সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গোপনে বিয়ে ( ৯ পর্ব)

 


গোপনে বিয়ে

 ৯ম পর্ব

আমি কাঁদতে কাঁদতে পথ হাঁটছি।জানি না কোথায় যাবো! আমি তো আর ছেলে মানুষ না যে যেখানে ইচ্ছা সেখানে গিয়েই রাত পার করে দিতে পারবো!এই দেশে এখনও মেয়েরা নিরাপদ নয়।দিনের বেলাতেই রাস্তা ঘাটে গাড়িতে ছেলেদের থেকে কত রকম অশালীন কথা, অশালীন অঙ্গভঙ্গি কিংবা প্রস্তাব যে শুনতে হয়! তাছাড়া সেদিন রাতেও তো কত বড় ঘটনা ঘটে গেল আমার সাথে!

আচমকা ইমতিয়াজ ভাইয়াকে সামনে পেয়ে আমি চমকে উঠলাম। তিনি অস্থির হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,'নাতাশা, কাঁদছো তুমি!'

বলে তিনি আমার কাছে এসে আমার দু চোখ মুছে দিয়ে বললেন,'আমি আগেই জানতাম এমন কিছুই হবে। এই জন্যই এগিয়ে এসেছি। একবার ভেবেছিলাম নিতুলদের বাড়িতে যাবো। কিন্তু যাইনি এই ভেবে যে তখন ওরা আমায় ফাঁসিয়ে দিতে পারতো।'

আমি ইমতিয়াজ ভাইয়াকে জাপটে ধরে ছোট বাচ্চাদের মতো আবার কেঁদে উঠলাম। ইমতিয়াজ ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,'কেঁদোনা। তোমাকে শক্ত হতে হবে। প্রতিবাদ শিখতে হবে। এই দেশের মেয়েরা যেদিন প্রতিবাদ করতে শিখবে।সত‍্যটা প্রকাশ‍্যে বলে দিতে শিখবে। সেদিন আর মেয়েদের কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না।বুঝেছো?'

আমি কান্নামাখা গলায় বললাম,'হু।'

ইমতিয়াজ ভাইয়া এবার বললেন,'তাহলে চোখের জল মুছে ফেলো।'

আমি চোখের জল মুছে ফেললাম বা হাতের পিঠ দিয়ে।

তারপর তিনি বললেন,'আপাতত আমার বাসায় চলো। ওখানে থেকেই বাকী প্লান আর অ‍্যাকশনে আমরা যাবো। ওই শয়তান আর ওর মাকে উচিত শিক্ষা দিবো।'

আমি চুপ করে রইলাম।

ইমতিয়াজ ভাইয়া বললেন,'নাতাশা, তুমি কী এখনও নিতুলকে ভালো বাসো?'

নিতুলকে ভালোবাসি কথাটা শুনে আমার মাথা আগুন হয়ে গেলো। আমি রাগে ক্ষোভে জোর গলায় বললাম,'ভাইয়া, প্লিজ আমার সামনে এই কুকুরটার নাম আপনি উচ্চারণ করবেন না। আপনি জানেন ও আজ কী করেছে?'

'কী করেছে?'

'আমার পেটে থাকা ওর নিজের সন্তানকে অস্বীকার করেছে।'

ইমতিয়াজ ভাইয়া কথাটা শুনে খুব একটা অবাক হলেন না। তিনি মৃদু হেসে বললেন,' যে নিজের ভালোবাসাকেই অস্বীকার করে ফেলে। নিজের স্ত্রীকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারে।তার থেকে তুমি আর কী ভালো আশা করো?'

আমার আবার কান্না পেয়ে গেছে। আমি শব্দ করে কেঁদে উঠলাম।

ইমতিয়াজ ভাইয়া এবার আমায় বড়সড় একটা ধমক দিলেন।ধমক দিয়ে বললেন,'বললাম না কাঁদবা না।কার জন্য কাঁদছো? মানুষ মানুষের কাছ থেকে দুঃখ পেলে কাঁদে।মন খারাপ করে। কিন্তু অমানুষের কাছ থেকে দুঃখ পেলে কেউ কাঁদে না।'

আমি আবার চোখ মুছে ফেললাম।

তারপর হাঁটা ধরলাম আমরা। আমাদের গন্তব্য ইমতিয়াজ ভাইয়ার বাড়ি।

'

বাসায় ফিরে আমি অদ্ভুত এক কান্ড করলাম।

হাতের চুড়ি খুলে ফেলতে লাগলাম। ইমতিয়াজ ভাইয়া তা দেখে আমায় এমন ধমক দিলেন! বললেন,'চুড়ি খুলতেছো কেন?'

আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,'আমি এখন আর কারো বিয়ে করা বউ না ভাইয়া। আমার হাতে চুড়ি রাখার প্রয়োজন নাই।'

ইমতিয়াজ ভাইয়া বললেন,' কিন্তু তুমি একজন মা। মায়ের হাতে চুড়ি থাকায় কোন নিষেধ নাই।'

আমি মনে মনে ভাবলাম ইমতিয়াজ ভাইয়া তো ভুল বলেননি। আচ্ছা ইমতিয়াজ ভাইয়ার মতো এতো ভালো মানুষ অন‍্য পুরুষ গুলো হয় না কেন?

'

সকাল বেলা অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটলো।নিতুল এসে বসে আছে বাসায়।বাসায় আমি একা। ইমতিয়াজ ভাইয়া বাজার করতে গিয়েছেন।

নিতুল এসে কাচুমাচু করে বললো,'নাতাশা,আমি সরি! অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি আমি। আমি মাফ চাইছি তোমার কাছে।আমায় মাফ করে দেও প্লিজ!'

আমি কথা বললাম না।ওর সাথে কথা বলতে আমার ইচ্ছে হচ্ছে না। বরং আমার ইচ্ছে হচ্ছে নিতুল যেন আমার সামনে থেকে এক্ষুনি বিদেয় হয়।

নিতুল আমায় চুপ করে থাকতে দেখে আমার দু হাত এসে ধরে ফেললো।ও আমার হাত ধরতেই ওর থেকে একটানে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,'তোকে এতো বড় সাহস কে দিয়েছে রে কুকুর আমার হাত ধরার?'

সে তবুও কাচুমাচু করে বলতে লাগলো,'প্লিজ রাগ রেখো না। মাকে আমি সব বুঝিয়ে বলেছি।মা-ই আমাকে পাঠিয়েছে তোমায় নিয়ে যেতে।আর তুমি তো আমায় অনেক ভালোবাসো।তুমিই তো বলেছিলে আমার জন্য তুমি সব করতে পারো!'

আমার ভীষণ রাগ পাচ্ছে এখন। ইচ্ছে করছে ওকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে এক্ষুনি বাসা থেকে বের করে দিতে।

তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,'হাত ছাড়ো বলছি।হাত ছেড়ে দাও আমার!'

'তুমি যতোক্ষণ আমায় ক্ষমা না করো ততোক্ষণ আমি তোমার হাত ছাড়বো না।'

আমি ওকে সাবধান করে দিয়ে বললাম,'ভাগ‍্য ভালো তো এক্ষুনি এখান থেকে চলে যাও। ইমতিয়াজ ভাইয়া যদি এসে তোমায় এখানে দেখে তখন কিন্তু সর্বনাশ হয়ে যাবে।এখান থেকে আস্ত তুমি যেতে পারবেনা!'

নিতুল হঠাৎ চটে গেলো।সে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠে আমার হাতে এক ঝাঁকি দিয়ে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,'এই ডাক্তারটাই সব খেলার মূল। তুমি এর জন্য আমার সাথে এমন করছো।মানে তোমার কাছে আমার চেয়ে ওই ডাক্তারটা বেশি?'

'হুম বেশী। কারণ তুমি আমার কিছু হওনা। কিন্তু ওই ডাক্তারটা আমার ভাই।'

'ভাই না নাগর এটা আমি খুঁজে বের করবো।আর শালাকে আমি উচিৎ শিক্ষা দিয়ে ছাড়বো!'

এই কথা বলে নিতুল বাসা থেকে বেরিয়ে চলে যাচ্ছিল। আমি পেছন থেকে তখন তাকে বলে দিলাম,'দেখা যাবে কে কাকে শিক্ষা দেয়!'


*********************************


https://banglalovestory247.blogspot.com/





মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

গল্প: ১০ দিনের বউ

গল্প: ১০ দিনের বউ সকালে দরজায় পত্রিকাওয়ালার ডাক শুনে ঘুম ভাঙলো.... ঘুম ঘুম চোখে ঘড়ির দিকে তাকালাম.... ৯:২৫ বাজে... OMG........সাড়ে ন'টা বেজে গেছে... তাড়াতাড়ি শরীরের উপর থেকে কাঁথাটা একপাশে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বাথরুমের দিকে দৌড় দিলাম.... যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দাঁতে ব্রাশ ঘষাতে লাগলাম... চোখে মুখে জল দিলাম... অতঃপর ফ্রেস টেস হয়ে রুমে এলাম... একদিকে শার্ট প্যান্ট পড়ে রেডি হচ্ছি.. একইসাথে অন্যদিকে মুখে পাউরুটি ঢুকাচ্ছি... ভালো করে খাওয়ারও সময় নেই.. উফফ অনেক দেরি হয়ে গেছে... শেষে তাড়াতাড়ি মুখের পাউরুটিটা গিলে টাই টা হাতে নিয়েই তাড়াতাড়ি দরজা লক করে বেরিয়ে পড়লাম.. দ্রুত হাটা ধরলাম... ইসস বাইকটা Repair করাতে দিয়েছি.. নাহলে বাইক দিয়েই যাওয়া যেত.. যাই হোক এখন এসব না ভেবে তাড়াতাড়ি বড় রাস্তায় গিয়ে একটা রিকশায় উঠলাম.... রিক্সায় বসে বসে টাই টা বেধে নিলাম.... আজকে অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে... ব্যাচেলর মানুষ.. ঢাকায় একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করি.. একটা মেসে একাই থাকি.. সকাল সকাল যে কেউ ঘুম থেকে ডেকে তুলবে সেরকম কেউও তো নেই... যাই হোক, এখন এসব ভাবলে চলবে না.. আমাদের অফিসের বস এমন...

{গল্প: হেড মাষ্টারের দুষ্টু মেয়ে }

  গল্প: হেড মাষ্টারের দুষ্টু মেয়ে জে এস সি পাশ করে আজ নতুন একটা স্কুলে ভর্তি হলাম অবশ্য আগে বাবা মার সাথে থাকতাম এখন ভাইয়ার কাছে আসলাম কারন স্কুল টা কাছে তাই | তো আজ প্রথম স্কুলে গেলাম ক্লাসে ঢুকবো তখনি দেখি কে যানো আমাকে লেং মেরে ফেলে দিছে তখন থাপ্পর দিতে যাবো তখনি দেখি এটা আর কেও না একটা মেয়ে দেখছি হাসছে আর মেয়ে টাও অপূরুপ সুন্দর মনে হলে এক মায়াবতী দূর এই সব চিন্তা করে লাভ নাই তো দেখি মেয়েটা বলতেছে- মেয়ে: এই ছেলে চোখে দেখিস না ? আমি অবাক হয়ে গেলাম কার প্রশ্ন কাকে বলার কথা সে আমাকে বলতেছে তখন আমি বল্লাম- আমি: আজব তো আপনি তো আমাকে লেং মেরে ফেলে দিছেন ? মেয়ে: এই তুই দেখছিস আমি তোকে ফেলে দিছি ? আমি: না আল্লাহ তো আমাকে কানা বানিয়ে দুনিয়া পাঠাইছে কিছু তো দেখি না | দেখি আমার কথা শুন হাসতেছে পরে বল্লো----> মেয়ে: এই তোর সাহস তো কম না বড়দের সাথে এইভাবে কথা বলস ? আমি: বড় মানে আর আপনি এইভাবে তুই তোকারি ভাবে কথা বলতেছেন কেনো? মেয়ে: কি তোর কত্ত বড় সাহস আমার সাথে এরকম ভাবে কথা বলিস তুই আমাকে চিনিস আমি কে ? আমি: কেনো আপনি কি প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে নাকি যে ভালোভাবে কথা...

গল্প::অবশেষে ম্যামের প্রেমে পড়লাম

   Bangla Love story গল্প:: অবশেষে ম্যামের প্রেমে পড়লা আমি রনি অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ি। আমাদের কলেজের সব স্যারেরা আমাকে ভালো ভাবেই চেনেন। কারনটা হলো আমি কলেজের টপার।লেখাপড়ায় যেমন ভালো খেলাধুলায় ও তেমন ভালো।তাছাড়া কলেজের যে কোন অনুষ্ঠানেও আমাকে উপস্থাপনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়।এমনকি আন্ত কেলেজ ক্রিকেট ও ক্যরাটি টুনামেন্টেও আমার জন্যে আমাদের কলেজ চাম্পিয়ন হয়েছে এবার।সব স্যারেরা আমাকে নিয়ে গর্ব করে। আর সারা কলেজের মেয়েরাতো আমার সাথে কথা বলার জন্য পাগল।তবে আমি কারও সাথে মানে মেয়েদের সাথে কথা বলি না। আমি সব বিষয়ে পারদর্শী হলেও একটা বিষয়ে অনেক পিছিয়ে আছি আর তা হলো মেয়েদের কে খুব ভয় পায়। কলেজে কোন মেয়ের সাথে কথা বলিনা যদিও মেয়েরা আমার সাথে কথা বলার জন্য আমার পিছনে পিপড়ার মতো লাইন দিয়ে থাকে সবসময়। ।।আমাদের কলেজের প্রিন্সিপালের মেয়ে নাম মোহনা,আজ আমাদের কলেজেই ইংরেজির টিচার হিসেবে জয়েন করবে।তাকে আজ বরণ করা হবে। সেই জন্য আমাদের কলেজ ক্যাম্পাসে আজ একটা মিলন মেলা বসেছে মানে কলেজের সকল ছাত্র-ছাত্রী এবং সার, আমরা সবাই ক্যাম্পাসে অধীর আগ্রহে বসে আছি কখন নতুন ম্যামকে বরন ...