গল্প: ১০ দিনের বউ
(১ম পার্ট)
সকালে দরজায় পত্রিকাওয়ালার ডাক শুনে ঘুম ভাঙলো....
ঘুম ঘুম চোখে ঘড়ির দিকে তাকালাম.... ৯:২৫ বাজে...
OMG........সাড়ে ন'টা বেজে গেছে...
তাড়াতাড়ি শরীরের উপর থেকে কাঁথাটা একপাশে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বাথরুমের দিকে দৌড় দিলাম....
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দাঁতে ব্রাশ ঘষাতে লাগলাম... চোখে মুখে জল দিলাম...
অতঃপর ফ্রেস টেস হয়ে রুমে এলাম...
একদিকে শার্ট প্যান্ট পড়ে রেডি হচ্ছি.. একইসাথে অন্যদিকে মুখে পাউরুটি ঢুকাচ্ছি... ভালো করে খাওয়ারও সময় নেই.. উফফ অনেক দেরি হয়ে গেছে...
শেষে তাড়াতাড়ি মুখের পাউরুটিটা গিলে টাই টা হাতে নিয়েই তাড়াতাড়ি দরজা লক করে বেরিয়ে পড়লাম..
দ্রুত হাটা ধরলাম... ইসস বাইকটা Repair করাতে দিয়েছি.. নাহলে বাইক দিয়েই যাওয়া যেত..
যাই হোক এখন এসব না ভেবে তাড়াতাড়ি বড় রাস্তায় গিয়ে একটা রিকশায় উঠলাম....
রিক্সায় বসে বসে টাই টা বেধে নিলাম....
আজকে অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে... ব্যাচেলর মানুষ.. ঢাকায় একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করি.. একটা মেসে একাই থাকি.. সকাল সকাল যে কেউ ঘুম থেকে ডেকে তুলবে সেরকম কেউও তো নেই...
যাই হোক, এখন এসব ভাবলে চলবে না.. আমাদের অফিসের বস এমনিতে ভালো হলেও Late করে অফিসে যাওয়া তিনি একদম পছন্দ করেন না...
ধ্যত রাস্তায় এতো জ্যাম কেন! এমনিতেই দেরি হচ্ছে...
মাথা বাড়িয়ে দেখলাম অনেক লম্বা জ্যাম.. না এতো লম্বা জ্যাম তাড়াতাড়ি হালকা হওয়ার নয়, তাই ওখানেই রিকশা থেকে নেমে অফিসের জন্য ছুট লাগালাম...
এহেরে ভাগ্যটা খারাপ মনে হয়... অফিসে ঢুকেই বসের সামনে পড়ে গেলাম..
-Good Morning Sir.. (আমি)
-Yeah Good Morning... তো Mr. হৃদয় আজ এতো Late কেন? (Boss)
-Extremely Sorry Sir.. আশা করি আর হবে না...
-It's ok. Go to the Project room.
-Ok sir.
Boss কে আজ বেশ খুশি খুশি দেখাচ্ছে... ব্যাপার কি কিছুই বুঝলাম না..!
Lunch Time এ আমার এক কলিগ ওর Tiffin Carrier নিয়ে আমার পাশে এসে বসলো....
- হৃদয় ভাই চলুন Lunch সেরে ফেলি.. (রাসেল)
-আপনি করেন ভাই... (আমি)
-আপনি করবেন না? আজ Lunch এ কি আনলেন?
-কি যে বলেন ভাই.. আমার কি আপনার মতো বউ আছে নাকি যে প্রতিদিন Lunch Pack করে দেবে...
-মা নাই?
-হ্যা আছে তো.. কিন্তু তারা তো সিলেট থাকেন... ব্যাচেলর মানুষ, মেসে থাকি.. বুঝেন ই তো..
-হাহাহাহা হ্যা ভাই বুঝলাম...
-হাইসেন না ভাই... এরকম সময় আপনিও পার করে এসেছেন....
-হ্যা রে ভাই... তো বিয়ে-শাদি কবে করছেন?
-ওসব দেরি আছে ভাই...
- হাহাহা তাই
-হুম ভাই
-তো আজ Lunch করবেন না নাকি?
-না ভাই.. অফিস আসতে দেরি হয়ে গেছিলো তাই কিছু আনতে পারি নাই...
-আরে তাতে কি? আমি এনেছি তো... চলুন শেয়ার করি...
-আরে না না ভাই থাক...
-কেন আমার সাথে শেয়ার করতে সমস্যা হবে নাকি?
-না না ভাই তেমন কিছু না
-তাহলে চলুন সেরে ফেলি Lunch টা...
-আচ্ছা ঠিক আছে... (হাসি দিয়ে)
আমি আর রাসেল Lunch করছিলাম... এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো...
বাম হাত দিয়ে Call টা Receive করলাম...
-Hello... (আমি)
-আমার গুলুগুলুটা কেমন আছে রে? (নূপুর)
-ভালোই আছে... আর গুলুগুলুর দুষ্টুটা কেমন আছে?
-হ্যা ভালোই...
-তো কি করছিস?
-এই তো Lunch করতেছি.... You?
-আমি খেয়ে উঠলাম মাত্র...
-ওওও.....
-তো Lunch এ কি নিলি আজ?
-কিছু না.. এক কলিগের টিফিনে ভাগ বসাচ্ছি.. হিহি..
-ভালোই তো... নিজে কিছু নিস নাই কেন?
-আজকে অফিসে আসতে দেরি হয়ে গেছিলো তাই......
-কেন দেরি হলো....
-রাতে ঘুমাতে দেরি হয়ে গেছিলো...
-কেন? রাত করে মেসে ফেরা হয়েছিলো বুঝি?
-আরে না না...
-ব্যাচেলর মানুষ তো তুই.. বুঝি তো..
-আরে তাড়াতাড়িই শুয়ে পড়ছিলাম কিন্তু Load Shedding এর জন্য দেরিতে চোখ লাগলো....
-আচ্ছা আচ্ছা নে এখন Lunch কর্...
-হুম
- অফিস থেকে কখন মেসে ফিরবি?
- সন্ধ্যার পর...
-আচ্ছা এখন রাখছি..
-আচ্ছা..
ফোনটা রাখার পর...
-কি ভাই GF নাকি? (রাসেল)
-আরে না না ভাই...
-কথা শুনে তো Gf Gf ই লাগলো
-আরে না ভাই ও আমার খুব ভালো ফ্রেন্ড.. বেস্ট ফ্রেন্ড বলতে পারেন...
-মেয়ে ফ্রেন্ড?
-হুম...
-হাহাহাহা আমি আর আপনার ভাবিও কিন্তু বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম.. কি বলতে চাইছি বুঝতে পারছেন?
-হাহাহাহাহা হুম বুঝলাম....
-আচ্ছা আমার খাওয়া তো শেষ...
-হ্যা আমারো ভাই....
-আমার এখন একটা মিটিং আছে.. আমি উঠি ভাই..
-আচ্ছা ভাই... Thanks For the lunch... (হ্যান্ডশেক করে)
-ওকে ভাই..
সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফেরার আগে পিয়ন এসে খবর দিলো বস নাকি ডেকে পাঠিয়েছে...
সব গুছিয়ে নিয়ে বসের কেবিনে গেলাম...
-May I come in Sir? (আমি)
-Yes come in.. (Boss)
-স্যার আপনি যে ফাইল গুলোর কথা বলেছিলেন, ওগুলো তো আমি সুজিতকে পাঠিয়ে দিয়েছি...
-হ্যা বলেছে.. কিন্তু আমি আপনাকে অন্য একটার জন্য ডেকে পাঠিয়েছি...
-হ্যা স্যার বলুন...
-আগামী ৬দিন পর আমার ছোট মেয়ের বিয়ে... তো আপনার দাওয়াত রইলো... আশা করি আসবেন...
- Oh That's a great news Sir... সেজন্যই আপনাকে আজ এতো খুশি খুশি দেখাচ্ছিলো..
-হ্যা..
-আচ্ছা স্যার অবশ্যই আসবো...
-আসবেন কিন্তু.. আর একটা কথা ছিলো...
-কি স্যার
-সিলেটে আমাদের অফিসের এক নতুন শাখার নির্মাণ চলছে.. তো আপনাকে ৬মাসের জন্য সেখানে Transfer করা হয়েছে.... আপনার এতে কোনো সমস্যা নেই তো?
-না না স্যার কোনো প্রবলেম নেই..
-আপনার বাড়ি তো সিলেটেই না?
-হ্যা স্যার.. সেজন্যই তো এতো খুশি হলাম..
-হ্যা এটা ভেবেই আপনাকে ওখানে Transfer করলাম, আপনার ও ভালো আমারো ভালো.. আগামী ১২/১৩ দিন পর আপনি সিলেট চলে যাইয়েন
- Thank You Sir..
-Welcome... আচ্ছা আপনি এখন আসতে পারেন..
-ওকে স্যার..
-হুম
অফিস থেকে আজ খুব খুশি হয়ে বাসায় ফিরলাম.. বাইরে থেকেই খেয়ে আসছিলাম.. তো বাসায় এসে হাত মুখ ধুয়ে একটু শুয়ে আছি, এমন সময় মেসের মালিক আসলেন...
-হৃদয় কি আছো? (দরজায় নক করে)
-হ্যা.. কে? (আমি)
-আমি তোমার আংকেল (মালিক)
-হ্যা আংকেল ভেতরে আসেন..
-তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো...
-জ্বি বলেন...
-আসলে আমার এক ভাইয়ের ছেলে ঢাকা আসছে... তো ও এখানে এসে তোমার এই রুমটাতে উঠবে.
-তো উঠুক না.. আমার একসাথে থাকতে কোনো প্রবলেম নেই আংকেল..
-আসলে ও শেয়ার করে থাকতে পারবে না.. তো তুমি যদি..... বুঝতে পারছো তো হৃদয়?
-হুম আচ্ছা আংকেল আমাকে ২টা দিন সময় দিন। আমি অন্য কোথাও থাকার ব্যবস্থা করে চলে যাবো
-বাবা তুমি কিছু মনে করো নি তো? আসলে ভাইয়ের ছেলে।। না ও করতে পারি না...
-না আংকেল বুঝেছি.. আচ্ছা আমি দেখছি
-ঠিক আছে বাবা.. দেখো যত তাড়াতাড়ি পারো
-হুম
আংকেল চলে গেলেন...
আর আমি চিন্তা করছি এতো তাড়াতাড়ি বাসা কই পাবো!
কিছু দিন পর আবার সিলেট চলে যাবো....
ধ্যত ভাল্লাগেনা....
কাল ঘুম থেকে উঠেই বাসা খুজতে বের হতে হবে.. তার মানে তো অফিসেও একদিন ছুটি নিতে হবে..
ইসস আজাইরা ঝামেলা..
যাই হোক এখন ঘুমিয়ে পড়ি... সকালে উঠে আবার বেরুতে হবে...
এই ভেবে ঘুমিয়ে পড়লাম...
পরদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে হালকা নাশতা করে থাকার জায়গা খুজতে বেরিয়ে পড়লাম.
তার আগে অফিসে ফোন করে জানিয়ে দিলাম যে আজ অফিসে যেতে পারবো না..
তারপর বেড়িয়ে পড়লাম..
আমার সাথে আমার এক বন্ধু যেতে চেয়েছিলো কিন্ত ওর একটা কাজ পড়ে যাওয়ায় যেতে পারলো না.
আহ দুপুর হয়ে গেলো.. এখন পর্যন্ত কোনো জায়গাই ঠিক হলো না.
একে তো ঢাকা শহর... থাকার জায়গা পাওয়া খুব মুশকিল..
তার উপর ব্যাচেলর হয়ে তো আরো সমস্যা.. কেউ যেন ভাড়া দিতেই চায় না.
শালার ব্যাচেলর বলে কি মানুষ না? আমাদের কি ভাড়া থাকার অধিকার নেই
ধ্যত।।।
খুজতে খুজতে শেষমেশ একটা বাসা পেলাম.. উপরতলা ভাড়া দেওয়া হবে... আমার জন্য একদম পারফেক্ট.. অফিসের কাছেই আছে.. ভেতরে গিয়ে নক করলাম..
-কে? (দরজা খুলে)
-আচ্ছা উপরতলা কি ভাড়া দেওয়া হবে? (আমি)
-হ্যা..
-আমি নিতে চাই..
-নোটিশটা ভালো করে দেখেছেন তো? ভাড়া টারা কতো এসব?
-হুম দেখেই আসলাম
-চাকরি করেন তো?
-হ্যা.. একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে
-আপনি কি ব্যাচেলর?
-না.... (এতোক্ষন সত্যি বলে কাজ হয় নি, তাই মিথ্যা বললাম)
-বাচ্চাকাচ্চা আছে?
-না.. (ভেবে)
-বাহ ভালো.. এরকম কাপলই খুজছিলাম...
-তাহলে কাল থেকেই এসে যাই?
-হ্যা... কালকে ই বউ নিয়ে চলে আসুন
-না আসলে বউ তো আমার সাথে থাকবে না... ও ওর বাপের বাড়িতে থাকে
-. তাহলে তো হচ্ছে না.. Husband Wife কে একসাথে ভাড়া দেবো... নাহলে আসতে পারেন..
-আচ্ছা ঠিক আছে.. আমরা কালকে ই আসছি তাহলে ..
-আচ্ছা.... তাহলে কথা পাক্কা ধরে নেই?
-হ্যা অবশ্যই..
-আচ্ছা
বলে ওই বাসা থেকে বেরিয়ে আসলাম...
ভদ্রলোককে তো বলে ফেললাম কালকে বউ নিয়ে চলে আসবো.. কিন্তু এখন বউ পাই কোথায়? এ বাসা টা তো হাতছাড়া করা যায় না... কিন্তু বউ ছাড়া তো ভাড়াও দেবে না.। কি করি...
ভাবতে ভাবতে হঠাৎ নূপুরের কথা মনে পড়লো.. হ্যা এখন নূপুরই আমাকে হেল্প করতে পারে... দেরি না করে তাড়াতাড়ি নূপুর কে ফোন দিলাম..
-Hello... (নূপুর)
-হ্যা সোনামণি... কেমন আছিস? (আমি)
-ভালো... তুই?
- ভালো টুনটুনি... কি করছিস..?
-কিছু না.. তুই?
-Same কিউটিপাই.
-কি রে তোর কি হয়েছে.. এতো আদর করে কথা বলছিস কেন? জ্বর টর হলো নাকি?
-আরে না না কিউটি... আমি কি তোকে এসব বলে ডাকতে পারি না?
-হ্যা পারিস কিন্তু তুই তো পেত্নি শয়তান্নি এসব ছাড়া আমার সাথে কথা বলিস না। তাই বললাম..
-না সোনামনা এমনি
-ঐ কি হয়েছে বল তো...
-না মানে ইয়ে..
-কি?
-ইয়ে মানে আসলে একটা দরকার ছিলো..
-হ্যা এইই তো চাদু লাইনে এসো.. কি দরকার বলে ফেলো তো ।
-তুই ফ্রি আছিস তো এখন?
-হ্যা কেন
-তুই আমার সাথে এখন দেখা করতে পারবি?
-কেন?
-আরে এমনি তোকে রেস্টুরেন্টে খাওয়াবো
-সত্যি তো?
-হ্যা.. আমি তোকে তোর হোস্টেলের সামনে র রাস্তা টা থেকে পিক আপ করবো নে.. ফোন দিলে বেড়িয়ে পড়িস
-ঐ আমার কেমন কেমন জানি লাগছে..
-আরে কিছু না নূপুর তুই রেডি থাকিস তো..
-আচ্ছা ঠিক আছে..
-হুম
ফোনটা রেখে দিলাম...
মেসে এসে গোসল করে বাইকে নিয়ে চলে গেলাম নূপুরের সাথে দেখা করতে...
উফফ ঠাকুর ঠাকুর করে যে দরকারে যাচ্ছি, সে কাজটা ভালোয় ভালোয় হয়ে গেলেই হয়.
(১ম পার্ট)
সকালে দরজায় পত্রিকাওয়ালার ডাক শুনে ঘুম ভাঙলো....
ঘুম ঘুম চোখে ঘড়ির দিকে তাকালাম.... ৯:২৫ বাজে...
OMG........সাড়ে ন'টা বেজে গেছে...
তাড়াতাড়ি শরীরের উপর থেকে কাঁথাটা একপাশে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বাথরুমের দিকে দৌড় দিলাম....
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দাঁতে ব্রাশ ঘষাতে লাগলাম... চোখে মুখে জল দিলাম...
অতঃপর ফ্রেস টেস হয়ে রুমে এলাম...
একদিকে শার্ট প্যান্ট পড়ে রেডি হচ্ছি.. একইসাথে অন্যদিকে মুখে পাউরুটি ঢুকাচ্ছি... ভালো করে খাওয়ারও সময় নেই.. উফফ অনেক দেরি হয়ে গেছে...
শেষে তাড়াতাড়ি মুখের পাউরুটিটা গিলে টাই টা হাতে নিয়েই তাড়াতাড়ি দরজা লক করে বেরিয়ে পড়লাম..
দ্রুত হাটা ধরলাম... ইসস বাইকটা Repair করাতে দিয়েছি.. নাহলে বাইক দিয়েই যাওয়া যেত..
যাই হোক এখন এসব না ভেবে তাড়াতাড়ি বড় রাস্তায় গিয়ে একটা রিকশায় উঠলাম....
রিক্সায় বসে বসে টাই টা বেধে নিলাম....
আজকে অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে... ব্যাচেলর মানুষ.. ঢাকায় একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করি.. একটা মেসে একাই থাকি.. সকাল সকাল যে কেউ ঘুম থেকে ডেকে তুলবে সেরকম কেউও তো নেই...
যাই হোক, এখন এসব ভাবলে চলবে না.. আমাদের অফিসের বস এমনিতে ভালো হলেও Late করে অফিসে যাওয়া তিনি একদম পছন্দ করেন না...
ধ্যত রাস্তায় এতো জ্যাম কেন! এমনিতেই দেরি হচ্ছে...
মাথা বাড়িয়ে দেখলাম অনেক লম্বা জ্যাম.. না এতো লম্বা জ্যাম তাড়াতাড়ি হালকা হওয়ার নয়, তাই ওখানেই রিকশা থেকে নেমে অফিসের জন্য ছুট লাগালাম...
এহেরে ভাগ্যটা খারাপ মনে হয়... অফিসে ঢুকেই বসের সামনে পড়ে গেলাম..
-Good Morning Sir.. (আমি)
-Yeah Good Morning... তো Mr. হৃদয় আজ এতো Late কেন? (Boss)
-Extremely Sorry Sir.. আশা করি আর হবে না...
-It's ok. Go to the Project room.
-Ok sir.
Boss কে আজ বেশ খুশি খুশি দেখাচ্ছে... ব্যাপার কি কিছুই বুঝলাম না..!
Lunch Time এ আমার এক কলিগ ওর Tiffin Carrier নিয়ে আমার পাশে এসে বসলো....
- হৃদয় ভাই চলুন Lunch সেরে ফেলি.. (রাসেল)
-আপনি করেন ভাই... (আমি)
-আপনি করবেন না? আজ Lunch এ কি আনলেন?
-কি যে বলেন ভাই.. আমার কি আপনার মতো বউ আছে নাকি যে প্রতিদিন Lunch Pack করে দেবে...
-মা নাই?
-হ্যা আছে তো.. কিন্তু তারা তো সিলেট থাকেন... ব্যাচেলর মানুষ, মেসে থাকি.. বুঝেন ই তো..
-হাহাহাহা হ্যা ভাই বুঝলাম...
-হাইসেন না ভাই... এরকম সময় আপনিও পার করে এসেছেন....
-হ্যা রে ভাই... তো বিয়ে-শাদি কবে করছেন?
-ওসব দেরি আছে ভাই...
- হাহাহা তাই
-হুম ভাই
-তো আজ Lunch করবেন না নাকি?
-না ভাই.. অফিস আসতে দেরি হয়ে গেছিলো তাই কিছু আনতে পারি নাই...
-আরে তাতে কি? আমি এনেছি তো... চলুন শেয়ার করি...
-আরে না না ভাই থাক...
-কেন আমার সাথে শেয়ার করতে সমস্যা হবে নাকি?
-না না ভাই তেমন কিছু না
-তাহলে চলুন সেরে ফেলি Lunch টা...
-আচ্ছা ঠিক আছে... (হাসি দিয়ে)
আমি আর রাসেল Lunch করছিলাম... এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো...
বাম হাত দিয়ে Call টা Receive করলাম...
-Hello... (আমি)
-আমার গুলুগুলুটা কেমন আছে রে? (নূপুর)
-ভালোই আছে... আর গুলুগুলুর দুষ্টুটা কেমন আছে?
-হ্যা ভালোই...
-তো কি করছিস?
-এই তো Lunch করতেছি.... You?
-আমি খেয়ে উঠলাম মাত্র...
-ওওও.....
-তো Lunch এ কি নিলি আজ?
-কিছু না.. এক কলিগের টিফিনে ভাগ বসাচ্ছি.. হিহি..
-ভালোই তো... নিজে কিছু নিস নাই কেন?
-আজকে অফিসে আসতে দেরি হয়ে গেছিলো তাই......
-কেন দেরি হলো....
-রাতে ঘুমাতে দেরি হয়ে গেছিলো...
-কেন? রাত করে মেসে ফেরা হয়েছিলো বুঝি?
-আরে না না...
-ব্যাচেলর মানুষ তো তুই.. বুঝি তো..
-আরে তাড়াতাড়িই শুয়ে পড়ছিলাম কিন্তু Load Shedding এর জন্য দেরিতে চোখ লাগলো....
-আচ্ছা আচ্ছা নে এখন Lunch কর্...
-হুম
- অফিস থেকে কখন মেসে ফিরবি?
- সন্ধ্যার পর...
-আচ্ছা এখন রাখছি..
-আচ্ছা..
ফোনটা রাখার পর...
-কি ভাই GF নাকি? (রাসেল)
-আরে না না ভাই...
-কথা শুনে তো Gf Gf ই লাগলো
-আরে না ভাই ও আমার খুব ভালো ফ্রেন্ড.. বেস্ট ফ্রেন্ড বলতে পারেন...
-মেয়ে ফ্রেন্ড?
-হুম...
-হাহাহাহা আমি আর আপনার ভাবিও কিন্তু বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম.. কি বলতে চাইছি বুঝতে পারছেন?
-হাহাহাহাহা হুম বুঝলাম....
-আচ্ছা আমার খাওয়া তো শেষ...
-হ্যা আমারো ভাই....
-আমার এখন একটা মিটিং আছে.. আমি উঠি ভাই..
-আচ্ছা ভাই... Thanks For the lunch... (হ্যান্ডশেক করে)
-ওকে ভাই..
সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফেরার আগে পিয়ন এসে খবর দিলো বস নাকি ডেকে পাঠিয়েছে...
সব গুছিয়ে নিয়ে বসের কেবিনে গেলাম...
-May I come in Sir? (আমি)
-Yes come in.. (Boss)
-স্যার আপনি যে ফাইল গুলোর কথা বলেছিলেন, ওগুলো তো আমি সুজিতকে পাঠিয়ে দিয়েছি...
-হ্যা বলেছে.. কিন্তু আমি আপনাকে অন্য একটার জন্য ডেকে পাঠিয়েছি...
-হ্যা স্যার বলুন...
-আগামী ৬দিন পর আমার ছোট মেয়ের বিয়ে... তো আপনার দাওয়াত রইলো... আশা করি আসবেন...
- Oh That's a great news Sir... সেজন্যই আপনাকে আজ এতো খুশি খুশি দেখাচ্ছিলো..
-হ্যা..
-আচ্ছা স্যার অবশ্যই আসবো...
-আসবেন কিন্তু.. আর একটা কথা ছিলো...
-কি স্যার
-সিলেটে আমাদের অফিসের এক নতুন শাখার নির্মাণ চলছে.. তো আপনাকে ৬মাসের জন্য সেখানে Transfer করা হয়েছে.... আপনার এতে কোনো সমস্যা নেই তো?
-না না স্যার কোনো প্রবলেম নেই..
-আপনার বাড়ি তো সিলেটেই না?
-হ্যা স্যার.. সেজন্যই তো এতো খুশি হলাম..
-হ্যা এটা ভেবেই আপনাকে ওখানে Transfer করলাম, আপনার ও ভালো আমারো ভালো.. আগামী ১২/১৩ দিন পর আপনি সিলেট চলে যাইয়েন
- Thank You Sir..
-Welcome... আচ্ছা আপনি এখন আসতে পারেন..
-ওকে স্যার..
-হুম
অফিস থেকে আজ খুব খুশি হয়ে বাসায় ফিরলাম.. বাইরে থেকেই খেয়ে আসছিলাম.. তো বাসায় এসে হাত মুখ ধুয়ে একটু শুয়ে আছি, এমন সময় মেসের মালিক আসলেন...
-হৃদয় কি আছো? (দরজায় নক করে)
-হ্যা.. কে? (আমি)
-আমি তোমার আংকেল (মালিক)
-হ্যা আংকেল ভেতরে আসেন..
-তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো...
-জ্বি বলেন...
-আসলে আমার এক ভাইয়ের ছেলে ঢাকা আসছে... তো ও এখানে এসে তোমার এই রুমটাতে উঠবে.
-তো উঠুক না.. আমার একসাথে থাকতে কোনো প্রবলেম নেই আংকেল..
-আসলে ও শেয়ার করে থাকতে পারবে না.. তো তুমি যদি..... বুঝতে পারছো তো হৃদয়?
-হুম আচ্ছা আংকেল আমাকে ২টা দিন সময় দিন। আমি অন্য কোথাও থাকার ব্যবস্থা করে চলে যাবো
-বাবা তুমি কিছু মনে করো নি তো? আসলে ভাইয়ের ছেলে।। না ও করতে পারি না...
-না আংকেল বুঝেছি.. আচ্ছা আমি দেখছি
-ঠিক আছে বাবা.. দেখো যত তাড়াতাড়ি পারো
-হুম
আংকেল চলে গেলেন...
আর আমি চিন্তা করছি এতো তাড়াতাড়ি বাসা কই পাবো!
কিছু দিন পর আবার সিলেট চলে যাবো....
ধ্যত ভাল্লাগেনা....
কাল ঘুম থেকে উঠেই বাসা খুজতে বের হতে হবে.. তার মানে তো অফিসেও একদিন ছুটি নিতে হবে..
ইসস আজাইরা ঝামেলা..
যাই হোক এখন ঘুমিয়ে পড়ি... সকালে উঠে আবার বেরুতে হবে...
এই ভেবে ঘুমিয়ে পড়লাম...
পরদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে হালকা নাশতা করে থাকার জায়গা খুজতে বেরিয়ে পড়লাম.
তার আগে অফিসে ফোন করে জানিয়ে দিলাম যে আজ অফিসে যেতে পারবো না..
তারপর বেড়িয়ে পড়লাম..
আমার সাথে আমার এক বন্ধু যেতে চেয়েছিলো কিন্ত ওর একটা কাজ পড়ে যাওয়ায় যেতে পারলো না.
আহ দুপুর হয়ে গেলো.. এখন পর্যন্ত কোনো জায়গাই ঠিক হলো না.
একে তো ঢাকা শহর... থাকার জায়গা পাওয়া খুব মুশকিল..
তার উপর ব্যাচেলর হয়ে তো আরো সমস্যা.. কেউ যেন ভাড়া দিতেই চায় না.
শালার ব্যাচেলর বলে কি মানুষ না? আমাদের কি ভাড়া থাকার অধিকার নেই
ধ্যত।।।
খুজতে খুজতে শেষমেশ একটা বাসা পেলাম.. উপরতলা ভাড়া দেওয়া হবে... আমার জন্য একদম পারফেক্ট.. অফিসের কাছেই আছে.. ভেতরে গিয়ে নক করলাম..
-কে? (দরজা খুলে)
-আচ্ছা উপরতলা কি ভাড়া দেওয়া হবে? (আমি)
-হ্যা..
-আমি নিতে চাই..
-নোটিশটা ভালো করে দেখেছেন তো? ভাড়া টারা কতো এসব?
-হুম দেখেই আসলাম
-চাকরি করেন তো?
-হ্যা.. একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে
-আপনি কি ব্যাচেলর?
-না.... (এতোক্ষন সত্যি বলে কাজ হয় নি, তাই মিথ্যা বললাম)
-বাচ্চাকাচ্চা আছে?
-না.. (ভেবে)
-বাহ ভালো.. এরকম কাপলই খুজছিলাম...
-তাহলে কাল থেকেই এসে যাই?
-হ্যা... কালকে ই বউ নিয়ে চলে আসুন
-না আসলে বউ তো আমার সাথে থাকবে না... ও ওর বাপের বাড়িতে থাকে
-. তাহলে তো হচ্ছে না.. Husband Wife কে একসাথে ভাড়া দেবো... নাহলে আসতে পারেন..
-আচ্ছা ঠিক আছে.. আমরা কালকে ই আসছি তাহলে ..
-আচ্ছা.... তাহলে কথা পাক্কা ধরে নেই?
-হ্যা অবশ্যই..
-আচ্ছা
বলে ওই বাসা থেকে বেরিয়ে আসলাম...
ভদ্রলোককে তো বলে ফেললাম কালকে বউ নিয়ে চলে আসবো.. কিন্তু এখন বউ পাই কোথায়? এ বাসা টা তো হাতছাড়া করা যায় না... কিন্তু বউ ছাড়া তো ভাড়াও দেবে না.। কি করি...
ভাবতে ভাবতে হঠাৎ নূপুরের কথা মনে পড়লো.. হ্যা এখন নূপুরই আমাকে হেল্প করতে পারে... দেরি না করে তাড়াতাড়ি নূপুর কে ফোন দিলাম..
-Hello... (নূপুর)
-হ্যা সোনামণি... কেমন আছিস? (আমি)
-ভালো... তুই?
- ভালো টুনটুনি... কি করছিস..?
-কিছু না.. তুই?
-Same কিউটিপাই.
-কি রে তোর কি হয়েছে.. এতো আদর করে কথা বলছিস কেন? জ্বর টর হলো নাকি?
-আরে না না কিউটি... আমি কি তোকে এসব বলে ডাকতে পারি না?
-হ্যা পারিস কিন্তু তুই তো পেত্নি শয়তান্নি এসব ছাড়া আমার সাথে কথা বলিস না। তাই বললাম..
-না সোনামনা এমনি
-ঐ কি হয়েছে বল তো...
-না মানে ইয়ে..
-কি?
-ইয়ে মানে আসলে একটা দরকার ছিলো..
-হ্যা এইই তো চাদু লাইনে এসো.. কি দরকার বলে ফেলো তো ।
-তুই ফ্রি আছিস তো এখন?
-হ্যা কেন
-তুই আমার সাথে এখন দেখা করতে পারবি?
-কেন?
-আরে এমনি তোকে রেস্টুরেন্টে খাওয়াবো
-সত্যি তো?
-হ্যা.. আমি তোকে তোর হোস্টেলের সামনে র রাস্তা টা থেকে পিক আপ করবো নে.. ফোন দিলে বেড়িয়ে পড়িস
-ঐ আমার কেমন কেমন জানি লাগছে..
-আরে কিছু না নূপুর তুই রেডি থাকিস তো..
-আচ্ছা ঠিক আছে..
-হুম
ফোনটা রেখে দিলাম...
মেসে এসে গোসল করে বাইকে নিয়ে চলে গেলাম নূপুরের সাথে দেখা করতে...
উফফ ঠাকুর ঠাকুর করে যে দরকারে যাচ্ছি, সে কাজটা ভালোয় ভালোয় হয়ে গেলেই হয়.
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন