সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গল্প:- ভুল সবই ভুল -- ৪র্থ শেষ পর্ব





গল্প:- ভুল সবই ভুল

 
৪র্থ  শেষ পর্ব



দ্রুত বাসায় গেলাম আমি। গিয়ে দেখি বাহির থেকে দরজা লক করা। তাড়াহুড়ো করে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই দেখি আমান আর ফুয়াদ খেলনা নিয়ে খেলছে।আমায় দেখেই ফুয়াদ দৌড়ে এলো আমার কাছে। তারপর আমার শার্টের একটা কোন ধরে টেনে বললো,'মামা একটা আঙ্কেল এসেছিল। মাকে নাকি কী প্রয়োজনে সাথে করে নিয়ে গেছে। অনেক ভালো আঙ্কেলটা। মায়ের কাছে তো উনি বলেছেন তিনি নাকি পুলিশের লোক।দারোগা না কী যেন! কিন্তু পুলিশের ড্রেস তো পরেনি ওই আঙ্কেলটা! তাহলে পুলিশ হলো কী করে তিনি?


ব্যাপারটাতে সত্যিই ঘাপলা লাগছে।ভেতরটা আমার ভীষণ রকম কাঁপছে। কেন জানি মনে হচ্ছে তৈমুর মোটেও কোন ভালো মানুষ নয়।ও আমায় ভোগাবে।হয়তো যে ঠিকানা ও আমায় দিয়েছে ওই ঠিকানায় গেলে তাকে পাবো না। পরবর্তীতে ফোন করে সে বলবে,'মনসুর সাহেব, আপনি তো অনেক টাকা রোজগার করেন।মাসের সেলারি মোটা।তো বোনের জন্য দেখি কতো মায়া আপনার।অত লাগবে না। মাত্র পাঁচ ছ লাখ টাকা নিয়ে আসুন।মামলা টামলা খেয়ে আপনার হাতে তুলে দিবো একেবারে আপনার বোনকে।নয়তো একটু ভোগতে হবে আপনার। বুঝেছেন?
না না কী ভাবছি আমি!


এসব কিচ্ছু হবে না।
আমান হেসে হেসে আস্তে করে হেঁটে এলো আমার কাছে।ও সবার নাম ফুটিয়ে সুন্দর করে বলতে পারে না।সে তার ফুপিকে ডাকে সনু বলে। আমার কাছে এসে বললো,'বাপা,সনু নাই।সনু নাই!
আমানকে ঝট করে কোলে টেনে নিলাম আমি। তারপর ওর কপালে চুমু একে দিয়ে বললাম,'চলো তোমার সনুর কাছে যাই বাবা।



আমান আর ফুয়াদকে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি করে চলে গেলাম তৈমুরের দেয়া ঠিকানায়। ওখানে গিয়ে বড্ডো অবাক হলাম আমি। তৈমুর বাসার সামনেই অপেক্ষা করছিলো আমার জন্য।আমরা পৌঁছাতেই ও সালাম দিলো। তারপর ফুয়াদকে ওর কোলে তুলে নিয়ে বললো,'আসুন আমার পেছন পেছন।


এবার আরো ভয়টা বেড়ে গেলো আমার। আমাদের নিয়ে ও বিপদে ফেলবে না তো!ও কী সন্ত্রাশি কাজ কারবার করে নাকি?
আমার মাথা ঘুরছে প্রচন্ড রকম।



বাসার ভেতর ঢুকে হতবাক হয়ে গেলাম আমি।ও মা। ওখানে তো সবাই।মিতু,সন্ধি। আমাকে দেখে মিতু নিচ দিকে মাথা দিয়ে ফেললো।
আমান তার মাকে দেখেও খুব একটা মায়া দেখালো না।ডাকলোও না মা মা বলে। কিন্তু ফুপিকে দেখে ঠিক চিৎকার করে উঠলো।
'সনু সনু,সনু।'
সন্ধি উড়াল দিয়ে এসে আমানকে কোলে তুলে নিলো।



