সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জীবনের ভালোবাসা পর্ব ৮


জীবনের ভালোবাসা
পর্ব ৮
আমি এই প্রথম দেখলাম ওকে মাথা নিচু করে ক্ষমা চায়তে।বিস্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো যেনো আমি স্বপ্ন দেখছি। চিমটি কাটলাম এটা প্রমাণ করতে যে স্বপ্ন না বাস্তব। পরে দেখলাম যা ঘটছে সব বাস্তব। ওকে পা ধরা অবস্হায় দেখে আমি থ মেরে দাড়িয়ে আছি।ভাবছি এটা কী হল,এখন আমি কী করবো।ভাবতেছিলাম।ওকে ক্ষমা করে কাছে টেনে নেবো নাকি আবারো দুরে ঠেলে দেবো।কোনো সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারছিলাম না।

ওর চেহেরা দেখে মনে হয়েছিলো ও নিস্পাপ, ওকে ক্ষমা করে কাছে টেনে নিলে কোনো ভুল হবে না। আবার অতীতে ঘটা কাজগুলোর কথা মনে পড়েতেই মনে হচ্ছিলো ও ক্ষমার অযোগ্য। আমি কনফিউশনে পড়ে গেছিলাম।এরমধ্যে এক চাচা এসে আমাকে বোঝালো।উনার কথায় আমি প্রায় সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলছিলাম যে আমি আবার রাজের সাথে যাবো যা হবার হবে।

কিন্তু আব্বুর কথা মনে পড়েতেই, আমি আর ওর সাথে গেলাম না।আমার আব্বু সবসময় বলতো তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ না।কারণ হঠাৎ সিদ্ধান্তকারিতা বোকামির লক্ষণ।এটা ভেবে আমি ওকে বললাম ঠিক আছে আমি তোমায় ক্ষমা করে দিয়েছি।তুমি এবার চলে যাও।ও একা যেতে চাচ্ছিলো না।আমি কড়া গলায় ওকে বলেছিলাম,

- ক্ষমা করা মানে কিন্তু গ্রহণ করা নয়।আমি তোমাকে ক্ষমা করেছি ঠিকই কিন্তু তোমার সাথে যেতে পারবো না।
তুমি বরং আজ চলে যাও। আমি ভেবে দেখবো কি করা যায়?এই বলে বাড়িতে চলে আসলাম।বাড়িতে এসে খেয়েদেয়ে শান্তির একটা ঘুম দিলাম।

ঘুম থেকে উঠে দেখলাম ফোন বাজছে। রিসিভ করে দেখলাম রাজের ফোন।কথা বললাম। আমি আবার রাজ এর সাথে কথা বলা শুরু করলাম।কিছুদিন কথা বলার পর ওর সাথে ওর চাচাতো বোনের বাড়িতে বেড়াতে গেলাম।সেখানে ও কোরআন ছুয়ে শপথ করলো যে ও প্রায় ১মাস আগে সব ধরনের নেষা বাদ দিয়েছে এবং আগামি কোনোদিন নেশা করবে না।

সারাদিন ওর সাথে থেকে বিকেলে বাড়িতে চলে আসলাম।বাড়িতে আসার পর শুনলাম আব্বু নাকি বলেছে আমাকে দিয়েই ডিভোর্স করাবে। আমি রাজকে কল দিয়ে সব কথা বললাম।সব শুনে ও আমাকে ওদের বাড়িতে যেতে বললো।কিন্তু আমি ওকে সরাসরি বলে দিলাম এটা সম্ভব নয়।আমি আর তোমার সাথে যাবো না।তবে তুমি যদি আমার আব্বু আম্মু কে ম্যানেজ করে নিয়ে যেতে পারো।তাহলে যাবো,

ও আমাকে বললো দেখি কি করা যায়।পরের দিন রাত্রিবেলা সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ছিলো।তখন রাজ এসে আব্বুকে ডেকে তুলে সরাসরি আব্বুর পা জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিয়ে বললো,,

- আব্বা এবারের মতো আমাকে মাফ করে দিন।আমাকে আর একটি বার সুযোগ দিন।দয়া করে আমাদের বিয়েটা ভাজ্ঞবেন না।আমি কথা দিচ্ছি আমি আর আগের মতো কিছু করবো না।

ওর কান্নাকাটি দেখে আব্বুর কঠিন মনটা নরম হয়ে গেলো।
-হ্যা আমি তোমাকে মাফ করে দিলাম।আর তোমাদের বিয়েটাও ভাজ্ঞবো না তবে একটা শর্ত আছে।
-হুম।আমি আপনার সব কথা মানবো।আপনি শুধু আমাদের বিয়ে ভেজ্ঞে দিয়েন না।

ঠিক আছে দেবো না।তবে ওকে তোমাদের বাড়িতেও আর পাঠাবো না।

-তাহলে কি করবেন?
তোমাকে এই বাড়িতে থাকতে হবে ১ বা দেড় বছর।তারপর যদি আমার মনে হয় তুমি ভালো হয়ে গেছো।তখন জুইকে তোমাদের বাড়িতে পাঠাবো।

- ঠিক আছে আপনি যেমনটি বলবেন।
তার দুইদিন পর রাজ আমাদের বাড়িতে চলে আসলো। তবে আমাদের বাড়িতে থাকতে চাইলো না।তাই আব্বু আর মেঝো ভাইয়া মিলে আমাদের একটা রুম ভাড়া নিয়ে দিলো।আমরা সেখানে থাকতে শুরু করলাম।বাসার আশে পাশে কোনো বাসা না থাকায় আমর রাতে সেখানে থাকতে ভয় পেতাম।এক মাসের রুম ভাড়া দিয়েছিলাম।কিন্তু পনেরো দিনও ওখানে থাকিনি ভয়ের জন্য।তারপর অনেক বাসা খুজলাম কিন্তু পেলাম না।বাধ্য হয়ে বাড়িতে যেতে হলো। এদিকে এতোকিছু হওয়ার পর ও রাজ আমার কাছে এসেছে বলে ওর বাড়ির সবাই অনেক কথা শোনাচ্ছে আমাদের।আমি নাকি রাজকে ঘর জামাই করে রাখার জন্য এতোকিছু করেছি।এমনকি ওরা এটাও বলেছিলো আমার বরের টাকায় আমার বাবা সংসার চালায়।

রাজকে বারবার বাড়িতে যেতে বলেও যখন কাজ হয়নি তখন ওরা রাজের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলো।ওর ভাইয়ের সাথে শেয়ার এ দোকান দিয়েছিলো।এগুলো হওয়ার পর ওর ভাইয়েরা অস্বিকার করে ফেলেছিলো । যাইহোক ও আমাদের বাড়িতে ১/দেড় মাস এর মতো থাকলো।সব ঠিকঠাক ছিলো।আমিও আবার স্কুলে জয়েন করলাম।

খুব ভালো কাটছিলো আমাদের দিনগুলো।রাজ পুরো চেন্জ হয়ে গেছিলো।এভাবে ৬ মাস গেলো।আমার বাড়িতে থাকতে ভালো লাগছিলো না।রাজকে বলে ঢাকায় যেতে চাইলাম।কিন্তু বাধা হয়ে দাড়ালো আমার আব্বু।

উনি কোনোমতেই আমাকে ঢাকা পাঠাতে রাজি না।কিন্তু তখন আসি রাজকে ছেড়ে আর রাজ আমাকে ছেড়ে থাকতে পারছে না।সেদিন ছিলো অক্টোবর মাসের ২১ তারিখ।২০১৫ সাল। আমি আর রাজ পালিয়ে ঢাকা গেলাম।রাজ এখন আমার চোখে হারায়।

পাল্টে গেছিলো জীবনের মোড়।খুব সুখে ছিলাম আমি।কিন্তু ও যা ইনকাম করতো তা রুমভাড়া, খাওয়া দাওয়া তেই শেষ হয়ে যেতো বাড়িতে বেশি টাকা পাঠাতে পারতাম না।এর ভেতর আবার ওর আব্বু অসুস্থ হয়ে গেলো।রাজ এর বাড়ি থেকে ফোন আসলো।আমরা দুজনে দেখতে গেলাম।আমার শ্বশুর আব্বা সবাইকে ডেকে নিয়ে ওর হাতে আমার হাত দিয়ে ওকে বললো ভালো করে সংসার করো।আর ভুল করেও কখনো ওই পথে যেয়ো না বাপ।এতে তোমারই ক্ষতি।রাজ ওর আব্বু কে কথা দিলো ও কখনো ঐ পথে যাবে না। সাথে বাড়ির সবাইকে বললো।

-দেখো যার সাথে ঝামেলা ছিলো।সেতো সব ভুলে দিব্যি তার বউকে নিয়ে সংসার করছে তাহলে তোমরা কেনো স্বাভাবিক হচ্ছো না জুই এবং রাজের সাথে।

দুইদিন ওখানে থাকলাম।কিন্তু কিছু স্বাভাবিক হলো না।আমার বড় জা আমাকে বললো ঢাকাই তো আছো তো চাকরি করলেই তো টাকাপয়সা হয়।উনার কথায় আমার মাথাটা ধরে গেলো।আমি ঢাকায় ফিরে গিয়ে জবের খোজে বেরোলাম।দুইতিন দিন পর একটা ফ্যাক্টরিততে জব ও পেলাম।এই ফ্যাক্টরি টা ছিলো হাটুভাজ্ঞাতে।ওটা ছিলো গেন্জির ফ্যাক্টরি। সেখানে কোয়ালিটি পদে কাজ করতাম।পাশাপাশি মেশিনের কাজ ও শিখে ফেললাম।ভালোই কাজ পারতাম।কিন্তু চাকরির বয়স ছয়মাস হয়নি বলে আমাকে অপারেটর এর কার্ড দিলো না।তাই ঐ ফ্যাক্টরি থেকে চাকরি বাদ দিয়ে অন্য একটা ফ্যাক্টরিতে জব নিলাম।১৫-১৬ দিন জব করার পর শুনলাম আমার শ্বশুর প্রচুর অসুস্থ।

আমি ডিউটি করছিলাম দুপর বেলা রাজ আমায় কল দিয়ে বললো আব্বু প্রচুর অসুস্থ। এখনি বাড়ি যেতে হবে তুমি ছুটি নিয়ে তাড়াতাড়ি চলে আসো।সুপারভাইজার কে বললাম।উনি ছুটি দিলো না।পরে লাইনসিপের কাছে গেলাম কিন্তু তাতেও কাজ হলো না।শেষে পি এম স্যারের কাছে গেলাম। ছুটি চাওয়াতে উনি বললো মরে নি তো।মরলে যেয়ো।চাকরি করবো না বলে গেটপাস নিয়ে চলে আসলাম।ও ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে ছিলো।আমি অফিসের কাছে থেকেই গাড়িতে উঠলাম।আমরা যতক্ষণে বাড়ি পৌছালাম ততক্ষণে আব্বু মারা গেছে।

প্রিয় পাঠক পাঠিকারা জুইতো এখন হ্যাপি আছে,আপনারা হ্যাপি তো?
নতুন কিছু ঘটতে যাচ্ছে আগামি পর্বে,আর আগামিকাল শেষ হবে গল্পটা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

গল্প: ১০ দিনের বউ

গল্প: ১০ দিনের বউ সকালে দরজায় পত্রিকাওয়ালার ডাক শুনে ঘুম ভাঙলো.... ঘুম ঘুম চোখে ঘড়ির দিকে তাকালাম.... ৯:২৫ বাজে... OMG........সাড়ে ন'টা বেজে গেছে... তাড়াতাড়ি শরীরের উপর থেকে কাঁথাটা একপাশে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বাথরুমের দিকে দৌড় দিলাম.... যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দাঁতে ব্রাশ ঘষাতে লাগলাম... চোখে মুখে জল দিলাম... অতঃপর ফ্রেস টেস হয়ে রুমে এলাম... একদিকে শার্ট প্যান্ট পড়ে রেডি হচ্ছি.. একইসাথে অন্যদিকে মুখে পাউরুটি ঢুকাচ্ছি... ভালো করে খাওয়ারও সময় নেই.. উফফ অনেক দেরি হয়ে গেছে... শেষে তাড়াতাড়ি মুখের পাউরুটিটা গিলে টাই টা হাতে নিয়েই তাড়াতাড়ি দরজা লক করে বেরিয়ে পড়লাম.. দ্রুত হাটা ধরলাম... ইসস বাইকটা Repair করাতে দিয়েছি.. নাহলে বাইক দিয়েই যাওয়া যেত.. যাই হোক এখন এসব না ভেবে তাড়াতাড়ি বড় রাস্তায় গিয়ে একটা রিকশায় উঠলাম.... রিক্সায় বসে বসে টাই টা বেধে নিলাম.... আজকে অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে... ব্যাচেলর মানুষ.. ঢাকায় একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করি.. একটা মেসে একাই থাকি.. সকাল সকাল যে কেউ ঘুম থেকে ডেকে তুলবে সেরকম কেউও তো নেই... যাই হোক, এখন এসব ভাবলে চলবে না.. আমাদের অফিসের বস এমন...

{গল্প: হেড মাষ্টারের দুষ্টু মেয়ে }

  গল্প: হেড মাষ্টারের দুষ্টু মেয়ে জে এস সি পাশ করে আজ নতুন একটা স্কুলে ভর্তি হলাম অবশ্য আগে বাবা মার সাথে থাকতাম এখন ভাইয়ার কাছে আসলাম কারন স্কুল টা কাছে তাই | তো আজ প্রথম স্কুলে গেলাম ক্লাসে ঢুকবো তখনি দেখি কে যানো আমাকে লেং মেরে ফেলে দিছে তখন থাপ্পর দিতে যাবো তখনি দেখি এটা আর কেও না একটা মেয়ে দেখছি হাসছে আর মেয়ে টাও অপূরুপ সুন্দর মনে হলে এক মায়াবতী দূর এই সব চিন্তা করে লাভ নাই তো দেখি মেয়েটা বলতেছে- মেয়ে: এই ছেলে চোখে দেখিস না ? আমি অবাক হয়ে গেলাম কার প্রশ্ন কাকে বলার কথা সে আমাকে বলতেছে তখন আমি বল্লাম- আমি: আজব তো আপনি তো আমাকে লেং মেরে ফেলে দিছেন ? মেয়ে: এই তুই দেখছিস আমি তোকে ফেলে দিছি ? আমি: না আল্লাহ তো আমাকে কানা বানিয়ে দুনিয়া পাঠাইছে কিছু তো দেখি না | দেখি আমার কথা শুন হাসতেছে পরে বল্লো----> মেয়ে: এই তোর সাহস তো কম না বড়দের সাথে এইভাবে কথা বলস ? আমি: বড় মানে আর আপনি এইভাবে তুই তোকারি ভাবে কথা বলতেছেন কেনো? মেয়ে: কি তোর কত্ত বড় সাহস আমার সাথে এরকম ভাবে কথা বলিস তুই আমাকে চিনিস আমি কে ? আমি: কেনো আপনি কি প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে নাকি যে ভালোভাবে কথা...

গল্প::অবশেষে ম্যামের প্রেমে পড়লাম

   Bangla Love story গল্প:: অবশেষে ম্যামের প্রেমে পড়লা আমি রনি অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ি। আমাদের কলেজের সব স্যারেরা আমাকে ভালো ভাবেই চেনেন। কারনটা হলো আমি কলেজের টপার।লেখাপড়ায় যেমন ভালো খেলাধুলায় ও তেমন ভালো।তাছাড়া কলেজের যে কোন অনুষ্ঠানেও আমাকে উপস্থাপনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়।এমনকি আন্ত কেলেজ ক্রিকেট ও ক্যরাটি টুনামেন্টেও আমার জন্যে আমাদের কলেজ চাম্পিয়ন হয়েছে এবার।সব স্যারেরা আমাকে নিয়ে গর্ব করে। আর সারা কলেজের মেয়েরাতো আমার সাথে কথা বলার জন্য পাগল।তবে আমি কারও সাথে মানে মেয়েদের সাথে কথা বলি না। আমি সব বিষয়ে পারদর্শী হলেও একটা বিষয়ে অনেক পিছিয়ে আছি আর তা হলো মেয়েদের কে খুব ভয় পায়। কলেজে কোন মেয়ের সাথে কথা বলিনা যদিও মেয়েরা আমার সাথে কথা বলার জন্য আমার পিছনে পিপড়ার মতো লাইন দিয়ে থাকে সবসময়। ।।আমাদের কলেজের প্রিন্সিপালের মেয়ে নাম মোহনা,আজ আমাদের কলেজেই ইংরেজির টিচার হিসেবে জয়েন করবে।তাকে আজ বরণ করা হবে। সেই জন্য আমাদের কলেজ ক্যাম্পাসে আজ একটা মিলন মেলা বসেছে মানে কলেজের সকল ছাত্র-ছাত্রী এবং সার, আমরা সবাই ক্যাম্পাসে অধীর আগ্রহে বসে আছি কখন নতুন ম্যামকে বরন ...