সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গল্প:- পাত্র বদল - ২য় পর্ব

 


  গল্প:- পাত্র বদল
  ২য় পর্ব


 

মিতু আরেকবার জুয়েলের মুখের দিকে তাকালো।অমন সরল সহজ মানুষের চোখে কী জল মানায়! পুরুষ মানুষেরাও কী কখনো এভাবে কাঁদে?
অন্য কারোর হয়তো এই দৃশ্য দেখে মায়া লাগতো জুয়েলের জন্য। কিন্তু মিতুর বাড়লো রাগ।রাগ বাড়ার কথাও। মিতুর তো কোন খুঁত নাই ‌।দেখতে যেমন সে সুন্দর পড়াশোনাও তার ভালো। বাবার অর্থ সম্পত্বিও আছে ঢের। তার কী আর বড় ঘরের বিয়ের অভাব হতো! এমন একটা বোবা ছেলে কী তার যোগ্য হলো!



মিতু একটানে জুয়েলের কাছ থেকে খাতা কলম টেনে নিয়ে আবার লিখলো,'শুনুন, আপনার সাথে আমার বিয়ে হয়নি।বর সেজে তো আপনি যাননি!
জুয়েল লিখাটা পড়লো। তারপর সে লিখলো,'ও শুধু বর সেজেই গিয়েছিল। কিন্তু কাগজ পত্রে নাম আমারই।ওর নাম সোয়েল।সোয়েল নাম রেজিস্ট্রার খাতায় নাই! কিন্তু এই বিয়েটা আপনার সাথে যেহেতু প্রতারণামূলক হয়েছে সুতরাং আপনি আমায় ডিভোর্স দিতে পারেন।


মিতুর লিখাটা পড়ে মেজাজ গরম হয়ে উঠলো।
 সে খাতা টেনে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে লিখলো,'আপনি তো একটা বোবা, আপনার সাথে আমার ডিভোর্স হয়ে গেলে আপনার কিছুই যায় আসে না। কিন্তু আমার কী হবে ভেবেছেন? আপনার লজ্জা শরম নাই। কিন্তু আমার আছে। আমি মানুষকে মুখ দেখাবো কী করে!
 
 
জুয়েল আবার কাঁদছে।হোক সে বোবা! কিন্তু মানুষ তো সে।কথা বলতে পারে না।শুনতে পায় না কারোর কথা। কিন্তু অনুধাবন তো করতে পারে সবকিছু। জুয়েল এই যে এতোটুকু বড় হয়েছে তার সবটুকুই দুঃখে দুঃখে! তাদের গ্রামে তো আর প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা স্কুল নেই।কলেজ নেই।তাই গ্রামে অন্য সব সুস্থ স্বাভাবিক ছেলেদের সাথে এক স্কুলেই পড়তে হয়েছে তার।


  স্কুল কলেজে পড়ার সময় কত ছেলে মেয়ে যে তাকে নিয়ে ঠাট্টা করেছে!এমনকি তার একটা বন্ধুও নেই পর্যন্ত।কেউ তার সাথে মিশতো না।বোবা বলে সবাই তাকে এড়িয়ে যেতো! আত্মীয় স্বজনেরাও তাকে ভালোবাসতো না। এই জন্যই সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কোনদিন সে বিয়ে করবে না।সে ঠিক জানতো কোন মেয়ে তাকে মেনে নিতে পারবে না জীবন সাথী হিসেবে!
 
 
মিতুর লিখা কথাগুলো তার বুকের ভেতর বিঁষকাটার মতো বিঁধে গেছে।সে বুঝতে পারছে বোবা বলে তাকে অপমান করছে মিতু।বোবাদেরও মনে কষ্ট আসে। জুয়েলেরও কষ্ট এলো।রাগও পেলো খুব।সে রাগে নিজের গায়ে জড়ানো পাঞ্জাবিটাই একটানে ছিঁড়ে ফেললো। তারপর মাথায় পরা টুপুর, গলায় ঝুলিয়ে রাখা মালা সবকিছু টেনে ছিঁড়ে ফেলে দিলো মেঝেতে।

 

 তারপর দু চোখ মুছে খাতাটা নিয়ে ওখানে লিখলো,'আমি চলে যাচ্ছি আপনাকে মুক্তি দিয়ে। আর প্রতারণার বিয়ে কখনো সত্য হতে পারে না।তাই ডিভোর্স দেয়ারও কোন প্রশ্ন আসে না এখানে।আর কথা দিয়ে যাচ্ছি আগামীকাল আপনার সাথে যেভাবেই হোক সোয়েলের বিয়ে দিবো আমি। আপনাদের মঙ্গল হোক।


কথাগুলো লিখে মিতুর হাতে খাতাটা ধরিয়ে দিয়ে জুয়েল চোখ মুছতে মুছতে জোরে শব্দ করে দরজাটা খুলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
মিতু তখনও লিখাটা পড়েনি।সে হতবাক হয়ে শুধু এতোক্ষণ দেখলো একটা বোবা মানুষের ভেতর থেকে প্রকাশ হওয়া কিছু অভিমান,কষ্ট এবং রাগ! এইসব কিছু দেখেও যে মিতুর মন শান্ত হয়েছে তা কিন্তু না।মুখে বলা সহজ যে একটা মানুষ সে কালো হোক, অসুন্দর হোক,মূর্খ হোক,হাত-পা না থাকুক,বোবা,অন্ধ যায় থাকুক তাকে বিয়ে করলে দোষ কী!সেও তো মানুষ। মানুষ তো সবাই সমান!


কিন্তু বাস্তবতা?এই বাস্তবতা যে খুব কঠিন। এই কঠিন বিপাকে পড়ে গেছে মিতু।সে তাই প্রচন্ড রেগে আছে।এই মুহূর্তে সহজ করে কিছুই ভাবতে পারছে না সে।


মিতু পাতাটা তার চোখের সামনে মেলে ধরলো। জুয়েলের চোখের জলে ভিজে আছে খাতায় লিখা অক্ষর গুলো। জুয়েল লিখেছে,'আমি চলে যাচ্ছি আপনাকে মুক্তি দিয়ে। আর প্রতারণার বিয়ে কখনো সত্য হতে পারে না।তাই ডিভোর্স দেয়ারও কোন প্রশ্ন আসে না এখানে।আর কথা দিয়ে যাচ্ছি আগামীকাল আপনার সাথে যেভাবেই হোক সোয়েলের বিয়ে দিবো আমি। আপনাদের মঙ্গল হোক।


মিতুর এই লিখাটা পড়ে কেমন যেন লাগছে। জুয়েলের জন্য কেমন সমীহ হচ্ছে তার। তবে এই সমীহটা আদৌও ভালোবাসা কি না মিতু জানে না। হয়তোবা এটা মায়া। অসহায় কোন মানুষের দীর্ঘশ্বাস দেখে যেমন একজন মানুষের মায়া হয় তেমন!



মিতুর মন না চাইলেও সে বিছানা থেকে নেমে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।তার কেন যেন মনে হয়েছিল জুয়েল এখান থেকে যাবে না।সে
 দরজার কাছে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবে মিতুর জন্য। হয়তো ভাববে মিতু এগিয়ে যাবে তার কাছে। তারপর বলবে,সরি! আপনার সাথে আমি খারাপ বিহেভ করেছি।যা হয়ে গেছে তা কাটকুট। আমি আপনাকে মেনে নিয়েছি। আসুন আমরা একসাথে এক ঘরে থাকি। সংসার সাজাই।


কিন্তু মিতুর ধারণা ভুল হলো। দরজা থেকে এদিক ওদিক উঁকি ঝুঁকি বেয়েও সে জুয়েলের দেখা পেলো না। জুয়েল একেবারেই অদৃশ্য!


এই জন্য তার মন কেমন হওয়ার কথা। কিন্তু তার মন খারাপ হলো না।উল্টো রাগ পেলো।সে শব্দ করেই বলে উঠলো,'বোবা হয়ে জন্ম নিয়েছে আবার এতো তেজ!






মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

গল্প: ১০ দিনের বউ

গল্প: ১০ দিনের বউ সকালে দরজায় পত্রিকাওয়ালার ডাক শুনে ঘুম ভাঙলো.... ঘুম ঘুম চোখে ঘড়ির দিকে তাকালাম.... ৯:২৫ বাজে... OMG........সাড়ে ন'টা বেজে গেছে... তাড়াতাড়ি শরীরের উপর থেকে কাঁথাটা একপাশে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বাথরুমের দিকে দৌড় দিলাম.... যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দাঁতে ব্রাশ ঘষাতে লাগলাম... চোখে মুখে জল দিলাম... অতঃপর ফ্রেস টেস হয়ে রুমে এলাম... একদিকে শার্ট প্যান্ট পড়ে রেডি হচ্ছি.. একইসাথে অন্যদিকে মুখে পাউরুটি ঢুকাচ্ছি... ভালো করে খাওয়ারও সময় নেই.. উফফ অনেক দেরি হয়ে গেছে... শেষে তাড়াতাড়ি মুখের পাউরুটিটা গিলে টাই টা হাতে নিয়েই তাড়াতাড়ি দরজা লক করে বেরিয়ে পড়লাম.. দ্রুত হাটা ধরলাম... ইসস বাইকটা Repair করাতে দিয়েছি.. নাহলে বাইক দিয়েই যাওয়া যেত.. যাই হোক এখন এসব না ভেবে তাড়াতাড়ি বড় রাস্তায় গিয়ে একটা রিকশায় উঠলাম.... রিক্সায় বসে বসে টাই টা বেধে নিলাম.... আজকে অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে... ব্যাচেলর মানুষ.. ঢাকায় একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করি.. একটা মেসে একাই থাকি.. সকাল সকাল যে কেউ ঘুম থেকে ডেকে তুলবে সেরকম কেউও তো নেই... যাই হোক, এখন এসব ভাবলে চলবে না.. আমাদের অফিসের বস এমন...

{গল্প: হেড মাষ্টারের দুষ্টু মেয়ে }

  গল্প: হেড মাষ্টারের দুষ্টু মেয়ে জে এস সি পাশ করে আজ নতুন একটা স্কুলে ভর্তি হলাম অবশ্য আগে বাবা মার সাথে থাকতাম এখন ভাইয়ার কাছে আসলাম কারন স্কুল টা কাছে তাই | তো আজ প্রথম স্কুলে গেলাম ক্লাসে ঢুকবো তখনি দেখি কে যানো আমাকে লেং মেরে ফেলে দিছে তখন থাপ্পর দিতে যাবো তখনি দেখি এটা আর কেও না একটা মেয়ে দেখছি হাসছে আর মেয়ে টাও অপূরুপ সুন্দর মনে হলে এক মায়াবতী দূর এই সব চিন্তা করে লাভ নাই তো দেখি মেয়েটা বলতেছে- মেয়ে: এই ছেলে চোখে দেখিস না ? আমি অবাক হয়ে গেলাম কার প্রশ্ন কাকে বলার কথা সে আমাকে বলতেছে তখন আমি বল্লাম- আমি: আজব তো আপনি তো আমাকে লেং মেরে ফেলে দিছেন ? মেয়ে: এই তুই দেখছিস আমি তোকে ফেলে দিছি ? আমি: না আল্লাহ তো আমাকে কানা বানিয়ে দুনিয়া পাঠাইছে কিছু তো দেখি না | দেখি আমার কথা শুন হাসতেছে পরে বল্লো----> মেয়ে: এই তোর সাহস তো কম না বড়দের সাথে এইভাবে কথা বলস ? আমি: বড় মানে আর আপনি এইভাবে তুই তোকারি ভাবে কথা বলতেছেন কেনো? মেয়ে: কি তোর কত্ত বড় সাহস আমার সাথে এরকম ভাবে কথা বলিস তুই আমাকে চিনিস আমি কে ? আমি: কেনো আপনি কি প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে নাকি যে ভালোভাবে কথা...

গল্প::অবশেষে ম্যামের প্রেমে পড়লাম

   Bangla Love story গল্প:: অবশেষে ম্যামের প্রেমে পড়লা আমি রনি অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ি। আমাদের কলেজের সব স্যারেরা আমাকে ভালো ভাবেই চেনেন। কারনটা হলো আমি কলেজের টপার।লেখাপড়ায় যেমন ভালো খেলাধুলায় ও তেমন ভালো।তাছাড়া কলেজের যে কোন অনুষ্ঠানেও আমাকে উপস্থাপনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়।এমনকি আন্ত কেলেজ ক্রিকেট ও ক্যরাটি টুনামেন্টেও আমার জন্যে আমাদের কলেজ চাম্পিয়ন হয়েছে এবার।সব স্যারেরা আমাকে নিয়ে গর্ব করে। আর সারা কলেজের মেয়েরাতো আমার সাথে কথা বলার জন্য পাগল।তবে আমি কারও সাথে মানে মেয়েদের সাথে কথা বলি না। আমি সব বিষয়ে পারদর্শী হলেও একটা বিষয়ে অনেক পিছিয়ে আছি আর তা হলো মেয়েদের কে খুব ভয় পায়। কলেজে কোন মেয়ের সাথে কথা বলিনা যদিও মেয়েরা আমার সাথে কথা বলার জন্য আমার পিছনে পিপড়ার মতো লাইন দিয়ে থাকে সবসময়। ।।আমাদের কলেজের প্রিন্সিপালের মেয়ে নাম মোহনা,আজ আমাদের কলেজেই ইংরেজির টিচার হিসেবে জয়েন করবে।তাকে আজ বরণ করা হবে। সেই জন্য আমাদের কলেজ ক্যাম্পাসে আজ একটা মিলন মেলা বসেছে মানে কলেজের সকল ছাত্র-ছাত্রী এবং সার, আমরা সবাই ক্যাম্পাসে অধীর আগ্রহে বসে আছি কখন নতুন ম্যামকে বরন ...