সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গোপন বিয়ে (৫ম পর্ব)

 


গোপন বিয়ে (৫ম পর্ব)

সকাল বেলা ইমতিয়াজ ভাইয়ার আগেই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল।আর আমি সেই নীল শাড়িটা পরেই গিয়ে দাঁড়ালাম ছাদে গোলাপ বনের কাছে।সকালের শীতল বাতাসে শরীর কেমন কাঁপছে।আর শাড়ির আঁচল উড়ছে পালতোলা নৌকোর বাদামীর মতন। আমার খুব ভালো লাগছে। হঠাৎ আকাশের দিকে তাকালাম।কী সুন্দর নীল ঝকঝকে তকতকে আকাশ।আকাশের সাথে যেন মিশে যাচ্ছিল আমার শাড়ির আঁচল।না চাইতেও আমার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো দুটো লাইন,


  'আকাশ তোমার নীলের সাথে মিললে আমার শাড়ির আঁচল,

বলবে তখন দুঃখ ছেড়ে আমার সাথেই মিশবে যা চল?'


আমি তখন একটা গোলাপের পেটে পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম।একটা লাল টকটকে গোলাপ।আর তখনই ছাদে উঠে এলেন ইমতিয়াজ ভাইয়া। তিনি এসে বললেন,'গুড মর্নিং গোলাপজান বিবি।'

পেছনে তাকিয়ে দেখি ইমতিয়াজ ভাইয়া হাসছেন।তার মুখ থেকে গোলাপজান নাম শুনে আমারও ভীষণ হাসি পেয়ে গেল। ইমতিয়াজ ভাইয়া বললেন,'তোমাকে বেশ লাগছে। একেবারে আকাশের নীলের সাথে মিশে গেছো তুমি!'

'আমি না মিশলেও আমার দুঃখগুলো মিশে গেছে ভাইয়া।'

'বেশ তো!যে আকাশ হতে জানে সে মহৎ হতেও জানে।'

তারপর আবার আমরা বসলাম গোলাপ বনের কাছে।একটা প্রজাপতি তখন ভূ ছোট দিয়ে চলে গেল আমাদের পাশ কাটিয়ে। তারপর আরেকটা। খুব ভালো লাগছিলো তখন!

আমি বললাম,'ভাইয়া, আপনার শরীরটা এখন কেমন?'

ইমতিয়াজ ভাইয়া মৃদু হাসলেন। তারপর ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে বললেন,'ভালো আছি।'

এবার আমি কিছু একটা তাকে বলতে চাইছিলাম কিন্তু এর আগেই তিনি বলে উঠলেন,'ঠিক এভাবেই আরো তিন বছর আগে আমি আর এলিজা বসেছিলাম মুখোমুখি। এলিজার চোখ ভরা জল তখন।সে আমায় ভেজা গলায় বললো,'ভাইয়া, ভাবীর সাথে না আগে থেকেই পুণমের পরিচয় ছিল।'

আমি অবাক হয়ে বললাম,'তাই নাকি?তাহলে তো ভালোই!'

'ভাবীর বড় ভাইয়ের বন্ধু পুণম।'

'আচ্ছা। খুব ভালো।'

ভালো না ভাইয়া। ভালো না একটুও!'

বলে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো এলিজা। আমি অস্থির হয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম,'কী হয়েছে এলিজ,তোর কী হয়েছে? এমন করছিস কেন তুই হঠাৎ?'

এলিজা মুখে শাড়ির আঁচল গুঁজে দিয়ে বললো,'ভাইয়া,ভাবীর সাথে পুণমের আগে থেকেই রিলেশন ছিল। এখনও আছে!'

শুনে কেমন অবিশ্বাস্য লাগলো কথাটা। আমার মনে হলো এলিজা হয়তো কোন কারণে বিন্দুকে ভুল বুঝছে।হয়তো ওরা আগে থেকে পরিচিত বলে একসাথে ওদের গল্প করতে দেখে এলিজা ভেবে নিয়েছে অন‍্য কিছু। আসলে কাউকে বেশি ভালো বাসলেই এমন হয়। ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে সব সময় ভয় কাজ করে।অন‍্য কারোর সাথে মিশতে দেখলেই ভয় করে। মনে হয় অন‍্য কেউ যদি তার ভালোবাসার মানুষটিকে তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়!

'

এইসব কিছুই ভাবছিলাম আমি।আর এলিজাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম। কিন্তু এলিজা এবার যে কথাটি বললো তা আরো ভয়াবহ।সে বললো‌ বিন্দুর সাথে পুণমকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখেছে।সে তখন ওয়াশরুমে ছিল। এবং চট করে ওখান থেকে ফিরে আসতেই চোখে পড়ে তার এমন দৃশ্য।

এলিজার কথাগুলো শুনে আমার কান কেমন গরম হয়ে উঠলো।আর পায়ের মাটি কেমন যেন দূরে সরে যেতে লাগলো। আমি তখন চিৎকার করে কাঁদতে চেয়েও পারিনি। কেমন যেন বোকাসোকা হয়ে গিয়েছিলাম একেবারে।'

ইমতিয়াজ ভাইয়ার চোখে জলের রেখা দেখা গেল আবার।আর আমার চোখও কেমন ঝাঁপসা হয়ে আসছিলো। আর কেবল বার বার মনে হচ্ছিল , এই যে আমি নিজেকে ভেবেছিলাম পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দুঃখী মানুষ আমি এখন তো মনে হচ্ছে আমার চেয়ে শত শত গুণ বেশি দুঃখী একজন মানুষ এই ইমতিয়াজ ভাইয়া। আসলে আমরা উপর থেকে যাকে দেখি হাসিখুশি আর প্রাণোচ্ছল তার ভেতরে লুকিয়ে থাকে ঠিক ততটাই কিংবা আরো গভীর ক্ষত।

আমি এবার পরবর্তী অংশ টুকু জানতে চাইলাম। কিন্তু ইমতিয়াজ ভাইয়াকে বলতে পারছিলাম না কারণ তিনি তখন চোখ মুছছিলেন।

শার্টের হাতা দিয়ে চোখ মুছে নিয়ে ইমতিয়াজ ভাইয়া বাকী টুকু বলতে শুরু করলেন। তিনি এবার বললেন,'এলিজার কাছ থেকে এই কথাগুলো শুনেও পুরোপুরি বিশ্বাস হয়নি। কারণ দুই দুইটা বছর এক ছাদের নিচে কাটিয়েছি আমি আর বিন্দু। এই এতো গুলো দিনেও বিন্দুকে সন্দেহ করার মতো কোনো কিছু আমার চোখে পড়েনি।তার আচরণ,ব‍্যাবহার আর কথায় আমার সব সময় মনে হতো বিন্দু আমায় অনেক বেশি ভালোবাসে। সম্মান করে।'

ইমতিয়াজ ভাইয়া একটু থামলেন। থেমে একটা দীর্ঘ দীর্ঘশ্বাস টানলেন। তারপর বললেন,'নাতাশা, তোমার সামনে বসে যদি আমি সিগারেট ধরাই তবে কী তোমার অসুবিধা হবে?'

আমি হেসে বললাম,'অসুবিধা হবে না ভাইয়া।'

ইমতিয়াজ ভাইয়া তার প‍্যান্টের পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে একটা সিগারেট ঠোঁটে নিয়ে ধরালেন। তারপর সেই সিগারেটের ধোঁয়া বাতাসে ছেড়ে দিয়ে বললেন,'আগে সিগারেট খেতাম না। এখন খাই।নাতাশা, আমার না খুব দুঃখ। আমি এই দুঃখের কথাগুলো কাউকে কোনদিন বলিনি। দুঃখ থেকে জন্ম নেয়া  বুকের ভেতরে জমা কান্না গুলো ধোঁয়ায় উড়িয়ে দিয়েছি।'

আমি বললাম,'ভাইয়া, আল্লাহ আপনাকে একদিন সুখি করবেন।'

ইমতিয়াজ ভাইয়া বললেন,'মৃত‍্যুর আগে নয়। মৃত্যুর পরে হলে হতে পারে।'

তারপর আবার বলতে শুরু করলেন।

'আমি এলিজাকে বলেছিলাম,এলিজ, তুই পুণমের সাথে কিংবা তোর ভাবীর সাথে এমন বিহেভ করবি যেন ওরা বুঝে তুই কিছু জানিস না।বাকী টা আমি দেখছি।'

এলিজা বললো,'আচ্ছা।'

এরপর দিন সকাল বেলা পুণম চলে গেল ওদের বাড়িতে।পুণম চলে যাওয়ার পর থেকেই বিন্দুর কেমন মন ভার।রাতে আমার সাথে সেদিন একটি কথাও বললো না বিন্দু।কী অদ্ভুত কান্ড!

এর দুদিন পর হঠাৎ করেই---

*********************************


সম্পূর্ণ গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন=

গল্পঃ- গোপনে বিয়ে💝( সকল পর্ব)




 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

গল্প: ১০ দিনের বউ

গল্প: ১০ দিনের বউ সকালে দরজায় পত্রিকাওয়ালার ডাক শুনে ঘুম ভাঙলো.... ঘুম ঘুম চোখে ঘড়ির দিকে তাকালাম.... ৯:২৫ বাজে... OMG........সাড়ে ন'টা বেজে গেছে... তাড়াতাড়ি শরীরের উপর থেকে কাঁথাটা একপাশে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বাথরুমের দিকে দৌড় দিলাম.... যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দাঁতে ব্রাশ ঘষাতে লাগলাম... চোখে মুখে জল দিলাম... অতঃপর ফ্রেস টেস হয়ে রুমে এলাম... একদিকে শার্ট প্যান্ট পড়ে রেডি হচ্ছি.. একইসাথে অন্যদিকে মুখে পাউরুটি ঢুকাচ্ছি... ভালো করে খাওয়ারও সময় নেই.. উফফ অনেক দেরি হয়ে গেছে... শেষে তাড়াতাড়ি মুখের পাউরুটিটা গিলে টাই টা হাতে নিয়েই তাড়াতাড়ি দরজা লক করে বেরিয়ে পড়লাম.. দ্রুত হাটা ধরলাম... ইসস বাইকটা Repair করাতে দিয়েছি.. নাহলে বাইক দিয়েই যাওয়া যেত.. যাই হোক এখন এসব না ভেবে তাড়াতাড়ি বড় রাস্তায় গিয়ে একটা রিকশায় উঠলাম.... রিক্সায় বসে বসে টাই টা বেধে নিলাম.... আজকে অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে... ব্যাচেলর মানুষ.. ঢাকায় একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করি.. একটা মেসে একাই থাকি.. সকাল সকাল যে কেউ ঘুম থেকে ডেকে তুলবে সেরকম কেউও তো নেই... যাই হোক, এখন এসব ভাবলে চলবে না.. আমাদের অফিসের বস এমন...

{গল্প: হেড মাষ্টারের দুষ্টু মেয়ে }

  গল্প: হেড মাষ্টারের দুষ্টু মেয়ে জে এস সি পাশ করে আজ নতুন একটা স্কুলে ভর্তি হলাম অবশ্য আগে বাবা মার সাথে থাকতাম এখন ভাইয়ার কাছে আসলাম কারন স্কুল টা কাছে তাই | তো আজ প্রথম স্কুলে গেলাম ক্লাসে ঢুকবো তখনি দেখি কে যানো আমাকে লেং মেরে ফেলে দিছে তখন থাপ্পর দিতে যাবো তখনি দেখি এটা আর কেও না একটা মেয়ে দেখছি হাসছে আর মেয়ে টাও অপূরুপ সুন্দর মনে হলে এক মায়াবতী দূর এই সব চিন্তা করে লাভ নাই তো দেখি মেয়েটা বলতেছে- মেয়ে: এই ছেলে চোখে দেখিস না ? আমি অবাক হয়ে গেলাম কার প্রশ্ন কাকে বলার কথা সে আমাকে বলতেছে তখন আমি বল্লাম- আমি: আজব তো আপনি তো আমাকে লেং মেরে ফেলে দিছেন ? মেয়ে: এই তুই দেখছিস আমি তোকে ফেলে দিছি ? আমি: না আল্লাহ তো আমাকে কানা বানিয়ে দুনিয়া পাঠাইছে কিছু তো দেখি না | দেখি আমার কথা শুন হাসতেছে পরে বল্লো----> মেয়ে: এই তোর সাহস তো কম না বড়দের সাথে এইভাবে কথা বলস ? আমি: বড় মানে আর আপনি এইভাবে তুই তোকারি ভাবে কথা বলতেছেন কেনো? মেয়ে: কি তোর কত্ত বড় সাহস আমার সাথে এরকম ভাবে কথা বলিস তুই আমাকে চিনিস আমি কে ? আমি: কেনো আপনি কি প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে নাকি যে ভালোভাবে কথা...

গল্প::অবশেষে ম্যামের প্রেমে পড়লাম

   Bangla Love story গল্প:: অবশেষে ম্যামের প্রেমে পড়লা আমি রনি অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ি। আমাদের কলেজের সব স্যারেরা আমাকে ভালো ভাবেই চেনেন। কারনটা হলো আমি কলেজের টপার।লেখাপড়ায় যেমন ভালো খেলাধুলায় ও তেমন ভালো।তাছাড়া কলেজের যে কোন অনুষ্ঠানেও আমাকে উপস্থাপনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়।এমনকি আন্ত কেলেজ ক্রিকেট ও ক্যরাটি টুনামেন্টেও আমার জন্যে আমাদের কলেজ চাম্পিয়ন হয়েছে এবার।সব স্যারেরা আমাকে নিয়ে গর্ব করে। আর সারা কলেজের মেয়েরাতো আমার সাথে কথা বলার জন্য পাগল।তবে আমি কারও সাথে মানে মেয়েদের সাথে কথা বলি না। আমি সব বিষয়ে পারদর্শী হলেও একটা বিষয়ে অনেক পিছিয়ে আছি আর তা হলো মেয়েদের কে খুব ভয় পায়। কলেজে কোন মেয়ের সাথে কথা বলিনা যদিও মেয়েরা আমার সাথে কথা বলার জন্য আমার পিছনে পিপড়ার মতো লাইন দিয়ে থাকে সবসময়। ।।আমাদের কলেজের প্রিন্সিপালের মেয়ে নাম মোহনা,আজ আমাদের কলেজেই ইংরেজির টিচার হিসেবে জয়েন করবে।তাকে আজ বরণ করা হবে। সেই জন্য আমাদের কলেজ ক্যাম্পাসে আজ একটা মিলন মেলা বসেছে মানে কলেজের সকল ছাত্র-ছাত্রী এবং সার, আমরা সবাই ক্যাম্পাসে অধীর আগ্রহে বসে আছি কখন নতুন ম্যামকে বরন ...