সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গোপনে বিয়ে ( ৬ পর্ব)

 



গোপনে বিয়ে 

৬ষ্ঠ পর্ব

এরপর দিন সকাল বেলা পুণম চলে গেল ওদের বাড়িতে।পুণম চলে যাওয়ার পর থেকেই বিন্দুর কেমন মন ভার ভার।রাতে আমার সাথে সেদিন একটি কথাও বললো না বিন্দু।কী অদ্ভুত কান্ড!

এর দুদিন পর হঠাৎ করেই পুণম আবার চলে এলো। ওইদিন থেকে আবার বিন্দু প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠলো।সব সময় হাসিখুশি থাকতো।'

'তারপর!'

না চাইতেও আমার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো এ শব্দটি ।

ইমতিয়াজ ভাইয়া বললেন,'সেদিন ফ্রাইডে ছিল। আমি গোসল সেরে নামাজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। মায়ের সেদিন হঠাৎ করে প্রেশার বেড়ে গেল।এলিজা মায়ের মাথায় পানি ঢেলে দিচ্ছে। বিন্দু তখন বললো,নামাজে যাওয়ার আগে মার জন্য ফার্মেসি থেকে দুটো টেবলেট নিয়ে আসো।

ওর কথায় আলনা থেকে শার্টটা নামিয়ে গায়ে লাগিয়ে বের হয়ে যাই। কিন্তু অর্ধেক পথ গিয়ে মনে হলো ড্রয়ার থেকে টাকা নিয়ে আসিনি।তাই দ্রুত ফিরে এলাম বাসায়। আর ফিরেই দেখি --!'

ইমতিয়াজ ভাইয়া চোখ মুছলেন। তারপর আবার একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বললেন,'এই দিন দুপুরেই ওরা অসভ‍্যতামি করছিলো দরজার এক পাশে দাঁড়িয়ে!'

ইমতিয়াজ ভাইয়া কান্নার জন্য কথা বলতে পারছেন না। তিনি কান্নাভরা গলায়ই বললেন,'আমি বিন্দুকে খুব ভালো বেসে ফেলেছিলাম। কিন্তু এই দৃশ্য দেখে আমার মাথায় রক্ত চড়ে গিয়েছিল। আমি হাতে বটি নিয়ে ওদের খুন করে ফেলতে চাইলাম। কিন্তু এলিজা এসে আমায় জাপটে ধরে ফেললো আর কাঁদতে কাঁদতে বললো,ভাইয়া,পুণম আমায় ভালো না বাসুক আমি তো তাকে বাসি। আমার চোখের সামনে তাকে তুই কিংবা অন্য কেউ আঘাত করলে আমি সহ্য করতে পারবো না রে ভাইয়া!

এলিজার জন‍্যই মারতে পারিনি ওদের। বিকেল বেলা ঠিক করলাম পুণমের বাবা আর বিন্দুর বড় ভাইকে খবর দিবো। খবর দিলামও।ওরা জানালো পরদিন সকাল বেলা আসবে।'

ইমতিয়াজ ভাইয়া এবার থামলেন। আবার একটা সিগারেট ধরিয়ে তিনি বাতাসে ধোঁয়া ছাড়লেন। তারপর একবার আকাশের দিকে তাকালেন।তার সাথে আমিও আকাশের দিকে তাকালাম। আকাশ ভরা কালো কালো মেঘ। বৃষ্টি আসবে হয়তো!

ইমতিয়াজ ভাইয়া বললেন,'ওরা তো বলেছিলো পরদিন আসবে কিন্তু পরদিন আর আসার প্রয়োজন হয়নি ওদের।রাতেই ওরা খবর পেলো পুণম বিন্দুকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।'

'কোথায় পালিয়ে গিয়েছিল ওরা?আর এখন ওরা কোথায় আছে?'

'জানি না।আজ পর্যন্ত কোন খবর পাইনি।'

'তবে কী পুণম এলিজার কাছাকাছি এসেছিল শুধুমাত্র বিন্দুর জন্যই?'

