সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গোপনে বিয়ে (১১তম) এবং শেষ পর্ব

 


গোপনে বিয়ে

১১তম এবং শেষ পর্ব

কী সর্বনাশ!

আমার সন্তানটা মিসক‍্যারেজ হয়ে গেল!

যখন পৃথিবী ঘুরঘুর করে ঘুরছিলো তখন আমার পায়ের গোড়ালি বেয়ে তরল কিছু নামছে এমন টের পেয়ে হাত রাখলাম। তারপর হাতের তালুটা আবছা অন্ধকার চোখের সামনে আনতেই আমার মাথাটা আবার চক্কর দিয়ে উঠলো।এতো লাল টকটকে রক্ত! এই রক্তের সাথে মিশে আসছে আমার সারাটা জীবনের স্বপ্ন। আমার ভেঙে যাওয়া মাতৃত্ব!

ব‍্যাথায় কাতর হয়ে উঠছি আমি। একটুও নড়তে পারছি না। দাঁতে দাঁত লেগে আসছে আমার।আর কিছুই ঠিক মনে করতে পারছি না আমি।

আর শুধু এটুকু জানি তখন আমার মাথার উপর ঠিক দিপ্রহরের দিবাকরের তেজ। সেই তেজের নীচে জ্ঞান হারালাম আমি।

আমার জ্ঞান ফেরার পর চোখ খুলে দেখি আমি শুয়ে আছি হাসপাতালের কোন এক কেবিনের বেডে। আর আমার সামনে দু হাত তুলে কেঁদে একসাড় হয়ে মরছেন আমার মা।

আমি চোখ খুলে মাকে দেখে চিৎকার করে কেঁদে উঠলাম।

'ও মা,মাগো,মা মা মা---?'

আমার মা তখন দোয়া ভেঙে দিয়ে আমায় জড়িয়ে ধরলেন। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। কপালে গাঢ় চুমু এঁকে দিয়ে বললেন,'তুই একা পড়ে ছিলি ওখানে।কেউ ছিল না তোর পাশে। শুধু একজন ভিকেরি যদি তোকে না দেখতো তখন কীভাবে আমি জানতাম তোর এই দশা?

ওই ভিকেরি যদি তোকে না চিনতো? যদি না জানতো তুই আমার মেয়ে!'

আমি কাঁদছি।মায়ের কোলের উপর পড়ে থেকে কাঁদছি।

মা বললেন,'নিতুলকে ফোন করেছি।রিসিভ করে না। কেটে দেয়।আর তুই ওখানে ছিলি কেন?কী হয়েছিল তোর বল তো!'

আর ভয়ডর রেখে লাভ নেই। আমি এখন জেনে গেছি পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো বন্ধু হয় মা-ই। পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো সমাধান জানেন এই মা-ই।

আমি কেঁদে কেঁদে মার কাছে সবকিছু খুলে বললাম। জ্ঞান ফিরেছে শুনে বাবাও আমার কাছে এসেছেন।আর তিনিও শুনেছেন সবকিছু।বাবা শুনে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠে বললেন,'নিতুলকে আমি নিজের হাতে খুন করে ফেলবো।'

বলে তিনি হাঁপাতে লাগলেন।

মা বললেন,'দেশে আইন আছে। তোমার কিছুই করতে হবে না। তুমি পাল্টা মামলা করো।আজ আমার মেয়েটা মরতে বসেছিলো।আর বাচ্চাটা তো মরেই গেলো!'

আমি বললাম,'আগে ইমতিয়াজ ভাইয়াকে ছাড়াবার ব‍্যাবস্থা করো তোমরা।'

বাবা বললেন,'ইমতিয়াজকে আমি দ্রুত ছাড়িয়ে আনবো।সত‍্যি ছাড়িয়ে আনবো।

বাবা মামলা করে দিলেন নিতুল আর তার মায়ের নামে।নারী এবং শিশু নির্যাতন এর মামলা। তাছাড়া নির্দোষ একজন মানুষকে ফাঁসিয়ে দিয়ে গ্রেফতার করার বিরুদ্ধেও অভিযোগ করলেন।

আর নিতুলের সাথে আমার ডিভোর্সের বিষয়েও।

 তারপর আমাদের পক্ষ থেকে উকিল ধরা হলো। উকিল বললেন,'

ইমতিয়াজ সাহেবের দ্রুত মুক্তি মিলবে। এমন নাটকীয় কেসও কী পুলিশ নেয়?দেশটা একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে বুঝলেন? পুলিশ গুলো ঘুষ পেলে সব করতে পারে!'

বাবা বললেন,'তাই যেন হয়। ইমতিয়াজ ছেলেটা বড্ড ভালো!'


নিতুল আর ওর মা এরেস্ট হয়েছে।

তারপর আদালতে আমার জবানবন্দি নিয়ে ইমতিয়াজ ভাইয়াকে নির্দোষ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে তাকে সম্মানের সহিত মুক্তি দেয়া হয়েছে।আর আমার শারীরিক অবনতি,অত‍্যাচার করে গর্ভপাত ঘটিয়ে দেয়ার জন্য নিতুলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং তার মাকে দশ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

সেদিন ওর থেকে আমার ডিভোর্সও মিলেছে। এখন আর নিতুল আমার কেউ হয় না।ওর সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক নেই।

রায় শোনার পর নিতুলের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি ভয়ে ওর মুখটা কেমন চুপসে গেছে।আমায় ওর দিকে তাকাতে দেখে সে মুহূর্তে নিজের চোখ আড়াল করে নিয়েছে।


আদালত থেকে বের হওয়ার পর ইমতিয়াজ ভাইয়া এগিয়ে এলেন আমার দিকে। আমি তখন কী মনে করে যেন কেঁদে ফেললাম। ইমতিয়াজ ভাইয়া তখন আমায় কাছে টেনে নিয়ে বললেন,'নিতুলের জন্য খারাপ লাগছে?'

আমি কেঁদে কেঁদে বললাম,'না ভাইয়া। জন্ম নেয়ার আগেই যে শিশু খুন হলো তার জন্য খারাপ লাগছে!'

ইমতিয়াজ ভাইয়া তখন আমার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,'স্বয়ং আল্লাহই হয়তো চাননি পৃথিবীতে এসে এই সন্তান দেখুক এই পৃথিবী‌ তার জন্য খুব নিষ্ঠুর!'

তারপর ইমতিয়াজ ভাইয়া বললেন,'দেখিস,তোর জন্য লক্ষ্মী একটা ছেলে দেখে আবার বিয়ে দিবো তোকে।সেই ছেলে কাপুরুষ হবে না সুপুরুষ হবে। সেই ছেলে তোর সাথে গোপনে ছলনা না করে তোকে ভালো বাসবে। সেই ছেলে লাথি মেরে তোর পেটের সন্তানকে খুন না করে তোর পেটে তার কান রেখে সন্তানের সাথে ভালো বাসার কল্প কথোপকথনে‌ লিপ্ত হবে!'

ইমতিয়াজ ভাইয়ার কথাগুলো শুনে আমার দু চোখ থেকে ছলছল করে জল গড়িয়ে নামলো গালের উপর। ইমতিয়াজ ভাইয়া সেই জল তার আঙুলের ডগায় তুলে নিয়ে বললেন,'এই জল নিয়ে আসুক আলোকের দিন।'

আমি ইমতিয়াজ ভাইয়ার হাতটা শক্ত করে ধরলাম। আমার এখন আর ভয় করছে না। আমার মনে হচ্ছে পৃথিবীতে রক্তের চেয়েও গভীর সম্পর্ক হলো বিশ্বাসের।যে একবার কারোর কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে যায় তার জন্য নির্ধিদায় জীবন পর্যন্ত বিলিয়ে দেয়া যায়।

 

                 --সমাপ্ত--

************************************


https://banglalovestory247.blogspot.com/





মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

গল্প: ১০ দিনের বউ

গল্প: ১০ দিনের বউ সকালে দরজায় পত্রিকাওয়ালার ডাক শুনে ঘুম ভাঙলো.... ঘুম ঘুম চোখে ঘড়ির দিকে তাকালাম.... ৯:২৫ বাজে... OMG........সাড়ে ন'টা বেজে গেছে... তাড়াতাড়ি শরীরের উপর থেকে কাঁথাটা একপাশে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বাথরুমের দিকে দৌড় দিলাম.... যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দাঁতে ব্রাশ ঘষাতে লাগলাম... চোখে মুখে জল দিলাম... অতঃপর ফ্রেস টেস হয়ে রুমে এলাম... একদিকে শার্ট প্যান্ট পড়ে রেডি হচ্ছি.. একইসাথে অন্যদিকে মুখে পাউরুটি ঢুকাচ্ছি... ভালো করে খাওয়ারও সময় নেই.. উফফ অনেক দেরি হয়ে গেছে... শেষে তাড়াতাড়ি মুখের পাউরুটিটা গিলে টাই টা হাতে নিয়েই তাড়াতাড়ি দরজা লক করে বেরিয়ে পড়লাম.. দ্রুত হাটা ধরলাম... ইসস বাইকটা Repair করাতে দিয়েছি.. নাহলে বাইক দিয়েই যাওয়া যেত.. যাই হোক এখন এসব না ভেবে তাড়াতাড়ি বড় রাস্তায় গিয়ে একটা রিকশায় উঠলাম.... রিক্সায় বসে বসে টাই টা বেধে নিলাম.... আজকে অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে... ব্যাচেলর মানুষ.. ঢাকায় একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করি.. একটা মেসে একাই থাকি.. সকাল সকাল যে কেউ ঘুম থেকে ডেকে তুলবে সেরকম কেউও তো নেই... যাই হোক, এখন এসব ভাবলে চলবে না.. আমাদের অফিসের বস এমন...

{গল্প: হেড মাষ্টারের দুষ্টু মেয়ে }

  গল্প: হেড মাষ্টারের দুষ্টু মেয়ে জে এস সি পাশ করে আজ নতুন একটা স্কুলে ভর্তি হলাম অবশ্য আগে বাবা মার সাথে থাকতাম এখন ভাইয়ার কাছে আসলাম কারন স্কুল টা কাছে তাই | তো আজ প্রথম স্কুলে গেলাম ক্লাসে ঢুকবো তখনি দেখি কে যানো আমাকে লেং মেরে ফেলে দিছে তখন থাপ্পর দিতে যাবো তখনি দেখি এটা আর কেও না একটা মেয়ে দেখছি হাসছে আর মেয়ে টাও অপূরুপ সুন্দর মনে হলে এক মায়াবতী দূর এই সব চিন্তা করে লাভ নাই তো দেখি মেয়েটা বলতেছে- মেয়ে: এই ছেলে চোখে দেখিস না ? আমি অবাক হয়ে গেলাম কার প্রশ্ন কাকে বলার কথা সে আমাকে বলতেছে তখন আমি বল্লাম- আমি: আজব তো আপনি তো আমাকে লেং মেরে ফেলে দিছেন ? মেয়ে: এই তুই দেখছিস আমি তোকে ফেলে দিছি ? আমি: না আল্লাহ তো আমাকে কানা বানিয়ে দুনিয়া পাঠাইছে কিছু তো দেখি না | দেখি আমার কথা শুন হাসতেছে পরে বল্লো----> মেয়ে: এই তোর সাহস তো কম না বড়দের সাথে এইভাবে কথা বলস ? আমি: বড় মানে আর আপনি এইভাবে তুই তোকারি ভাবে কথা বলতেছেন কেনো? মেয়ে: কি তোর কত্ত বড় সাহস আমার সাথে এরকম ভাবে কথা বলিস তুই আমাকে চিনিস আমি কে ? আমি: কেনো আপনি কি প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে নাকি যে ভালোভাবে কথা...

গল্প::অবশেষে ম্যামের প্রেমে পড়লাম

   Bangla Love story গল্প:: অবশেষে ম্যামের প্রেমে পড়লা আমি রনি অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ি। আমাদের কলেজের সব স্যারেরা আমাকে ভালো ভাবেই চেনেন। কারনটা হলো আমি কলেজের টপার।লেখাপড়ায় যেমন ভালো খেলাধুলায় ও তেমন ভালো।তাছাড়া কলেজের যে কোন অনুষ্ঠানেও আমাকে উপস্থাপনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়।এমনকি আন্ত কেলেজ ক্রিকেট ও ক্যরাটি টুনামেন্টেও আমার জন্যে আমাদের কলেজ চাম্পিয়ন হয়েছে এবার।সব স্যারেরা আমাকে নিয়ে গর্ব করে। আর সারা কলেজের মেয়েরাতো আমার সাথে কথা বলার জন্য পাগল।তবে আমি কারও সাথে মানে মেয়েদের সাথে কথা বলি না। আমি সব বিষয়ে পারদর্শী হলেও একটা বিষয়ে অনেক পিছিয়ে আছি আর তা হলো মেয়েদের কে খুব ভয় পায়। কলেজে কোন মেয়ের সাথে কথা বলিনা যদিও মেয়েরা আমার সাথে কথা বলার জন্য আমার পিছনে পিপড়ার মতো লাইন দিয়ে থাকে সবসময়। ।।আমাদের কলেজের প্রিন্সিপালের মেয়ে নাম মোহনা,আজ আমাদের কলেজেই ইংরেজির টিচার হিসেবে জয়েন করবে।তাকে আজ বরণ করা হবে। সেই জন্য আমাদের কলেজ ক্যাম্পাসে আজ একটা মিলন মেলা বসেছে মানে কলেজের সকল ছাত্র-ছাত্রী এবং সার, আমরা সবাই ক্যাম্পাসে অধীর আগ্রহে বসে আছি কখন নতুন ম্যামকে বরন ...