তৈমুর এবার বললো,'ভাইয়া,আমি অনেক সরি! একচ্যুয়েলি এভাবে ছাড়া আপনাদেরকে আমি কিছুতেই এক করতে পারতাম না।আর মিতু আপুর মামলাটা আমি নেইনি।কারণ উনার ফুপুর কথায় আমার সন্দেহ হয়েছিল।উনি একেকবার একেক ধরনের কথা বলছিলেন।মিতু আপু বলছিলো আপনার কোন দোষ নাই।দোষ সন্ধির। কিন্তু ওর ফুপু ওকে ধমক দিয়ে বলছিলো,দোষ সন্ধির চেয়ে আপনার বেশি। আপনি নাকি মিতু আপুকে দু দু বার খুন করতেও চেয়েছিলেন। কিন্তু মিতু আপু এই কথা মেনে নিচ্ছিলো না। এই জন্যই কেস টা নেইনি আমি।'


আমি তৈমুরের কথা শুনে হতবাক হয়ে গেলাম।
তৈমুর এবার বললো,'আসলে মিতু আপু এতো দিন যা করেছে সব করেছে ওর ফুপুর কথায়।ফুপুর পাতানো ফাঁদ সে বুঝতে পারেনি। কিন্তু আমি ঠিকই সব তথ্য বের করে ফেলেছি।
আমি চমকে উঠে বললাম,'কী তথ্য?


ওর ফুপু চেয়েছিল আপনার সাথে তার মেয়েকে বিয়ে দিতে। কিন্তু মিতু আপুর বাবা বলেছিলেন,তোর মেয়ের যোগ্যতা কম। পড়াশোনা কম।অত বড়ো চাকুরে ছেলে কী আর তোর মেয়েকে বিয়ে করবে।পরে সবকিছু ব্যস্তে যাবে। তারচেয়ে একটা আলাপই হোক।যেটা হবে।
মিতু আপুর ফুপু হয়তোবা সেদিন বিষয়টা মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু মনে মনে অন্য একটা দূর্বুদ্ধিও এঁটেছিলেন তিনি।আর সেই দূর্বিদ্ধিই হলো যেভাবেই হোক মিতু আপুর সংসার ভেঙ্গে দেয়া। এই জন্যই মিতু আপুকে ফুঁসলিয়ে তার ফুপু তার মাধ্যমে সন্ধির সাথে খারাপ ব্যবহার করাতেন।'
কথাগুলো শুনে আমার শরীর মর ঘাম দিয়ে উঠলো।আমি ভাবতেও পারছি না কথার ভেতর কতো কথাই লুকিয়ে থাকে।অথবা একটা সমস্যার ভেতর আরো কতো জটিল সমস্যা লুকিয়ে থাকে!



মিতু একপাশে দাঁড়িয়ে থেকে মুখে আঁচল চেপে কাঁদছে। তার সব ভুল ভেঙ্গে গেছে। দারোগা তৈমুর গাজী বললো,'ভাইয়া,মিতু আপু তার ভুল বুঝতে পেরেছে। এবং তার ফুপুর সাথে এ নিয়ে ঝগড়াও করেছে। বাড়িতে তার বাবা তার ফুপুকে অনেক কথা শুনিয়েছে। সাবধান করে দিয়েছে। আপনি এবার তাকে ক্ষমা করতে পারেন!


আমি কী বলবো বুঝতে পারছিলাম না।মিতুই তখন এগিয়ে এলো। আমার কাছে নয়। সন্ধির কাছে। সন্ধির একটা হাত ধরে কেঁদে কেঁদে সে বললো,'আমি ভুল করে ফেলেছি বোন তোমার সাথে!আমি জানি আমার ভুলের কোন ক্ষমায় হয় না। তবুও বোন বলে তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি!প্লিজ আমায় ফিরিয়ে দিও না!


সন্ধি তার ভাবীকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। কাঁদতে কাঁদতে সে বললো,'ছোট বোনের কাছে কী কেউ মাফ চায়! ভাবী,আমি কিছু মনে রাখিনি।সব ভুলে গেছি ভাবী আমি সবকিছু ভুলে গেছি!'
মিতু খুশিমনে এবার এসে দাঁড়ালো আমার পাশে।আমি ওর দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললাম।আর বললাম,'আমার কাছে মাফ চাইতে হবে না। সন্ধির সাথে সাথে আমিও আর কিছু মনে রাখিনি!'
সারা ঘরময় হাসির ফুল ফুটে উঠলো মুহূর্তে। ফুয়াদ আর আমান তারা দুই ভাই যে কী বুঝে হাসলো তা কেবল তারাই বলতে পারবে!



তৈমুরকে ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসছি আমরা ঠিক তখন তৈমুর ডাকলো মিতুকে।ওরা একান্তে একটু কথা বলতে চায়। আমরা বেরিয়ে এলাম বারান্দায়।তৈমুরের সাথে মিতুর কথা হলো। তারপর মিতুই ডাকলো আমাদের ঘরে।সে এবার আমায় ডেকে নিয়ে গেল বারান্দায়। তারপর বললো,'তৈমুরের স্ত্রী তো সন্তান যোগে মারা গিয়েছিল।চার বছর হয়ে গেছে তার স্ত্রীর মৃত্যুর। এরপর আর সে সংসার করেনি। ভেবেছিল কখনো বিয়েই করবে না। কিন্তু সন্ধি আর ফুয়াদকে দেখে তার খুব মায়া জন্মে গেছে। তোমার আর সন্ধির মত থাকলে সে সন্ধিকে বিয়ে করতে চায়!



আমি শুনে খুব খুশি হলাম। অবশেষে আমার বোনের একটা গতি হবে।আর তৈমুর তো খুব ভালো ছেলেও।এতে তো অমতের কিছু থাকতে পারে না।
আমি মিতুকে বললাম,'শুনো, তুমি সন্ধিকে জিজ্ঞেস করো এতে তার মতামত কী।ও রাজি থাকলেই আমি রাজি।


মিতু গেলো এবার সন্ধির কাছে। গিয়ে জিজ্ঞেস করলো ওকে।সন্ধি বললো,'ভাইয়া রাজি থাকলে আমিও রাজি!
মিতু তখন জোরে জোরে হেসে উঠে বললো,'তৈমুর এবার ডাকো কাজী।'



তৈমুর আর সন্ধির বিয়ে হয়ে গেল। ফুয়াদের এতো দিন কোন বাবা ডাকার মানুষ ছিল না। কিন্তু এবার থেকে বাবা ডাকার একটা মানুষ হলো।তৈমুরও কিন্তু খুব ভালো।সে তৈমুরকে নিজের সন্তানের মতো করেই আদর করে,ভালোবাসে।

      ‌   ___সমাপ্ত___
     
     
     
     
     
      

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

গল্প: ১০ দিনের বউ

গল্প: ১০ দিনের বউ সকালে দরজায় পত্রিকাওয়ালার ডাক শুনে ঘুম ভাঙলো.... ঘুম ঘুম চোখে ঘড়ির দিকে তাকালাম.... ৯:২৫ বাজে... OMG........সাড়ে ন'টা বেজে গেছে... তাড়াতাড়ি শরীরের উপর থেকে কাঁথাটা একপাশে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বাথরুমের দিকে দৌড় দিলাম.... যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দাঁতে ব্রাশ ঘষাতে লাগলাম... চোখে মুখে জল দিলাম... অতঃপর ফ্রেস টেস হয়ে রুমে এলাম... একদিকে শার্ট প্যান্ট পড়ে রেডি হচ্ছি.. একইসাথে অন্যদিকে মুখে পাউরুটি ঢুকাচ্ছি... ভালো করে খাওয়ারও সময় নেই.. উফফ অনেক দেরি হয়ে গেছে... শেষে তাড়াতাড়ি মুখের পাউরুটিটা গিলে টাই টা হাতে নিয়েই তাড়াতাড়ি দরজা লক করে বেরিয়ে পড়লাম.. দ্রুত হাটা ধরলাম... ইসস বাইকটা Repair করাতে দিয়েছি.. নাহলে বাইক দিয়েই যাওয়া যেত.. যাই হোক এখন এসব না ভেবে তাড়াতাড়ি বড় রাস্তায় গিয়ে একটা রিকশায় উঠলাম.... রিক্সায় বসে বসে টাই টা বেধে নিলাম.... আজকে অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে... ব্যাচেলর মানুষ.. ঢাকায় একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করি.. একটা মেসে একাই থাকি.. সকাল সকাল যে কেউ ঘুম থেকে ডেকে তুলবে সেরকম কেউও তো নেই... যাই হোক, এখন এসব ভাবলে চলবে না.. আমাদের অফিসের বস এমন...

{গল্প: হেড মাষ্টারের দুষ্টু মেয়ে }

  গল্প: হেড মাষ্টারের দুষ্টু মেয়ে জে এস সি পাশ করে আজ নতুন একটা স্কুলে ভর্তি হলাম অবশ্য আগে বাবা মার সাথে থাকতাম এখন ভাইয়ার কাছে আসলাম কারন স্কুল টা কাছে তাই | তো আজ প্রথম স্কুলে গেলাম ক্লাসে ঢুকবো তখনি দেখি কে যানো আমাকে লেং মেরে ফেলে দিছে তখন থাপ্পর দিতে যাবো তখনি দেখি এটা আর কেও না একটা মেয়ে দেখছি হাসছে আর মেয়ে টাও অপূরুপ সুন্দর মনে হলে এক মায়াবতী দূর এই সব চিন্তা করে লাভ নাই তো দেখি মেয়েটা বলতেছে- মেয়ে: এই ছেলে চোখে দেখিস না ? আমি অবাক হয়ে গেলাম কার প্রশ্ন কাকে বলার কথা সে আমাকে বলতেছে তখন আমি বল্লাম- আমি: আজব তো আপনি তো আমাকে লেং মেরে ফেলে দিছেন ? মেয়ে: এই তুই দেখছিস আমি তোকে ফেলে দিছি ? আমি: না আল্লাহ তো আমাকে কানা বানিয়ে দুনিয়া পাঠাইছে কিছু তো দেখি না | দেখি আমার কথা শুন হাসতেছে পরে বল্লো----> মেয়ে: এই তোর সাহস তো কম না বড়দের সাথে এইভাবে কথা বলস ? আমি: বড় মানে আর আপনি এইভাবে তুই তোকারি ভাবে কথা বলতেছেন কেনো? মেয়ে: কি তোর কত্ত বড় সাহস আমার সাথে এরকম ভাবে কথা বলিস তুই আমাকে চিনিস আমি কে ? আমি: কেনো আপনি কি প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে নাকি যে ভালোভাবে কথা...

গল্প::অবশেষে ম্যামের প্রেমে পড়লাম

   Bangla Love story গল্প:: অবশেষে ম্যামের প্রেমে পড়লা আমি রনি অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ি। আমাদের কলেজের সব স্যারেরা আমাকে ভালো ভাবেই চেনেন। কারনটা হলো আমি কলেজের টপার।লেখাপড়ায় যেমন ভালো খেলাধুলায় ও তেমন ভালো।তাছাড়া কলেজের যে কোন অনুষ্ঠানেও আমাকে উপস্থাপনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়।এমনকি আন্ত কেলেজ ক্রিকেট ও ক্যরাটি টুনামেন্টেও আমার জন্যে আমাদের কলেজ চাম্পিয়ন হয়েছে এবার।সব স্যারেরা আমাকে নিয়ে গর্ব করে। আর সারা কলেজের মেয়েরাতো আমার সাথে কথা বলার জন্য পাগল।তবে আমি কারও সাথে মানে মেয়েদের সাথে কথা বলি না। আমি সব বিষয়ে পারদর্শী হলেও একটা বিষয়ে অনেক পিছিয়ে আছি আর তা হলো মেয়েদের কে খুব ভয় পায়। কলেজে কোন মেয়ের সাথে কথা বলিনা যদিও মেয়েরা আমার সাথে কথা বলার জন্য আমার পিছনে পিপড়ার মতো লাইন দিয়ে থাকে সবসময়। ।।আমাদের কলেজের প্রিন্সিপালের মেয়ে নাম মোহনা,আজ আমাদের কলেজেই ইংরেজির টিচার হিসেবে জয়েন করবে।তাকে আজ বরণ করা হবে। সেই জন্য আমাদের কলেজ ক্যাম্পাসে আজ একটা মিলন মেলা বসেছে মানে কলেজের সকল ছাত্র-ছাত্রী এবং সার, আমরা সবাই ক্যাম্পাসে অধীর আগ্রহে বসে আছি কখন নতুন ম্যামকে বরন ...