আমার ধারণা এটাই!'

'এলিজার কথা বলুন প্লিজ!ওর জন্য আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।আর আপনার জন্যও!'

'এলিজা তো কষ্ট নিয়ে মারাই গেল। একেবারেই মারা গেল। কিন্তু আমি কষ্ট নিয়েও মরার মতো বেঁচে আছি!'

'এলিজা কীভাবে মারা গেলো?'

এই জন্যই ছাদে এসে গল্প করছি তোমার সাথে।এলিজা কীভাবে মারা গেলো তোমায় দেখাবো বলে।'

ইমতিয়াজ ভাইয়া বসা থেকে উঠে বললেন,'আমার সাথে এসো।'

আমি বসা থেকে উঠে তার পেছন‌ পেছন হাঁটলাম। ইমতিয়াজ ভাইয়া হেঁটে গেলেন একেবারে ছাদের পশ্চিম কিনারে। আমিও গিয়ে ওখানে দাঁড়ালাম। তিনি এবার বললেন,'নীচে তাকাও।'

আমি নীচে তাকালাম।

তিনি এবার বললেন,'ছাদ থেকে নীচটা অনেক ব‍্যাবধান না?মানে এখান থেকে লাফ দিলে বাঁচার পসিবিলিটি কতটুকু?'

'জিরো পার্সেন্ট। যদি আল্লাহ বাঁচিয়ে দেন তা ভিন্ন!'

ইমতিয়াজ ভাইয়া হঠাৎ ডুকরে কেঁদে উঠলেন। তারপর কান্নাভেজা গলায় বললেন,'পুণমের থেকে পাওয়া এতো বড় আঘাতটা আমার বোন সহ‍্য করতে পারেনি।আর পরদিন সকাল বেলা এখান থেকেই নীচে ঝাঁপ দিয়েছিল  এলিজ! আমার লক্ষ্মী এলিজ!'

ইমতিয়াজ ভাইয়া ছাদের রেলিং ধরে হেঁচকি তুলে কাঁদছেন। এমন ভাবে কোনদিন আমি কোন পুরুষকে কাঁদতে দেখিনি।

আমি ইমতিয়াজ ভাইয়াকে কীভাবে সান্ত্বনা দিবো তা বুঝতে পারছি না। তবে একটা কাজ আমি করেছি। ইমতিয়াজ ভাইয়ার হাতটা টেনে ধরে মায়াময় গলায় বললাম,'ভাইয়া,এলিজ না থাকলেও আপনার বোন নাতাশা আছে।আপনি কাঁদবেন না প্লিজ!'

ইমতিয়াজ ভাইয়া শান্ত চোখে আমার দিকে তাকাতেই তার ফোন বেজে উঠলো।

'হ‍্যালো।'

'আমি নাতাশার হাজবেন্ড।নাতাশা কোথায় আছে জানেন?'

'নাতাশা আছে।আপনি বলেছিলেন সে যেন কয়দিনের জন্য কোথাও সেটেলড হয়।সে এখন সেটেলড হয়েছে।'

ও পাশ থেকে নিতুলের কন্ঠ কেমন যেন শুনালো!

সে বললো,'কোথায় আছে ও এখন?'

'তার ভাইয়ের কাছে।'

'তার ভাই আবার কোত্থেকে এলো?তার কোন ভাই বোন নাই।সে একা।'

ইমতিয়াজ ভাইয়া হেসে বললেন,'যার কেউ না থাকে তারও কেউ হয়ে যায়।নাতাশার ভাই আগে ছিল না। এখন আছে।'

'ওর ভাইয়ের নাম বলুন।'

'ইমতিয়াজ রহমান।'

'ডাঃ ইমতিয়াজ রহমান।মানে আপনি?'

'হুম আমি।'

'তাহলে এতো ভণিতা করছেন কেন? এক্ষুনি আপনার ঠিকানা দিন!'

ইমতিয়াজ ভাইয়া বললেন,'ঠিকানা দিয়ে আপনি কী করবেন?'


'আমার ওয়াইফ আপনার এখানে আর আপনি বলছেন আমি ঠিকানা দিয়ে কী করবো আপনার!'

'ও আই সি! আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আপনি নাতাশার হাজবেন্ড!'

ও পাশ থেকে রাগী গলা শোনা যাচ্ছে নিতুলের।

ইমতিয়াজ ভাইয়া ঠিকানা বলে দিলেন।

তারপর ফোন কেটে ইমতিয়াজ ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,'তোমার হাজবেন্ড ফোন করেছিল।'

'ভাইয়া ও বোধহয় আপনার কথায় রাগ করেছে।'

ইমতিয়াজ ভাইয়া অদ্ভুত ভাবে হেসে বললেন,'এই নারী জাতিটা বড়ো অদ্ভুত।এরা যাকে ভালোবাসে এর জন্য জীবন পর্যন্ত কুরবান করে দেয়। এমনকি এটা জানার পরেও যে তার ভালোবাসার মানুষটি তাকে ঠকাচ্ছে!'

আমি ইমতিয়াজ ভাইয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।আজ হয়তো নিতুল আসবে আমায় নিতে।বাসায় সব মিটমাট করে নিয়েছে বোধহয় সে।এটা ভেবে আমার খুব আনন্দ হচ্ছে। কিন্তু কষ্ট হচ্ছে এই জন্য যে, ইমতিয়াজ ভাইয়া আবার একা হয়ে যাবে।আর কেউ থাকবে না তার কষ্টগুলো শোনার জন্য!

***********************************

https://banglalovestory247.blogspot.com/




মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

গল্প: ১০ দিনের বউ

গল্প: ১০ দিনের বউ সকালে দরজায় পত্রিকাওয়ালার ডাক শুনে ঘুম ভাঙলো.... ঘুম ঘুম চোখে ঘড়ির দিকে তাকালাম.... ৯:২৫ বাজে... OMG........সাড়ে ন'টা বেজে গেছে... তাড়াতাড়ি শরীরের উপর থেকে কাঁথাটা একপাশে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বাথরুমের দিকে দৌড় দিলাম.... যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দাঁতে ব্রাশ ঘষাতে লাগলাম... চোখে মুখে জল দিলাম... অতঃপর ফ্রেস টেস হয়ে রুমে এলাম... একদিকে শার্ট প্যান্ট পড়ে রেডি হচ্ছি.. একইসাথে অন্যদিকে মুখে পাউরুটি ঢুকাচ্ছি... ভালো করে খাওয়ারও সময় নেই.. উফফ অনেক দেরি হয়ে গেছে... শেষে তাড়াতাড়ি মুখের পাউরুটিটা গিলে টাই টা হাতে নিয়েই তাড়াতাড়ি দরজা লক করে বেরিয়ে পড়লাম.. দ্রুত হাটা ধরলাম... ইসস বাইকটা Repair করাতে দিয়েছি.. নাহলে বাইক দিয়েই যাওয়া যেত.. যাই হোক এখন এসব না ভেবে তাড়াতাড়ি বড় রাস্তায় গিয়ে একটা রিকশায় উঠলাম.... রিক্সায় বসে বসে টাই টা বেধে নিলাম.... আজকে অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে... ব্যাচেলর মানুষ.. ঢাকায় একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করি.. একটা মেসে একাই থাকি.. সকাল সকাল যে কেউ ঘুম থেকে ডেকে তুলবে সেরকম কেউও তো নেই... যাই হোক, এখন এসব ভাবলে চলবে না.. আমাদের অফিসের বস এমন...

{গল্প: হেড মাষ্টারের দুষ্টু মেয়ে }

  গল্প: হেড মাষ্টারের দুষ্টু মেয়ে জে এস সি পাশ করে আজ নতুন একটা স্কুলে ভর্তি হলাম অবশ্য আগে বাবা মার সাথে থাকতাম এখন ভাইয়ার কাছে আসলাম কারন স্কুল টা কাছে তাই | তো আজ প্রথম স্কুলে গেলাম ক্লাসে ঢুকবো তখনি দেখি কে যানো আমাকে লেং মেরে ফেলে দিছে তখন থাপ্পর দিতে যাবো তখনি দেখি এটা আর কেও না একটা মেয়ে দেখছি হাসছে আর মেয়ে টাও অপূরুপ সুন্দর মনে হলে এক মায়াবতী দূর এই সব চিন্তা করে লাভ নাই তো দেখি মেয়েটা বলতেছে- মেয়ে: এই ছেলে চোখে দেখিস না ? আমি অবাক হয়ে গেলাম কার প্রশ্ন কাকে বলার কথা সে আমাকে বলতেছে তখন আমি বল্লাম- আমি: আজব তো আপনি তো আমাকে লেং মেরে ফেলে দিছেন ? মেয়ে: এই তুই দেখছিস আমি তোকে ফেলে দিছি ? আমি: না আল্লাহ তো আমাকে কানা বানিয়ে দুনিয়া পাঠাইছে কিছু তো দেখি না | দেখি আমার কথা শুন হাসতেছে পরে বল্লো----> মেয়ে: এই তোর সাহস তো কম না বড়দের সাথে এইভাবে কথা বলস ? আমি: বড় মানে আর আপনি এইভাবে তুই তোকারি ভাবে কথা বলতেছেন কেনো? মেয়ে: কি তোর কত্ত বড় সাহস আমার সাথে এরকম ভাবে কথা বলিস তুই আমাকে চিনিস আমি কে ? আমি: কেনো আপনি কি প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে নাকি যে ভালোভাবে কথা...

গল্প::অবশেষে ম্যামের প্রেমে পড়লাম

   Bangla Love story গল্প:: অবশেষে ম্যামের প্রেমে পড়লা আমি রনি অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ি। আমাদের কলেজের সব স্যারেরা আমাকে ভালো ভাবেই চেনেন। কারনটা হলো আমি কলেজের টপার।লেখাপড়ায় যেমন ভালো খেলাধুলায় ও তেমন ভালো।তাছাড়া কলেজের যে কোন অনুষ্ঠানেও আমাকে উপস্থাপনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়।এমনকি আন্ত কেলেজ ক্রিকেট ও ক্যরাটি টুনামেন্টেও আমার জন্যে আমাদের কলেজ চাম্পিয়ন হয়েছে এবার।সব স্যারেরা আমাকে নিয়ে গর্ব করে। আর সারা কলেজের মেয়েরাতো আমার সাথে কথা বলার জন্য পাগল।তবে আমি কারও সাথে মানে মেয়েদের সাথে কথা বলি না। আমি সব বিষয়ে পারদর্শী হলেও একটা বিষয়ে অনেক পিছিয়ে আছি আর তা হলো মেয়েদের কে খুব ভয় পায়। কলেজে কোন মেয়ের সাথে কথা বলিনা যদিও মেয়েরা আমার সাথে কথা বলার জন্য আমার পিছনে পিপড়ার মতো লাইন দিয়ে থাকে সবসময়। ।।আমাদের কলেজের প্রিন্সিপালের মেয়ে নাম মোহনা,আজ আমাদের কলেজেই ইংরেজির টিচার হিসেবে জয়েন করবে।তাকে আজ বরণ করা হবে। সেই জন্য আমাদের কলেজ ক্যাম্পাসে আজ একটা মিলন মেলা বসেছে মানে কলেজের সকল ছাত্র-ছাত্রী এবং সার, আমরা সবাই ক্যাম্পাসে অধীর আগ্রহে বসে আছি কখন নতুন ম্যামকে বরন ...