সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গল্প:- পাত্র বদল-- ৭ম এবং শেষ পর্ব

 
গল্প:- পাত্র  বদল 

৭ম এবং শেষ পর্ব





মিতুর বাবা এসেছেন। বাড়ির সবাই ভয়ে তটস্থ।না জানি কখন তিনি বুঝে ফেলেন সবকিছু!
মিতুর বাবা মজিবর সাহেব ঘরে আসার পর পরই সোয়েল গিয়ে তার পা ছুঁয়ে সালাম করলো। তারপর জিজ্ঞেস করলো,'বাবা, কেমন আছেন আপনি?
মজিবর সাহেব তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,'তুমি কেমন আছো বাবা?
সোয়েল ঠোঁটে মৃদু হাসি আনলো ঠিকই কিন্তু তার মনে প্রচন্ড ভয়।না জানি কখন সবকিছু বুঝে ফেলেন মজিবর সাহেব!


মিতু রান্না ঘরে তরকারি খুঁটছিলো। মজিবর সাহেব ডাকলেন,'মিতু, মা কইরে তুই?
মিতুর সেই ডাক শুনে চোখে জল এসে গেল। কতদিন পর তার বাবার গলা শুনেছে সে!
তরকারি খোঁটা ফেলে রেখেই ও ঘর থেকে দৌড়ে এসে সে তার বাবার বুকে ঝোপ করে পড়লো। তারপর সে তার হাত দুটো মুঠো করে বাবার বুকে টানা ছোট্ট ছোট্ট কিল বসিয়ে দিতে দিতে বললো,'বাবা, তুমি আমায় একেবারেই ভুলে গেছো! তুমি পাষাণ হয়ে গেছো!


মজিবর সাহেব মেয়েকে শক্ত করে বুকের উপর ধরে বললেন,'তোকে ভুলিনি মা।এ কদিন তোর জন্য বুকটা খা খা করেছে শুধু। তুই তো আমার একটা মাত্র মেয়ে! তোকে নিয়ে যে আমার কতো ভাবনা!কতো টেনশন!
মিতু বললো,'তোমাকে কতোবার বলেছি আমায় নিয়ে অত টেনশন করবা না!আমি কী এখনও ছোট?


মজিবর সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলেন,'তোর শাশুড়ি কেমন রে মা? আদর যত্ন করে তো?
ইয়াসমিন বেগম এসে শুনে ফেললেন সেই কথা। তিনি কথা টেনে নিয়ে বললেন,'কী গো বউমা , তোমার বাপ কী বলে? আমি আদর করি না তাই না?
মিতু বললো,'না মা। আপনি আমায় নিজের মেয়ের চেয়ে বেশি আদর করেন!
মজিবর সাহেব হাসলেন। হেসে বললেন,'তো বেয়াইন সাহেব কেমন আছেন আপনি?


ইয়াসমিন বেগম ভেতরে ভয় নিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন,'অসুখ বিসুক লেগে থাকে সব সময়। কিন্তু আপনার মেয়ে আসার পর থেকে একেবারেই সুস্থ হয়ে গেছি। এমন লক্ষ্মী মেয়ে হয় না গো বেয়াই!
মজিবর সাহেব হাসেন।
মিতু আবার রান্না ঘরে চলে যায়।পেছন পেছন ইয়াসমিন বেগমও।



মজিবর সাহেবের জন্য বিথি শরবত নিয়ে এসেছে। মজিবর সাহেব হাতে শরবতের গ্লাস নিয়ে বিথিকে জিজ্ঞেস করলেন,'কেমন আছো মা?
বিথি বললো,'ভালো আছি আঙ্কেল। আপনি কেমন আছেন?
'ভালো আছি।মা তুমি আমার সাথে একটু আসো। তোমাদের নদীটা একটু হেঁটে হেঁটে দেখবো।
বিথি বললো,'জ্বি আচ্ছা।


বিথি আর মজিবর সাহেব নদীর তীরে হাঁটতে লাগলো। ওদের মধ্যে কথা হচ্ছে। হেসে হেসে প্রশ্ন করছেন মজিবর সাহেব। ছোট্ট বিথি অতসব না বোঝে না ভেবেই খুব সহজ ভাবে উত্তর দিয়ে যাচ্ছে মজিবর সাহেবের প্রশ্নের!


মজিবর সাহেব খেতে বসেছেন।তার জন্য ভালো ভালো খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। তিনি সেইসব খাবারে রুচি পাচ্ছেন না।তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে মিতু। তিনি মিতুকে বললেন,'মারে, আমার মনে হয় তোর মন অনেক খারাপ!
মিতু লুকোতে চেয়েছিল তার মন খারাপের বিষয়টা। কিন্তু পারলো না। বাবার মুখে কথাটা শুনেই মুখে আঁচল চেপে কেঁদে উঠলো সে।
মজিবর সাহেব বললেন,'মারে,কাঁদিস না। আমার পাশে বস এসে।


মিতু এসে তার বাবার পাশে বসলো।
মজিবর সাহেব এবার মেয়ের জলভরা চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন,'কী হয়েছে বল তো আমার কাছে সবকিছু খুলে!
মিতু কান্নাভেজা গলায় বললো,'না বাবা কিছুই হয়নি। এমনিতেই আমার মন খারাপ। কতদিন তোমাদের দেখি না!মার জন্য,ছোটর জন্য মন খারাপ!
'আর কিছুর জন্য নয়?
'না বাবা।


মজিবর সাহেব মৃদু হাসলেন। হেসে বললেন,'বাবার সাথে কেউ মিথ্যে বলে মা?
মিতু তবুও লুকোতে চাইলো।সে বললো,'বাবা, আমি কোন মিথ্যে বলিনি!
'তাহলে তোর জামাই কোথায়?
'আছে তো ঘরে।এই বিথি,বিথি, তোমার ভাইয়াকে বল তো বাবা তাকে ডাকছেন!
বিথির কথায় সোয়েল দৌড়ে এলো।
মজিবর সাহেব বললেন,'সোয়েল, তোমার ভাইয়া কোথায়?
সোয়েল অবাক হলো! মিতু কী তার বাবার কাছে সবকিছু বলে দিয়েছে তবে?
মিতু দূর থেকে চোখে ইশারা করে বুঝালো ও যেন সত্যিটা না বলে।
সোয়েল বললো,'বাবা, ভাইয়া তো মামাদের বাড়ি বেড়াতে গেছে।
মজিবর সাহেব বললেন,'ওকে ফোন দাও আসার জন্য।


মিতু বললো,'উনার তো ওখানে কাজ আছে। আজ আসবেন না।আর আমরা তো সকাল সকাল চলেই যাবো বাবা।অন্য একবার দেখা হবে তার সাথে তোমার!
মজিবর সাহেব বললেন,'না আমি এবার দেখা করতে চাই। ফোন দেও ওকে।
ইয়াসমিন বেগমও এখানে এসেছেন।সবাই ভয়ে তটস্থ। মজিবর সাহেব তবে সবকিছু জেনে গেছেন।
মিতু একটা বোকামীও করে ফেললো।সে কাঁদো কাঁদো গলায় বলে বসলো,'বাবা,তুমি যা শুনেছো তা ভুল শুনেছো। জুয়েলের সাথে


কথাটা শেষ করতে পারলো না মিতু। মজিবর সাহেব তাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলেন। ইয়াসমিন বেগমকে এবার তিনি বললেন,'আপনি আপনার ছেলেকে খবর দিয়ে বাড়িতে আনুন বলছি।নয়তো আমি থানায় যাবো। পুলিশের কাছে যাবো!
ইয়াসমিন বেগমের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। তিনি সঙ্গে সঙ্গে তার বাবার বাড়ি ফোন করে জুয়েলকে বাড়িতে আনার ব্যবস্থা করলেন।


জুয়েল বাড়ি ফিরেছে।সবার ভেতর একটা চাপা আতঙ্ক কাজ করছে।তারা বুঝতে পারছে না আসলে কী ঘটতে যাচ্ছে!
মজিবর সাহেব মিতুকে ডাকলেন একান্ত নিরালায়। তারপর তাকে মাখামাখা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,'মারে, পৃথিবীর জীবন আর কদিনের! এই ছোট্ট একটা জীবনে অনেকেরই তো অনেক কিছু থাকে না। অনেক চাওয়ায় পূরণ হয় না!
কেউ ধন চায় কিন্তু তার ধন হয় না।কেউ ক্ষমতা চায় কিন্তু সে ক্ষমতা পায় না!কেউ সুন্দর বর চায় তার ভাগ্যে সেই বর জোটে না!


মিতু কেঁদে উঠলো। হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।
মজিবর সাহেব মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর বললেন,'মা, তুই কী জুয়েলকে মেনে নিতে পারবি না?
মিতুর মন তো জুয়েলের জন্য কবেই উতলা হয়ে উঠেছিল!কে বলেছে সবাই সবকিছু পায় না?মিতু তো মনে মনে এই কামনায় করছিলো যে তার বাবা যেন জুয়েলকে সহজ ভাবে মেনে নিতে পারেন!
মিতু কান্নাভেজা গলায় বললো,'বাবা আমি পারবো।


মজিবর সাহেব খুশিতে কেঁদে ফেললেন।আজ তিনি একটা পূণ্যের কাজ করতে পারছেন। মহান আল্লাহ তাকে এই উসিলায় ক্ষমাও করে দিতে পারেন!


বাড়িতে আবার কাজী ডাকা হয়েছে।ডাকা হয়েছে মসজিদের ইমামকেও। আগের বিয়েটা আসলে কোনও বিয়েই হয়নি।ওটা ছিল পুতুল খেলা। এবার সত্যিকার বিয়ে পড়ানো হবে। আনন্দে ইয়াসমিন বেগম কেঁদে ফেলেছেন। তিনি তার বেয়াই মজিবর সাহেবকে বললেন, আপনার মত মানুষ হয় না ভাই!
মজিবর সাহেব বললেন,'আমার চেয়ে আরেকজন ভালো মানুষ আছে।সে হলো আপনার লক্ষ্মী মেয়ে বিথি।তার জন্যই আমার সবকিছু সহজ ভাবে জানা হয়েছে।
ইয়াসমিন বেগম বিথিকে কাছে টেনে নিয়ে তার কপালে চুমু খেলেন।


খুব সুন্দর ভাবে বিয়ে পড়ানো হলো।কাজী সাহেবের কথায় এবার মিতু বললো,'কবুল।
আর জুয়েল একটা কাগজে লিখে দিলো,'কবুল।


বাসর রাত। এই বাসর রাত অন্য সব বর কনের বাসরের চেয়ে আলাদা।অন্য সব বর কনেরা এই রাতে ফিসফিস করে একজনের কানের কাছে অন্যজনের মুখ এনে কথা বলে। কিন্তু ওরা কথা বলছে কোন আওয়াজ বিহীন। খাতায় -কলমে।


মিতু লিখে দিচ্ছে,'জানেন,আমি না আপনার প্রেমে পড়ে গেছি!
জুয়েল তার প্রতি উত্তরে লিখলো,'কী ভীষণ বোকা আপনি! আপনার মতো সুন্দরী মেয়েদের কী বোবা ছেলেদের প্রেমে পড়তে আছে?
মিতু সঙ্গে সঙ্গে ওকে জড়িয়ে ধরে ফেললো। তারপর খাতায় লিখলো,'আপনি তো জানেন না যে আপনার চোখে আমি কতশত ভাষা দেখেছি। আমার ভাগ্য ভালো যে ওখান থেকে শুধুমাত্র আমি ভালোবাসাটাই তুলে নিতে পেরেছি।
জুয়েল লিখাটা পড়লো। পড়ে হেসে ফেললো।
       
               সমাপ্ত
        
 
        
              

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

গল্প: ১০ দিনের বউ

গল্প: ১০ দিনের বউ সকালে দরজায় পত্রিকাওয়ালার ডাক শুনে ঘুম ভাঙলো.... ঘুম ঘুম চোখে ঘড়ির দিকে তাকালাম.... ৯:২৫ বাজে... OMG........সাড়ে ন'টা বেজে গেছে... তাড়াতাড়ি শরীরের উপর থেকে কাঁথাটা একপাশে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বাথরুমের দিকে দৌড় দিলাম.... যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দাঁতে ব্রাশ ঘষাতে লাগলাম... চোখে মুখে জল দিলাম... অতঃপর ফ্রেস টেস হয়ে রুমে এলাম... একদিকে শার্ট প্যান্ট পড়ে রেডি হচ্ছি.. একইসাথে অন্যদিকে মুখে পাউরুটি ঢুকাচ্ছি... ভালো করে খাওয়ারও সময় নেই.. উফফ অনেক দেরি হয়ে গেছে... শেষে তাড়াতাড়ি মুখের পাউরুটিটা গিলে টাই টা হাতে নিয়েই তাড়াতাড়ি দরজা লক করে বেরিয়ে পড়লাম.. দ্রুত হাটা ধরলাম... ইসস বাইকটা Repair করাতে দিয়েছি.. নাহলে বাইক দিয়েই যাওয়া যেত.. যাই হোক এখন এসব না ভেবে তাড়াতাড়ি বড় রাস্তায় গিয়ে একটা রিকশায় উঠলাম.... রিক্সায় বসে বসে টাই টা বেধে নিলাম.... আজকে অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে... ব্যাচেলর মানুষ.. ঢাকায় একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করি.. একটা মেসে একাই থাকি.. সকাল সকাল যে কেউ ঘুম থেকে ডেকে তুলবে সেরকম কেউও তো নেই... যাই হোক, এখন এসব ভাবলে চলবে না.. আমাদের অফিসের বস এমন...

{গল্প: হেড মাষ্টারের দুষ্টু মেয়ে }

  গল্প: হেড মাষ্টারের দুষ্টু মেয়ে জে এস সি পাশ করে আজ নতুন একটা স্কুলে ভর্তি হলাম অবশ্য আগে বাবা মার সাথে থাকতাম এখন ভাইয়ার কাছে আসলাম কারন স্কুল টা কাছে তাই | তো আজ প্রথম স্কুলে গেলাম ক্লাসে ঢুকবো তখনি দেখি কে যানো আমাকে লেং মেরে ফেলে দিছে তখন থাপ্পর দিতে যাবো তখনি দেখি এটা আর কেও না একটা মেয়ে দেখছি হাসছে আর মেয়ে টাও অপূরুপ সুন্দর মনে হলে এক মায়াবতী দূর এই সব চিন্তা করে লাভ নাই তো দেখি মেয়েটা বলতেছে- মেয়ে: এই ছেলে চোখে দেখিস না ? আমি অবাক হয়ে গেলাম কার প্রশ্ন কাকে বলার কথা সে আমাকে বলতেছে তখন আমি বল্লাম- আমি: আজব তো আপনি তো আমাকে লেং মেরে ফেলে দিছেন ? মেয়ে: এই তুই দেখছিস আমি তোকে ফেলে দিছি ? আমি: না আল্লাহ তো আমাকে কানা বানিয়ে দুনিয়া পাঠাইছে কিছু তো দেখি না | দেখি আমার কথা শুন হাসতেছে পরে বল্লো----> মেয়ে: এই তোর সাহস তো কম না বড়দের সাথে এইভাবে কথা বলস ? আমি: বড় মানে আর আপনি এইভাবে তুই তোকারি ভাবে কথা বলতেছেন কেনো? মেয়ে: কি তোর কত্ত বড় সাহস আমার সাথে এরকম ভাবে কথা বলিস তুই আমাকে চিনিস আমি কে ? আমি: কেনো আপনি কি প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে নাকি যে ভালোভাবে কথা...

গল্প::অবশেষে ম্যামের প্রেমে পড়লাম

   Bangla Love story গল্প:: অবশেষে ম্যামের প্রেমে পড়লা আমি রনি অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ি। আমাদের কলেজের সব স্যারেরা আমাকে ভালো ভাবেই চেনেন। কারনটা হলো আমি কলেজের টপার।লেখাপড়ায় যেমন ভালো খেলাধুলায় ও তেমন ভালো।তাছাড়া কলেজের যে কোন অনুষ্ঠানেও আমাকে উপস্থাপনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়।এমনকি আন্ত কেলেজ ক্রিকেট ও ক্যরাটি টুনামেন্টেও আমার জন্যে আমাদের কলেজ চাম্পিয়ন হয়েছে এবার।সব স্যারেরা আমাকে নিয়ে গর্ব করে। আর সারা কলেজের মেয়েরাতো আমার সাথে কথা বলার জন্য পাগল।তবে আমি কারও সাথে মানে মেয়েদের সাথে কথা বলি না। আমি সব বিষয়ে পারদর্শী হলেও একটা বিষয়ে অনেক পিছিয়ে আছি আর তা হলো মেয়েদের কে খুব ভয় পায়। কলেজে কোন মেয়ের সাথে কথা বলিনা যদিও মেয়েরা আমার সাথে কথা বলার জন্য আমার পিছনে পিপড়ার মতো লাইন দিয়ে থাকে সবসময়। ।।আমাদের কলেজের প্রিন্সিপালের মেয়ে নাম মোহনা,আজ আমাদের কলেজেই ইংরেজির টিচার হিসেবে জয়েন করবে।তাকে আজ বরণ করা হবে। সেই জন্য আমাদের কলেজ ক্যাম্পাসে আজ একটা মিলন মেলা বসেছে মানে কলেজের সকল ছাত্র-ছাত্রী এবং সার, আমরা সবাই ক্যাম্পাসে অধীর আগ্রহে বসে আছি কখন নতুন ম্যামকে বরন ...