গোপনে বিয়ে (২য় পর্ব)
কেউ একজন এগিয়ে এলো হঠাৎ। অন্ধকারে তাকে চেনা গেলো না।যে এগিয়ে এলো সে একাই কী করে যেন আট দশটা ছেলেকে ঘায়েল করে ফেললো। আমার মনে হলো এ নিশ্চিত বীর পুরুষ হবে! মনে মনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে চোখ খুললাম। ওই ছুকড়াগুলো ততক্ষণে দৌড়ে পালিয়েছে খ্যাঁক শেয়ালের মতো।আর যিনি আমায় বাঁচাতে এসেছেন তিনি তার টর্চ ধরলেন এদিকে। এবং আমার মুখ দেখে চমকে উঠে বললেন,'নাতাশা!'
তার কন্ঠে আমার নাম শুনে হতবাক হয়ে তাকাতেই দেখলাম ডাক্তার ইমতিয়াজ।বড় অবাক করা কান্ড। আমি যে ডাক্তারের কাছে আজ এসেছিলাম ইনিই তিনি। তিনি আমার নাম পর্যন্ত মনে রেখেছেন।
আমি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলাম ইমতিয়াজ এর দিকে। ডাক্তার ইমতিয়াজ তখন অন্য দিকে তাকিয়ে তার নিজের গা থেকে শার্টটা খুলে আমার হাতে ছুঁড়ে দিয়ে বললেন,'এটা পরে নিন আগে।'
আমি আমার পরনের জামার দিকে তাকিয়ে দেখি ওই শয়তান গুলো আমার জামাটা ছিঁড়ে ফালা ফালা করে ফেলেছে। কিঞ্চিত লজ্জা আর দু্ঃখে তীব্র এক দীর্ঘশ্বাস গিলে ফেলে ডাক্তার ইমতিয়াজের শার্টটা পরে নিলাম। তারপর ডাক্তার ইমতিয়াজ আমায় নিয়ে হেঁটে হেঁটে গেলেন একটা নির্জন বট বৃক্ষের নীচে। সেই বটবৃক্ষের গুঁড়ি ইট পাথর দিয়ে বাঁধানো।
ওখানে অন্ধকার নেই। রঙিন চোখ ধাঁধানো আলো। সেই আলোর কাছে এসে উড়ছে নানান জাতের পোকা মাকড়। ডাক্তার ইমতিয়াজ আমায় বললেন,'বসুন।আপনার ভাগ্য ভালো যে আমি আজ সাথে করে গাড়ি আনিনি।আরো ভাগ্য ভালো যে মনের শখে হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরছিলাম। নয়তো কে শুনতো আপনার এই করুন আর্তনাদ!'
আমি বসলাম।আর কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,'আপনাকে ধন্যবাদ দেয়ার ভাষা আমার জানা নাই!'
ডাক্তার ইমতিয়াজ মৃদু হাসলেন। হেসে
তিনি এবার বললেন,'আপনি এখানে কীভাবে এলেন?'
আমি চুপ করে আছি।কী বলবো আর কীভাবে বলবো বুঝতে পারছি না। তবে ডাক্তার ইমতিয়াজের প্রতি কৃতজ্ঞতায় আমার মন পরিপূর্ণ। কিন্তু এখন আমি ভাবছি অন্য কিছু। কোথায় যাবো এখন আমি? আচ্ছা এতোক্ষণে তো নিতুলের সবকিছু জেনে যাওয়ার কথা।সে যদি জানে মা আমায় ফেলে চলে গেছেন তবে তো সঙ্গে সঙ্গে তার দৌড়ে আসার কথা।সে আসছে না কেন তবে?
ডাক্তার ইমতিয়াজ আমার কাছ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে আবার বললেন,'আপনার শাশুড়ি মা কোথায়?ইনি আপনাকে এখানে একা রেখে চলে গেলেন কীভাবে?'
'না মানে না----।'
ডাক্তার ইমতিয়াজ আমায় আস্বস্ত করে বললেন,'ভয় এবং সংকোচের কোন প্রয়োজন নেই। আমি আপনার ভাইয়ের মতো। আপনি সব খুলে বলতে পারেন আমায়!'
এবার আমার খানিক সাহস হলো।আর আমি তার কাছে সবকিছু খুলে বললাম। শুনে ডাক্তার ইমতিয়াজ মুখ ভার করে রাখলেন খানিক সময়। তারপর চট করে বললেন,'নিতুলের নম্বরটা দিন আমায়!'
নিতুলের নম্বর আমার মুখস্থ। আমি ডাক্তার ইমতিয়াজের কাছে ওর নম্বরটা বললাম। ইমতিয়াজ নিজের ব্যাগ থেকে ফোন বের করে নিতুলকে ফোন দিলেন। আর বললেন আমার বিপদের কথা। কিন্তু নিতুল বললো ,'ভাইয়া,আমি নিজেও খুব বিপদে আছি।মার কথার উপর কোন কথা বলার কিংবা কিছু করার আমার সাহস নাই। নাতাশাকে বলুন সে আপাতত কদিন কোথাও সেটেল্ড হোক। তারপর আমি দেখছি কী করা যায়!'
কী অদ্ভুত ধরনের কথা!আর নিতুল এমন করে বলতে পারলো কীভাবে?
ডাক্তার ইমতিয়াজ আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন,'আপনি হলেন জগতের শ্রেষ্ঠ বোকাদের একজন। এমন কাপুরুষকে কেউ দু দু বার বিয়ে করে?'
আমি নীচ দিকে তাকিয়ে আছি।আর আমার চোখ থেকে টপটপ করে জলের ফোটা গড়িয়ে পড়ছে গালের উপর।ভাবছি আমি নিতুলের কথা।ওর জন্য কী না করেছি আমি।আর আজ যখন ওর জন্যই আমার ঘোর বিপদ তখন সে আমায় বিপদে ফেলে রেখে বলছে কোথাও সেটেল্ড হয়ে নিতে।মানে রাস্তায় রাস্তায় কদিন আমি ঘুরবো আর সে থাকবে তার মায়ের আদরে,ওমে!
ডাক্তার ইমতিয়াজ বললেন,'আসুন, আপনাকে আমি আপনার বাবা মার কাছে পৌঁছে দেই। আমি মনে করি শশুর বাড়ি না গিয়ে আপনার বাবার বাড়িতেই যাওয়া উচিৎ!'
আমি প্রায় কাঁদো কাঁদো গলায় ডাক্তার ইমতিয়াজকে অনুনয় করে বললাম,'বাবার কাছে গেলে উনারা আমায় আস্ত রাখবেন না। যেহেতু ভুল করে ফেলেছি সেহেতু এই ভুল আমাকেই শোধরাতে হবে!আপাতত আমি কোথাও যেতে পারবো না!'
ডাক্তার ইমতিয়াজ বললেন,'গাছ তলায় বসে থাকলে আরেকটা নতুন ভুল করবেন। আগের কুকুরগুলোর চেয়েও হিংস্র কুকুর এই শহরে আছে।ওরা ঘুরছে খাবারের আশায়। আপনাকে একা পেলেই---'
শুনে আমার শরীর কেঁপে উঠলো। আমি আবার দুঃখী মানুষের মতো ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম ডাক্তার ইমতিয়াজের দিকে।
ডাক্তার ইমতিয়াজের আমার দুঃখী চোখ দেখে বড়ো মায়া হলো।তাই তিনি বললেন,'আসুন। আমার সাথে আসুন।'
আমি কিছুই জিজ্ঞেস করলাম না কোথায় যাবো আমরা।
ডাক্তার ইমতিয়াজ আমায় নিয়ে হাঁটতে লাগলেন রাস্তার ডান পাশ ধরে। আমাদের উপর সোডিয়াম লাইটের মৃদু আলো। সেই আলোর পথ হাঁটতে হাঁটতে আমার মন কেমন খারাপ হয়ে গেল।মনে হলো এই পৃথিবীতে ভালোবাসা বলতে কিছুই নেই।সব ধোঁকা।সব কাল্পনিক!
ডাক্তার ইমতিয়াজ আমায় নিয়ে এলেন তার বাসায়। একেবারে নীরব নির্জন একটা বাড়ি।পুরোটা বাড়িই শূন্য।আর একটি প্রাণীকেও দেখা গেল না সারা বাড়িতে। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,'আপনি কী এখানে একাই থাকেন?'
ডাক্তার ইমতিয়াজ----
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন