর টেবিলের উপর থেকে সাদা খাতা নিয়ে একটা পৃষ্ঠায় লিখলো,'আমি জানতাম না এমন কিছু হচ্ছে।আমি শুধু জানতাম এটা আমার ভাইয়ের বিয়ে।
 কিন্তু একটু আগেই আমার মা আমাকে সাজিয়ে গুজিয়ে দিয়ে বলে আজ নাকি আমার বাসর। আপনি আমার স্ত্রী।
 
 
তারপর খাতার কাগজ টা ছিঁড়ে এনে তুলে দিলো মিতুর হাতে। মিতুর এই লিখাটা পড়ে আরো রাগ বাড়লো।সে জুয়েলের হাত থেকে কলমটা কেড়ে নিয়ে লিখলো,'আপনাকে বললেই আপনি মানলেন কেন?
জুয়েল লিখাটা পড়ে আবার লিখলো,'না মেনে কোন উপায় ছিল না।মা বলেছিল আমি যদি এই বিয়েতে রাজি না হয় তবে তিনি মরে যাবেন। মাকে আমি অনেক ভালোবাসি। মায়ের জন্যই আমার রাজি হতে হলো!
জুয়েলের চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে এখনও।


মিতু আবার লিখলো,'কাঁদছেন কেন আপনি? আপনার তো আজ সুখের দিন।চুরি করে সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করে এনেছেন।তার সাথে বাসর করবেন। আপনার তো হাসতে হাসতে মরে যাওয়ার রাত আজ!
জুয়েল খাতাটা টেনে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে লিখলো,'আমি অতটা খারাপ নয় মিতু। আপনি চাইলে আমায় ডিভোর্স দিতে পারেন।আর যদি বলেন আমাকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে তবে আমি এক্ষুনি চলে যেতে রাজি।
মিতু আরেকবার জুয়েলের মুখের দিকে তাকালো। তারপর খাতাটা ওর কাছ থেকে নিয়ে----





মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

গল্প: ১০ দিনের বউ

গল্প: ১০ দিনের বউ সকালে দরজায় পত্রিকাওয়ালার ডাক শুনে ঘুম ভাঙলো.... ঘুম ঘুম চোখে ঘড়ির দিকে তাকালাম.... ৯:২৫ বাজে... OMG........সাড়ে ন'টা বেজে গেছে... তাড়াতাড়ি শরীরের উপর থেকে কাঁথাটা একপাশে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বাথরুমের দিকে দৌড় দিলাম.... যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দাঁতে ব্রাশ ঘষাতে লাগলাম... চোখে মুখে জল দিলাম... অতঃপর ফ্রেস টেস হয়ে রুমে এলাম... একদিকে শার্ট প্যান্ট পড়ে রেডি হচ্ছি.. একইসাথে অন্যদিকে মুখে পাউরুটি ঢুকাচ্ছি... ভালো করে খাওয়ারও সময় নেই.. উফফ অনেক দেরি হয়ে গেছে... শেষে তাড়াতাড়ি মুখের পাউরুটিটা গিলে টাই টা হাতে নিয়েই তাড়াতাড়ি দরজা লক করে বেরিয়ে পড়লাম.. দ্রুত হাটা ধরলাম... ইসস বাইকটা Repair করাতে দিয়েছি.. নাহলে বাইক দিয়েই যাওয়া যেত.. যাই হোক এখন এসব না ভেবে তাড়াতাড়ি বড় রাস্তায় গিয়ে একটা রিকশায় উঠলাম.... রিক্সায় বসে বসে টাই টা বেধে নিলাম.... আজকে অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে... ব্যাচেলর মানুষ.. ঢাকায় একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করি.. একটা মেসে একাই থাকি.. সকাল সকাল যে কেউ ঘুম থেকে ডেকে তুলবে সেরকম কেউও তো নেই... যাই হোক, এখন এসব ভাবলে চলবে না.. আমাদের অফিসের বস এমন...

{গল্প: হেড মাষ্টারের দুষ্টু মেয়ে }

  গল্প: হেড মাষ্টারের দুষ্টু মেয়ে জে এস সি পাশ করে আজ নতুন একটা স্কুলে ভর্তি হলাম অবশ্য আগে বাবা মার সাথে থাকতাম এখন ভাইয়ার কাছে আসলাম কারন স্কুল টা কাছে তাই | তো আজ প্রথম স্কুলে গেলাম ক্লাসে ঢুকবো তখনি দেখি কে যানো আমাকে লেং মেরে ফেলে দিছে তখন থাপ্পর দিতে যাবো তখনি দেখি এটা আর কেও না একটা মেয়ে দেখছি হাসছে আর মেয়ে টাও অপূরুপ সুন্দর মনে হলে এক মায়াবতী দূর এই সব চিন্তা করে লাভ নাই তো দেখি মেয়েটা বলতেছে- মেয়ে: এই ছেলে চোখে দেখিস না ? আমি অবাক হয়ে গেলাম কার প্রশ্ন কাকে বলার কথা সে আমাকে বলতেছে তখন আমি বল্লাম- আমি: আজব তো আপনি তো আমাকে লেং মেরে ফেলে দিছেন ? মেয়ে: এই তুই দেখছিস আমি তোকে ফেলে দিছি ? আমি: না আল্লাহ তো আমাকে কানা বানিয়ে দুনিয়া পাঠাইছে কিছু তো দেখি না | দেখি আমার কথা শুন হাসতেছে পরে বল্লো----> মেয়ে: এই তোর সাহস তো কম না বড়দের সাথে এইভাবে কথা বলস ? আমি: বড় মানে আর আপনি এইভাবে তুই তোকারি ভাবে কথা বলতেছেন কেনো? মেয়ে: কি তোর কত্ত বড় সাহস আমার সাথে এরকম ভাবে কথা বলিস তুই আমাকে চিনিস আমি কে ? আমি: কেনো আপনি কি প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে নাকি যে ভালোভাবে কথা...

গল্প::অবশেষে ম্যামের প্রেমে পড়লাম

   Bangla Love story গল্প:: অবশেষে ম্যামের প্রেমে পড়লা আমি রনি অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ি। আমাদের কলেজের সব স্যারেরা আমাকে ভালো ভাবেই চেনেন। কারনটা হলো আমি কলেজের টপার।লেখাপড়ায় যেমন ভালো খেলাধুলায় ও তেমন ভালো।তাছাড়া কলেজের যে কোন অনুষ্ঠানেও আমাকে উপস্থাপনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়।এমনকি আন্ত কেলেজ ক্রিকেট ও ক্যরাটি টুনামেন্টেও আমার জন্যে আমাদের কলেজ চাম্পিয়ন হয়েছে এবার।সব স্যারেরা আমাকে নিয়ে গর্ব করে। আর সারা কলেজের মেয়েরাতো আমার সাথে কথা বলার জন্য পাগল।তবে আমি কারও সাথে মানে মেয়েদের সাথে কথা বলি না। আমি সব বিষয়ে পারদর্শী হলেও একটা বিষয়ে অনেক পিছিয়ে আছি আর তা হলো মেয়েদের কে খুব ভয় পায়। কলেজে কোন মেয়ের সাথে কথা বলিনা যদিও মেয়েরা আমার সাথে কথা বলার জন্য আমার পিছনে পিপড়ার মতো লাইন দিয়ে থাকে সবসময়। ।।আমাদের কলেজের প্রিন্সিপালের মেয়ে নাম মোহনা,আজ আমাদের কলেজেই ইংরেজির টিচার হিসেবে জয়েন করবে।তাকে আজ বরণ করা হবে। সেই জন্য আমাদের কলেজ ক্যাম্পাসে আজ একটা মিলন মেলা বসেছে মানে কলেজের সকল ছাত্র-ছাত্রী এবং সার, আমরা সবাই ক্যাম্পাসে অধীর আগ্রহে বসে আছি কখন নতুন ম্যামকে বরন ...