গল্প:১০ দিনের বউ
(৫ম পার্ট)
ফোনটা রেখে দিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে নূপুরের কথা ভাবতে লাগলাম..
Specially সকালের kiss টার কথা...
এটার কথা ভাবছি আর মনে মনে হাসছি.
কেমন কেমন জানি লাগছে... অবশ্য এই প্রথম কোনো মেয়ের আদুরে স্পর্শ পেলাম... এমন এমন ফিলিংস হওয়ারই কথা...
তারপর আবার কাজে মন দিলাম
অফিসের কাজ শেষ করে রাসেল ভাইয়ের সাথে কথা বলতে বলতে বের হলাম...
-তো ভাই শুনলাম আপনার নাকি ট্রান্সফার হইসে? (রাসেল)
-হুম..... (আমি)
-কোথায়?
-সিলেটে...
-আরে বাহ.. নিজের শহরে?
-জ্বি ভাই
-তো যাচ্ছেন কবে?
-এই তো আর ৬/৭ দিন পর..
-ওও... ওখানে গিয়ে আমাদের খবর টবর নিয়েন কিন্তু.. (হেসে)
-অবশ্যই ভাই... (হেসে)
-এখন বাসায় ই তো যাচ্ছেন নাকি?
-হ্যা ভাই.. বাট তার আগে একটু গিফট শপে যাবো.
-কেন?
-এইতো একটা জিনিস কেনার ছিলো...
-কি জিনিস..
-দেখি কি কেন যায়....
-GF এর জন্য নাকি ভাই? (হেসে)
-কি যে বলেন ভাই... (হেসে)
-আরে হয় হয়... এতে হাসার কি..? আচ্ছা আমি যাই... দেরি হয়ে গেলো..
-আচ্ছা ভাই..
তারপর আমি একটা গিফট শপে গেলাম.....
গিয়ে বেশ কিউট দেখে বড় মতো একটা Teddy Bear কিনলাম...
কিনে বাসায় ফিরলাম...
বাসার গেইটের ভেতর ঢুকতেই নিঃশ্বাস নিয়ে দেখি আহহহ্ কত্তো Sweet Smell আসছে রান্না থেকে...
নিশ্চই মালিকের বাসায় আজ স্পেশাল কিছু রান্না হচ্ছে.....
ইইইসসসস..
আমাদের মনে হয় আজো বাইরেই খেতে হবে.... শুধু আজ না, প্রতিদিন...
যাই হোক, উপরে উঠে আমাদের রুমের দরজা নক করতে গিয়ে দেখি দরজা খোলাই আছে.....
দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলাম...
ঘরে ঢুকতেই রান্নার সেই সুন্দর smell টা আরো বেশি করে পেলাম যেন..
এদিক সেদিক তাকালাম.. কিন্তু নূপুরকে তো দেখতে পাচ্ছি না...
ভেবেছিলাম নূপুরকে টেডিটা সারপ্রাইজ দেবো.
কিন্তু নূপুর কই?
রান্নাঘরে কিছু একটা আওয়াজ পেলাম...ও তাহলে নূপুর হয়তো রান্নাঘরেই আছে...
চুপি চুপি টেডিটাকে রেখে আমি রান্নাঘরে গেলাম.....
রান্নাঘরে গিয়ে তো আমি নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গেলাম....
নূপুর খুব সুন্দর করে আজকে শাড়ি পড়েছে.... উউফফফ নূপুরকে দেখতে এত্ত সুন্দর লাগছে কি বলবো....
আর রান্নাঘরে এতো সুস্বাদু খাবার...! দেখেই তো জিভে জল চলে আসে.
যাক তাহলে আজ রাতে বেশ তৃপ্তি করে খাওয়া যাবে...
আমি খাবারগুলোর কাছে গিয়ে দেখতে দেখতে বললাম,
-OMG..........এতসব আইটেম কে রান্না করলো?? (আমি)
-তোর বউ...... (নূপুর)
-ওয়াও.... কত্তো সুন্দর স্মেল আসছে রে..... (নিঃশ্বাস নিয়ে)
-কে রাঁধলো দেখতে হবে না...!
-এই তুই না বলেছিলি রান্না করতে জানিস না.
-হিহি.... মিথ্যে বলেছিলাম বাইরে খাওয়ার জন্য..
-সত্যিই তুই রান্না করেছিস তো নাকি অন্য কিছু?
-আমিই রে বাবা... ভাবলাম তোকে সারপ্রাইজ দেবো তাই.....
-ও তুই ই রেঁধেছিস? তার মানে দুনিয়ার বাজে রান্না খেতে হবে আজ...
-কিহহহহ বললি? শয়তান যা তোর খাওয়া লাগবে না...
-আরে আরে কেন?
-বাজে খাবার খেতে হবে না তোর.. যা বাইরের ভালো খাবার খেয়ে আয়...
-না না বাড়ির বউ এর রান্না রেখে কি বাইরে খাওয়া যায়? বাজে হোক বা মহাবাজে, খেতে তো হবেই..
-যা সর্ তোর খেতে হবে না....
-অলে লে... আমাল বউতা লাগ কলে কেন? (বাচ্চাদের মতো বললাম)
-যা আর আধিখ্যেতা দেখাতে হবে না...
-আচ্ছা শোন্ না শাড়িটাও কি সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য...?
-কেন তুই কি এতেও সারপ্রাইজড হয়েছিস নাকি..?
-হুম্মম্মম্ম.......
-আসলে আমি তো শাড়ি পড়িনা... তো আন্টি বলছিলো বউকে শাড়ি ছাড়া মানায় না... তাই ভাবলাম কয়েকদিন ই তো.. পরে নিই...
-ওও ভালোই করেছিস..তোকে এখন একদম বউ বউ লাগছে... (গাল টেনে)
-আউউ লাগছে.....
-হিহি....
-শয়তানি করলে কিন্তু তোর খাওয়া বাদ...
-এহে না না... এই খাবার গুলো থেকে বঞ্চিত করিস না..
-আমার কথা না শুনলে বঞ্চিত করবোই....
-ধ্যতত তোর শুধু ব্ল্যাকমেইল....
-হিহিই
-আচ্ছা রান্না শেষ হয় নি?
-না...
-তাড়াতাড়ি কর্ না... খাবার দেখে আর সুগন্ধেই তো ক্ষুধাটা আরো বেশি বেড়ে গেলো...
-তাই?
-হুম্মম.. মনে হচ্ছে এখনি খেয়ে ফেলি..
-ঐ না তুই গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে আয়..
-হুম যাবো তো...
-হ্যা যা
-আচ্ছা তার আগে তুই একটু রুমে চল্ তো.
-কেন?
-আরে চল্ না.... (ওকে জোর করে নিতে নিতে)
-আচ্ছা আচ্ছা যাচ্ছি...
-চল্
-কেন বলবি তো..
-যা আগে...
জিজ্ঞেস করতে করতে রুমে এলো... রুমে গিয়েই ওর টেডিটার দিকে নজর পড়লো....
-ওয়াও..... এত্তো কিউট টেডি বিয়ার..
দৌড়ে গিয়ে নূপুর টেডি টাকে কোলে নিয়ে জড়িয় ধরলো...
-ভালো লেগেছে???? (আমি)
-হুম্মম্ম অন্নেএএএক্কক.....
-এটার তো মনে হয়ে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে যে শক্তে ধরেছিস...
-না... আচ্ছা তুই কীভাবে জানলি আমার টেডি ভালো লাগে?
-আরে তোর কি ভালো লাগে সেটা আমি জানবো না তো কে জানবে..?
-হুম্মম্মম্মম... ভালোই করেছিস
-হ্যা এখন এটাকে নিয়ে রাতে ঘুমাবি.. আর একা একা লাগবে না...
-হুম্মম্ম
-আচ্ছা এখন যা গিয়ে তাড়াতাড়ি রান্না কর্...
-হুম তুই ও গিয়ে ফ্রেস হ....
-হ্যা যাচ্ছি..
-হুম...
তারপর নূপুর আবার রান্না ঘরে চলে গেলো আর আমি ফ্রেস হতে গেলাম.
ফ্রেস হয়ে এসে একটু শুয়ে আছি, একটু পর নূপুর ডাক দিলো..
-ঐ হৃদু খেতে আয়...
-হয়ে গেছে?
-হ্যা আয়
-আসছি
খেতে গিয়ে তো আমার পেটে যেমন আরো বেশি ইঁদুর দৌড়াতে লাগলো উফফ এতো ভালো ভালো আইটেম.
. দেখেই হামলে পড়তে ইচ্ছে করছে...
-ঐ তুই এসব রান্না কোত্থেকে শিখলি রে? (আমি)
-মায়ের কাছ থেকে... (নূপুর)
-তো আগে কখনো রান্না করে খাওয়াস নি কেন?
-দরকার পড়ে নি তাই..
-ধুর খাওয়ার জন্য আবার কোনো দরকার লাগে নি?
-হ লাগে...
-ভালোই হলো...
-কি?
- এই কয়েকদিন ফ্রিতে বেশ ভালো ভালো খাওয়ার পাওয়া যাবে... হিহি...
-তুই তো শুধু ফ্রি পাওয়ার চিন্তা করিস...
-হ.... ফ্রিতে ১০ দিনের জন্য বউও পেয়ে গেছি দেখ...
-এএএহ...
-আচ্ছা দে তাড়াতাড়ি খেতে দে.... আর তর সইছে না...
- তুই তো দেখছি বড্ড পেটুক...
-পেটুকের কি হলো এতে? এরকম বাসার রান্না করা খাবার সেই কবে খেয়েছিলাম..
নাহলে তো মেস বা বুয়ার রান্না খেতে হতো... এসবে কি আর সাধ মেটে? বাসার খাবারের ব্যাপার সেপারই আলাদা....
-আচ্ছা আচ্ছা বুঝলাম.. এখন খেয়ে নে...
-হুম....
রাতে বেশ ভালো করেই খাওয়া দাওয়া হলো....
আহ নূপুর যে এতো ভালো রান্না করতে পারে আগে জানা ছিলো না....
.
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময়...
-হৃদু রে... Teddy টা যে কিউট.... তোকে যে কি বলবো.. (Teddy টাকে জড়িয়ে ধরে)
-কে এনেছে দেখতে হবে তো... (আমি)
-এএহ... থাম থাম.. সুযোগ পেলেই নিজের প্রশংসা শুরু করে দিস...
-হিহিহি নে এখন ঘুমা...
-হ্যা তুইও ঘুমা....
-হুম...
-আর শোন্... আমার দিকে খেয়াল রাখতে ভুলিস না...
-কেন? আজ তো এই টেডিটা আছে তোর সাথে...
-ধ্যত... এটা কি আমার খেয়াল রাখতে পারবে?
-ওও..
-হুম... শুধু ফাঁকি দেওয়ার চিন্তা...!
-কিসের ফাঁকি?
-কিছু না.. দেখি শুয়ে পড়্ আর আমার দিকে.... (কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে)
-হ্যা বুঝেছি বুঝেছি... গুড নাইট...
-হুম
নূপুর Teddy টাকে শক্তে জড়িয়ে ধরে হাসি মুখে চোখ বুজে শুয়ে পড়লো.
আমিও ডিম লাইটটা অন করে সোফায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম...
-কিরে খেয়াল আমার দিক ফিরে শুয়েছিস তো? (নূপুর)
-হ রে মা হ... ঘুমা তুই. (আমি)
-হুম
মাঝ রাতে হঠাৎ কিছু শুনে ঘুম ভেঙে গেলো....
ঘুম ভাঙার পর টের পেলাম বাইরে বাজ পড়ছে... বৃষ্টি হবে Sure.
-এএএ হৃদু.... (নূপুর)
-কি রে জেগে কেন? (আমি)
-ঐ আমার না ঘুম আসছে না....
-কেন কি হয়েছে...
নূপুর আমি দুজনেই ঘুম ঘুম সুরে কথা বলছি...
-আমার ভয় করছে... বাইরে দেখ্ বড় বড় বাজ পড়ছে.. কারেন্ট ও নেই..
-কানে তুলো দিয়ে ঘুমিয়ে পড়্
-এই তুই খাটে এসে ঘুমা না...
-তোর কাছে?
-তুই একপাশে ঘুমাবি আমি একপাশে ঘুমাবো.... মাঝখানে টেডি
-দেখি ফাযলামি না করে ঘুমা তো....
-এ সিরিয়াসলি ভয় করছে....
প্লিজ তুই এখানে এসে ঘুমা...
-দেখি কথা না বলে ঘুমা তো... (বিরক্ত হয়ে)
-তোর পায়ে ধরি... এখানে এসে ঘুমাই যা
-সেদিন কেন ঘুমাতে দিস নি?
-ঐ শুধু আজকেই...
-না ঘুমা...
-প্লিজ ভাই এখানে এসে ঘুমা....
'ভাই' ডাকটা শুনেই আমি ঘুম ছেড়ে সোফা থেকে লাফ দিয়ে উঠে পড়লাম.
-ঐ ঐ ভাই ডাকবি না একদম..... (খাটের দিকে গিয়ে)
-তাহলে ঘুমা এখানে.... (ঘুমের মধ্যে ওর পাশে ঘুমানোর ইশারা দিলো)
-হুম ঘুমাচ্ছি
-হুম
আমি নূপুরের পাশে শুয়ে পড়লাম....
বাইরে বৃষ্টি পড়ছে... হঠাৎ আচমকা একটা জোরে বাজ পড়লো.....
নূপুর একটা চিৎকার দিয়ে টেডিকে সরিয়ে দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো.....
হঠাৎ করে এভাবে জড়িয়ে ধরায় আমি একদম চমকে উঠলাম...
নূপুরের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি ও ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে আর ওর চোখের পাতাগুলো খুব কাঁপছে....
বাইরে আবার একটা বাজের শব্দ হলো...
নূপুর এবার আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো....
একদম গুটিসুটি হয়ে নূপুর আমার বুকের মধ্যে লুকিয়ে গেলো....
চোখ বন্ধ করেই নূপুর কাপা কাপা গলায় বললো,
-হৃদুউউ... ভয় করতেছে..... (নূপুর)
-আরে এসব কিচ্ছু না... আমি আছি তো.. তুই ঘুমা..... (আমি)
নূপুর আমাকে আরেকটু ভালো করে জড়িয়ে ধরলো...
এবার আমিও নূপুরকে এক হাত দিয়ে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরলাম...
অন্য হাত দিয়ে নূপুরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম.....
কিছুক্ষণের মধ্যেই নূপুর ঘুমিয়ে পড়লো....
ওর ঘুমন্ত চেহারাটা দেখে আবার আমি হাসি পেয়ে গেলো....
ইসশ সত্যিই পিচ্চিদের মতো.. কিছু একটা তো আছে নূপুরের মধ্যে, যা এতো দিন আমি খেয়াল করিনি.
আর এটাই এখন আমার বার বার feel করতে ভালো লাগে...
আমিও নূপুরকে দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম টের পাই নি..
(৫ম পার্ট)
ফোনটা রেখে দিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে নূপুরের কথা ভাবতে লাগলাম..
Specially সকালের kiss টার কথা...
এটার কথা ভাবছি আর মনে মনে হাসছি.
কেমন কেমন জানি লাগছে... অবশ্য এই প্রথম কোনো মেয়ের আদুরে স্পর্শ পেলাম... এমন এমন ফিলিংস হওয়ারই কথা...
তারপর আবার কাজে মন দিলাম
অফিসের কাজ শেষ করে রাসেল ভাইয়ের সাথে কথা বলতে বলতে বের হলাম...
-তো ভাই শুনলাম আপনার নাকি ট্রান্সফার হইসে? (রাসেল)
-হুম..... (আমি)
-কোথায়?
-সিলেটে...
-আরে বাহ.. নিজের শহরে?
-জ্বি ভাই
-তো যাচ্ছেন কবে?
-এই তো আর ৬/৭ দিন পর..
-ওও... ওখানে গিয়ে আমাদের খবর টবর নিয়েন কিন্তু.. (হেসে)
-অবশ্যই ভাই... (হেসে)
-এখন বাসায় ই তো যাচ্ছেন নাকি?
-হ্যা ভাই.. বাট তার আগে একটু গিফট শপে যাবো.
-কেন?
-এইতো একটা জিনিস কেনার ছিলো...
-কি জিনিস..
-দেখি কি কেন যায়....
-GF এর জন্য নাকি ভাই? (হেসে)
-কি যে বলেন ভাই... (হেসে)
-আরে হয় হয়... এতে হাসার কি..? আচ্ছা আমি যাই... দেরি হয়ে গেলো..
-আচ্ছা ভাই..
তারপর আমি একটা গিফট শপে গেলাম.....
গিয়ে বেশ কিউট দেখে বড় মতো একটা Teddy Bear কিনলাম...
কিনে বাসায় ফিরলাম...
বাসার গেইটের ভেতর ঢুকতেই নিঃশ্বাস নিয়ে দেখি আহহহ্ কত্তো Sweet Smell আসছে রান্না থেকে...
নিশ্চই মালিকের বাসায় আজ স্পেশাল কিছু রান্না হচ্ছে.....
ইইইসসসস..
আমাদের মনে হয় আজো বাইরেই খেতে হবে.... শুধু আজ না, প্রতিদিন...
যাই হোক, উপরে উঠে আমাদের রুমের দরজা নক করতে গিয়ে দেখি দরজা খোলাই আছে.....
দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলাম...
ঘরে ঢুকতেই রান্নার সেই সুন্দর smell টা আরো বেশি করে পেলাম যেন..
এদিক সেদিক তাকালাম.. কিন্তু নূপুরকে তো দেখতে পাচ্ছি না...
ভেবেছিলাম নূপুরকে টেডিটা সারপ্রাইজ দেবো.
কিন্তু নূপুর কই?
রান্নাঘরে কিছু একটা আওয়াজ পেলাম...ও তাহলে নূপুর হয়তো রান্নাঘরেই আছে...
চুপি চুপি টেডিটাকে রেখে আমি রান্নাঘরে গেলাম.....
রান্নাঘরে গিয়ে তো আমি নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গেলাম....
নূপুর খুব সুন্দর করে আজকে শাড়ি পড়েছে.... উউফফফ নূপুরকে দেখতে এত্ত সুন্দর লাগছে কি বলবো....
আর রান্নাঘরে এতো সুস্বাদু খাবার...! দেখেই তো জিভে জল চলে আসে.
যাক তাহলে আজ রাতে বেশ তৃপ্তি করে খাওয়া যাবে...
আমি খাবারগুলোর কাছে গিয়ে দেখতে দেখতে বললাম,
-OMG..........এতসব আইটেম কে রান্না করলো?? (আমি)
-তোর বউ...... (নূপুর)
-ওয়াও.... কত্তো সুন্দর স্মেল আসছে রে..... (নিঃশ্বাস নিয়ে)
-কে রাঁধলো দেখতে হবে না...!
-এই তুই না বলেছিলি রান্না করতে জানিস না.
-হিহি.... মিথ্যে বলেছিলাম বাইরে খাওয়ার জন্য..
-সত্যিই তুই রান্না করেছিস তো নাকি অন্য কিছু?
-আমিই রে বাবা... ভাবলাম তোকে সারপ্রাইজ দেবো তাই.....
-ও তুই ই রেঁধেছিস? তার মানে দুনিয়ার বাজে রান্না খেতে হবে আজ...
-কিহহহহ বললি? শয়তান যা তোর খাওয়া লাগবে না...
-আরে আরে কেন?
-বাজে খাবার খেতে হবে না তোর.. যা বাইরের ভালো খাবার খেয়ে আয়...
-না না বাড়ির বউ এর রান্না রেখে কি বাইরে খাওয়া যায়? বাজে হোক বা মহাবাজে, খেতে তো হবেই..
-যা সর্ তোর খেতে হবে না....
-অলে লে... আমাল বউতা লাগ কলে কেন? (বাচ্চাদের মতো বললাম)
-যা আর আধিখ্যেতা দেখাতে হবে না...
-আচ্ছা শোন্ না শাড়িটাও কি সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য...?
-কেন তুই কি এতেও সারপ্রাইজড হয়েছিস নাকি..?
-হুম্মম্মম্ম.......
-আসলে আমি তো শাড়ি পড়িনা... তো আন্টি বলছিলো বউকে শাড়ি ছাড়া মানায় না... তাই ভাবলাম কয়েকদিন ই তো.. পরে নিই...
-ওও ভালোই করেছিস..তোকে এখন একদম বউ বউ লাগছে... (গাল টেনে)
-আউউ লাগছে.....
-হিহি....
-শয়তানি করলে কিন্তু তোর খাওয়া বাদ...
-এহে না না... এই খাবার গুলো থেকে বঞ্চিত করিস না..
-আমার কথা না শুনলে বঞ্চিত করবোই....
-ধ্যতত তোর শুধু ব্ল্যাকমেইল....
-হিহিই
-আচ্ছা রান্না শেষ হয় নি?
-না...
-তাড়াতাড়ি কর্ না... খাবার দেখে আর সুগন্ধেই তো ক্ষুধাটা আরো বেশি বেড়ে গেলো...
-তাই?
-হুম্মম.. মনে হচ্ছে এখনি খেয়ে ফেলি..
-ঐ না তুই গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে আয়..
-হুম যাবো তো...
-হ্যা যা
-আচ্ছা তার আগে তুই একটু রুমে চল্ তো.
-কেন?
-আরে চল্ না.... (ওকে জোর করে নিতে নিতে)
-আচ্ছা আচ্ছা যাচ্ছি...
-চল্
-কেন বলবি তো..
-যা আগে...
জিজ্ঞেস করতে করতে রুমে এলো... রুমে গিয়েই ওর টেডিটার দিকে নজর পড়লো....
-ওয়াও..... এত্তো কিউট টেডি বিয়ার..
দৌড়ে গিয়ে নূপুর টেডি টাকে কোলে নিয়ে জড়িয় ধরলো...
-ভালো লেগেছে???? (আমি)
-হুম্মম্ম অন্নেএএএক্কক.....
-এটার তো মনে হয়ে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে যে শক্তে ধরেছিস...
-না... আচ্ছা তুই কীভাবে জানলি আমার টেডি ভালো লাগে?
-আরে তোর কি ভালো লাগে সেটা আমি জানবো না তো কে জানবে..?
-হুম্মম্মম্মম... ভালোই করেছিস
-হ্যা এখন এটাকে নিয়ে রাতে ঘুমাবি.. আর একা একা লাগবে না...
-হুম্মম্ম
-আচ্ছা এখন যা গিয়ে তাড়াতাড়ি রান্না কর্...
-হুম তুই ও গিয়ে ফ্রেস হ....
-হ্যা যাচ্ছি..
-হুম...
তারপর নূপুর আবার রান্না ঘরে চলে গেলো আর আমি ফ্রেস হতে গেলাম.
ফ্রেস হয়ে এসে একটু শুয়ে আছি, একটু পর নূপুর ডাক দিলো..
-ঐ হৃদু খেতে আয়...
-হয়ে গেছে?
-হ্যা আয়
-আসছি
খেতে গিয়ে তো আমার পেটে যেমন আরো বেশি ইঁদুর দৌড়াতে লাগলো উফফ এতো ভালো ভালো আইটেম.
. দেখেই হামলে পড়তে ইচ্ছে করছে...
-ঐ তুই এসব রান্না কোত্থেকে শিখলি রে? (আমি)
-মায়ের কাছ থেকে... (নূপুর)
-তো আগে কখনো রান্না করে খাওয়াস নি কেন?
-দরকার পড়ে নি তাই..
-ধুর খাওয়ার জন্য আবার কোনো দরকার লাগে নি?
-হ লাগে...
-ভালোই হলো...
-কি?
- এই কয়েকদিন ফ্রিতে বেশ ভালো ভালো খাওয়ার পাওয়া যাবে... হিহি...
-তুই তো শুধু ফ্রি পাওয়ার চিন্তা করিস...
-হ.... ফ্রিতে ১০ দিনের জন্য বউও পেয়ে গেছি দেখ...
-এএএহ...
-আচ্ছা দে তাড়াতাড়ি খেতে দে.... আর তর সইছে না...
- তুই তো দেখছি বড্ড পেটুক...
-পেটুকের কি হলো এতে? এরকম বাসার রান্না করা খাবার সেই কবে খেয়েছিলাম..
নাহলে তো মেস বা বুয়ার রান্না খেতে হতো... এসবে কি আর সাধ মেটে? বাসার খাবারের ব্যাপার সেপারই আলাদা....
-আচ্ছা আচ্ছা বুঝলাম.. এখন খেয়ে নে...
-হুম....
রাতে বেশ ভালো করেই খাওয়া দাওয়া হলো....
আহ নূপুর যে এতো ভালো রান্না করতে পারে আগে জানা ছিলো না....
.
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময়...
-হৃদু রে... Teddy টা যে কিউট.... তোকে যে কি বলবো.. (Teddy টাকে জড়িয়ে ধরে)
-কে এনেছে দেখতে হবে তো... (আমি)
-এএহ... থাম থাম.. সুযোগ পেলেই নিজের প্রশংসা শুরু করে দিস...
-হিহিহি নে এখন ঘুমা...
-হ্যা তুইও ঘুমা....
-হুম...
-আর শোন্... আমার দিকে খেয়াল রাখতে ভুলিস না...
-কেন? আজ তো এই টেডিটা আছে তোর সাথে...
-ধ্যত... এটা কি আমার খেয়াল রাখতে পারবে?
-ওও..
-হুম... শুধু ফাঁকি দেওয়ার চিন্তা...!
-কিসের ফাঁকি?
-কিছু না.. দেখি শুয়ে পড়্ আর আমার দিকে.... (কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে)
-হ্যা বুঝেছি বুঝেছি... গুড নাইট...
-হুম
নূপুর Teddy টাকে শক্তে জড়িয়ে ধরে হাসি মুখে চোখ বুজে শুয়ে পড়লো.
আমিও ডিম লাইটটা অন করে সোফায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম...
-কিরে খেয়াল আমার দিক ফিরে শুয়েছিস তো? (নূপুর)
-হ রে মা হ... ঘুমা তুই. (আমি)
-হুম
মাঝ রাতে হঠাৎ কিছু শুনে ঘুম ভেঙে গেলো....
ঘুম ভাঙার পর টের পেলাম বাইরে বাজ পড়ছে... বৃষ্টি হবে Sure.
-এএএ হৃদু.... (নূপুর)
-কি রে জেগে কেন? (আমি)
-ঐ আমার না ঘুম আসছে না....
-কেন কি হয়েছে...
নূপুর আমি দুজনেই ঘুম ঘুম সুরে কথা বলছি...
-আমার ভয় করছে... বাইরে দেখ্ বড় বড় বাজ পড়ছে.. কারেন্ট ও নেই..
-কানে তুলো দিয়ে ঘুমিয়ে পড়্
-এই তুই খাটে এসে ঘুমা না...
-তোর কাছে?
-তুই একপাশে ঘুমাবি আমি একপাশে ঘুমাবো.... মাঝখানে টেডি
-দেখি ফাযলামি না করে ঘুমা তো....
-এ সিরিয়াসলি ভয় করছে....
প্লিজ তুই এখানে এসে ঘুমা...
-দেখি কথা না বলে ঘুমা তো... (বিরক্ত হয়ে)
-তোর পায়ে ধরি... এখানে এসে ঘুমাই যা
-সেদিন কেন ঘুমাতে দিস নি?
-ঐ শুধু আজকেই...
-না ঘুমা...
-প্লিজ ভাই এখানে এসে ঘুমা....
'ভাই' ডাকটা শুনেই আমি ঘুম ছেড়ে সোফা থেকে লাফ দিয়ে উঠে পড়লাম.
-ঐ ঐ ভাই ডাকবি না একদম..... (খাটের দিকে গিয়ে)
-তাহলে ঘুমা এখানে.... (ঘুমের মধ্যে ওর পাশে ঘুমানোর ইশারা দিলো)
-হুম ঘুমাচ্ছি
-হুম
আমি নূপুরের পাশে শুয়ে পড়লাম....
বাইরে বৃষ্টি পড়ছে... হঠাৎ আচমকা একটা জোরে বাজ পড়লো.....
নূপুর একটা চিৎকার দিয়ে টেডিকে সরিয়ে দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো.....
হঠাৎ করে এভাবে জড়িয়ে ধরায় আমি একদম চমকে উঠলাম...
নূপুরের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি ও ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে আর ওর চোখের পাতাগুলো খুব কাঁপছে....
বাইরে আবার একটা বাজের শব্দ হলো...
নূপুর এবার আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো....
একদম গুটিসুটি হয়ে নূপুর আমার বুকের মধ্যে লুকিয়ে গেলো....
চোখ বন্ধ করেই নূপুর কাপা কাপা গলায় বললো,
-হৃদুউউ... ভয় করতেছে..... (নূপুর)
-আরে এসব কিচ্ছু না... আমি আছি তো.. তুই ঘুমা..... (আমি)
নূপুর আমাকে আরেকটু ভালো করে জড়িয়ে ধরলো...
এবার আমিও নূপুরকে এক হাত দিয়ে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরলাম...
অন্য হাত দিয়ে নূপুরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম.....
কিছুক্ষণের মধ্যেই নূপুর ঘুমিয়ে পড়লো....
ওর ঘুমন্ত চেহারাটা দেখে আবার আমি হাসি পেয়ে গেলো....
ইসশ সত্যিই পিচ্চিদের মতো.. কিছু একটা তো আছে নূপুরের মধ্যে, যা এতো দিন আমি খেয়াল করিনি.
আর এটাই এখন আমার বার বার feel করতে ভালো লাগে...
আমিও নূপুরকে দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম টের পাই নি..
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন