গোপনে বিয়ে
৭ম পর্ব
নিতুল এলো সন্ধ্যা বেলায়। আমি আর ইমতিয়াজ ভাইয়া বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থেকে এলিজা আর তার মায়ের কবর দেখছিলাম।দুটি কবর একসাথে। এবং সেই কবরগুলো বাঁধানো।কবর দুটো দেখে মনে হচ্ছে মা যেন মৃত্যুর পরেও তার মেয়েটিকে আগলে রেখেছেন তার মায়াভরা বুকে।
বিকেল বেলা যখন নিতুল এলো না তখন ভাবলাম হয়তো আজ নিতুল আসবেই না।তাই আমায় নিয়ে ইমতিয়াজ ভাইয়া কবর দেখাতে এলেন। কবরের কাছে এসে দাঁড়িয়ে ইমতিয়াজ ভাইয়া তার চোখ মুছলেন। তারপর আমায় বললেন,'ডানের কবরটা এলিজার আর তার বামে মা।'
বলে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন তিনি।
আমি বললাম,'আন্টি কীভাবে মারা গিয়েছিলেন?'
ইমতিয়াজ ভাইয়া ব্যাদনাভরা গলায় বললেন,'মার প্রেশার এমনিতেই হাই ছিল।আর ওইদিন এলিজার মৃত্যুর কথা শুনেই সঙ্গে সঙ্গে স্ট্রোক করলেন তিনি। তারপর খুব দ্রুত মৃত্যু বরণ করলেন ।আমি তাকে হসপিটালে নেয়ারও সময় পাইনি। এমনকি নিজেও পর্যন্ত চিকিৎসা দিতে পারিনি! হয়তোবা আমার চেয়ে এলিজকে বেশি ভালো বাসেন বলেই আমায় দুঃখের সাগরে ফেলে দিয়ে তিনি তার কন্যার সাথে ওপারে চলে গিয়েছিলেন সেদিন!'
কথাটি বলে চোখ মুছলেন তিনি। কিন্তু তার কান্না থামছেই না। আবার কেঁদে উঠলেন তিনি। আমি তার কাছে গিয়ে তার একটা হাত ধরে বললাম,'ভাইয়া,আমি তো আছি। আমি আপনার বোন। কাঁদবেন না প্লিজ!'
আর ঠিক তখনই বাড়ির গেটে পা রাখে নিতুল। আমি তাকে দেখিনি কিন্তু সে আমায় দেখে।সে স্পষ্ট দেখতে পায় ইমতিয়াজ ভাইয়ার হাতটা ধরে আছি আমি।আর দেখা মাত্রই সে তেড়ে আসে আমার কাছে। ইমতিয়াজ ভাইয়া তখনও কাঁদছেন। এই কান্নারত মানুষটাকে এক ধাক্কায় দূরে সরিয়ে ফেলে নিতুল আমার হাতটা ধরে টেনে একপাশে নিয়ে এলো। তারপর আমার গালে ঠাস করে দুটো চড় বসিয়ে দিয়ে বললো,'হারামজাদী!মা তো তোকে এমনি এমনি পথে ফেলে রেখে যায়নি। তুই তো সত্যিই একটা বেশ্যা রে!'
ওর মুখ থেকে এমন কথা শুনে আমি কাঠ হয়ে গেলাম।তাই যেভাবে দাঁড়িয়ে ছিলাম ঠিক সেভাবেই গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। কিন্তু ইমতিয়াজ ভাইয়া আমার মতো কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন না। খুব দ্রুত তিনি নিতুরের শার্টের কলার টেনে ধরে বললেন,'কী বলেছিস নাতাশাকে?'
নিতুল রাগে চোখ মুখ অগ্নিশর্মা করে বললো,'আমি আমার বউকে বেশ্যা বলেছি তাতে তোর কী রে শুয়োরের বাচ্চা?'
ইমতিয়াজ ভাইয়া এবার ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলেন নিতুলের গালে। তারপর বললেন,'ইতর!ও আমার বোন হয় বুঝলে? ভাইয়ের সামনে বোনকে কেউ বকলে তাকে এভাবেই চড় দিতে হয়।'
নিতুল ইমতিয়াজ ভাইয়ার হাত থেকে ছুটতে চেষ্টা করছে কিন্তু ইমতিয়াজ ভাইয়ার শক্তির সাথে সে পেরে উঠছে না।
আমার কেন যে নিতুলের জন্য এতো মায়া! ইমতিয়াজ ভাইয়া ওকে মারছে এটা দেখে আমার মোটেও সহ্য হচ্ছে না।তাই আমি ইমতিয়াজ ভাইয়ার একটা হাত টেনে ধরে বললাম,'ভাইয়া, প্লিজ আপনি ওকে ছেড়ে দিন। প্লিজ ভাইয়া।মারতে হয় আপনি আমায় মারুন!'
আমার কথায় ইমতিয়াজ ভাইয়া নিতুলকে ছেড়ে দিলেন। আমি এবার নিতুলের কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরতে চাইলাম। কিন্তু নিতুল আমায় এক ধাক্কায় মাটিতে ফেলে দিয়ে বললো,'এই নষ্টা, তুই আমার শরীর ছুঁবি না!'
ওর এমন আচরণে আমার চোখে জল এসে গেল। আমি কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম,'আমি কী করেছি আবার? আমার কী দোষ? আমি তো তোমার কথায়ই ভাইয়ার বাসায় এসেছি!'
নিতুল এবার রাগী গলায় বললো,'আমি কী তোকে বলেছিলাম যে ভাইয়ার ঘরে এসে একেবারে ভাইয়ার সাথে শুয়াশুয়ি করে ফেলো?'
কথাটা শুনে আমার চোখ কেমন অন্ধকার হয়ে এলো।মাথা ঘুরে আমি পড়ে গেলাম ধুলোর উপর। ইমতিয়াজ ভাইয়া এবার এক লাথি দিয়ে নিতুলকে ফেলে দিলেন মাটিতে। তারপর ওর গলায় চেপে ধরে বললেন,'কী বলেছিস তুই? এই কুকুর,কী বলেছিস তুই আমার বোনকে নিয়ে?'
নিতুল নীচ থেকেই ইমতিয়াজ ভাইয়ার মুখে থুথু ছিটিয়ে দিয়ে বললো,'এতো ভালো গিরি দেখাসনে! তুই আমার বউটার মাথা নষ্ট করে দিয়েছিস!'
ইমতিয়াজ ভাইয়া ওর দু গালে আবার চড় বসিয়ে দিয়ে বললেন,'তুই আসলেই পুরুষ না বুঝলে তুই হলি একটা কাপুরুষ!'
নিতুল বললো,'আমি কাপুরুষ কি না আসল পুরুষ এটা তোর বোন নাতাশাকে জিজ্ঞেস করে দেখ!'
ইমতিয়াজ ভাইয়ার এবার মাথা আরো খারাপ হয়ে গেল। তিনি এবার নিতুলের শরীরে লাথি দিতে দিতে বললেন,'তোকে আজ আমি মেরেই ফেলবো রে কুকুর!'
নিতুল বললো,'আমি এর শোধ তুলবো নাতাশার কাছ থেকে।চড়া শোধ তুলবো!'
আমি আবার এলাম ইমতিয়াজ ভাইয়ার কাছে। এসে ভাইয়ার হাত ধরে বললাম,'প্লিজ ভাইয়া,ও আর এমন করবে না। ওকে ছেড়ে দিন। আমার কষ্ট হচ্ছে খুব ওকে এভাবে দেখে!'
আমার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো।
ইমতিয়াজ ভাইয়া এবার আমায় ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে ফেলে বললেন,'আমার কাছে ঘেঁষবে না তুমি!একটা কুকুরের জন্য এতো দরদ দেখাচ্ছো!'
আমি বললাম,'ভাইয়া,আমি ওকে ভালোবাসি যে!'
কিন্তু ইমতিয়াজ ভাইয়া আবার ধমকে উঠলেন আমায়। বললেন এলিজ মারা গেছে।ওর মারা যাওয়ার কারণ পুণমকে ওর কথায় সেদিন ছেড়ে দিয়েছিলাম। এবার তোমার কথায় এই কুকুরকে ছেড়ে দিয়ে আমি দ্বিতীয় ভুল করতে পারবো না আর!'
ইমতিয়াজ ভাইয়া এই কথা বললেও নিতুলকে তিনি ছেড়ে দিলেন। ছেড়ে দিয়ে বললেন,'এক্ষুনি চলে যা এখান থেকে। আমি নাতাশাকে তোর সাথে যেতে দিবো না।'
নিতুল মাটি থেকে উঠে শরীর ঝেড়ে ধুলোবালি পরিষ্কার করতে করতে বললো,'নাতাশা, তোমার কাছে কে বেশি?
আমি না ওই ডাক্তার?'
আমি কী বলবো বুঝতে পারছি না। আমি তো নিতুলকেই ভালোবাসি।নিতুল আমার স্বামী। আমার কাছে তো সেই ই বেশি।
আমি কিছু বলার আগেই নিতুল বললো আবার,'কিছুই বলতে হবে না তোমার। ওই ডাক্তার যদি তোমার কাছের মানুষ হয় তবে তুমি ডাক্তারের সাথেই থাকো।'
বলে সে রাগী রাগী মুখ নিয়ে হাঁটা ধরলো।
আমি তখন একবার ইমতিয়াজ ভাইয়ার মুখের দিকে তাকালাম।তার মুখে রাগের ছাপ। কিন্তু আমি চিন্তা করলাম নিতুল তো আমার স্বামী।ও আমায় নিতে এসেছে এখান থেকে।সে চেয়েছে আবার আমরা যেন এক হই। আমার শাশুড়ির ভুল ভাঙিয়ে এসেছে সে। এইসব কিছু ভেবেই ইমতিয়াজ ভাইয়াকে কিছু না বলেই দৌড়ে গেলাম নিতুলের কাছে। গিয়ে বললাম,'নিতুল,আমি তোমার সাথেই যাবো। তুমি তো আমার ভালোবাসা। তুমি ছাড়া আর কোথায় যাবো বলো আমি!'
নিতুল কোন কথা বললো না।
সে চুপচাপ হাঁটছে। আমিও তার সাথে হাঁটতে লাগলাম।
******************************
https://banglalovestory247.blogspot.com/
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন