সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গল্পঃ এক রাতের বউ ( পর্ব ২)


 এক রাতের বউ

 পর্ব ২

আমি- হাসা কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য ভালো ভাইয়া।

আরাভ- হুম।

আমি- তাইলে মুখ বাকা কইরা থাকেন কিনু? হাসতে থাকুন বেশি কইরা। 

এইটা বলে আমি উঠে আগাতে গিয়ে খাইলাম উস্টা।

আমি- উরিম্মা।

আরাভ- পাগলি নাকি আপনি? (আমাকে এভাবে পড়তে দেখে আরাভের প্রচুর হাসি পেলো)

আমি- আপনি এইটা ইঁদুর। যখন হাসতে কই হাসেন না। এখন আমি পড়ে গেছি আর আপনি হাসছেন?

আরাভ- আপনি সত্যি হাসাতে পারেন।

আমি- হাসাহাসি পরের ব্যাপার। সরি বলেন আমাকে। (আমি উঠে দাড়ালাম)

আরাভ- মানে?

আমি- মানে আপনি আমাকে পড়তে দেখে হেসেছেন তাই সরি কন।

আরাভ- নাহ আমি কাউকে সরি বলি না।

আমি- হুহ। ভালো ইউ আফ্রিকান তেলাপোকা। ভাগেন। আর আমু না কাউকে মন খারাপ হয়ে বসে থাকতে দেখেও। হুহ। মিমি কই তুই।


এটা বলে সেদিন রাগেই চলে এসেছিলাম। এটাই ছিলো আমার সাথে আরাভের পরিচয়। হঠাৎ ফ্লাশব্যাক থেকে ফিরে এলাম।


আরাভ- এখনো এভাবে বসে যে? যাওয়ার ইচ্ছে নাই বুঝি?

আমি- মেরে ফেললেই তো পারতেন। কেনো এমন জীবন দিলেন আমাকে?

আরাভ- মারতে পারবো না রে পাগলি। 

আমি- আমাকে এই নামে ডাকবেন না।

আরাভ- কেনো নিজেই তো আগে কয়েকবার বলেছিলে তুমি পাগলি।

আমি- চুপ করুন। কেনো যে আমার আপনার সাথে পরিচয় হলো? সেদিন যদি না হতো আমি আজ পবিত্র হতাম।

আরাভ- হয়তো ঠিক। পরিচয় না হলে ভালো হতো। কিন্তু তোমাকে পাওয়ার ইচ্ছা ছিলো গো। চলো পৌঁছে দেই তোমাকে।

আমি- বিষ এনে দেন।

আরাভ- এতো সাহস নাই তোমার অন্তত এটা জানা আছে আমার।

আমি- কিছুই জানেন না। জানলে এতো বড় ক্ষতি করতেন না আপনি।

আরাভ- হাহা হুমমম। আর কিছু?

আমি- আপনি কি জানেন আপনি একটা অমানুষ?

আরাভ- জানি। আর কিছু?

আমি- আই হেট ইউ যাস্ট হেট ইউ।

আরাভ- বাট আই ডোন্ট হেট ইউ।

আমি- লাভ করেন?

আরাভ- না।

আমি- তো এটা কেনো করলেন?

আরাভ- জানি না।

আমি- কি জানেন?

আরাভ- কিছুই না। 

আমি- আপনি কি বলতে পারবেন আমি এখন এই অবস্থায় কই যাবো?

আরাভ- ডোন্ট ওয়ারি কেউ জানবেই না। তুমি যে কাউকে বিয়ে করে নিও আর কখনো হেল্প লাগলে বলিও আমি হেল্প করবো।

আমি- আমি পতীতা নই। মাথায় রাখবেন। 

আরাভ- জানি রে পাগলি।

আমি- পাগলি বলবেন না।

আরাভ- ওকে বেবি।

আমি- মুখ বন্ধ করুন।

আরাভ- আসো কাছে আসো করছি।

আমি- প্লিজ।

আরাভ- ওকে ওকে চলো।


অগত্যাই বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হলাম। দুজনে গাড়িতে। আরাভ ড্রাইভ করছে। আমার প্রচুর ঘৃণা হচ্ছে ওর প্রতি। আমি ভাবতেও পারি নি এমন কিছু হবে। আরাভ খারাপ জানতাম। বাট এতো পরিমাণ এটা ধারণার বাহিরে ছিলো।

আমি- আমি কয় নাম্বার?

আরাভ- কিসে?

আমি- এই যে লাইফ নষ্ট করায়?

আরাভ- ৬ নাম্বার।

আমি- কি দোষ করছি আপনার দূরররর?

আরাভ- কিছুই না।


আমি আর কিছি বললাম না। জানালার বাহিরে তাকিয়ে কাঁদছি চুপচাপ। কারণ আমার কিছুই করার নাই। এখনো নিজেকে দোষ দিচ্ছি কেনো পরিচয় হলো তার সাথে।

আরাভ- আনহা

আমি- (নিশ্চুপ)

আরাভ- জবাব দেও।

আমি- কি জবাব চান আর?

আরাভ- কিছু না তুমি চুপ থাকলে ভালো লাগে না। কথা বলো।

আমি- কথা হারিয়ে দিলেন আপনি।

আরাভ- ওকে বলো না।


আমি আবার স্মৃতির পাতায় আবার ডুব দিলাম। সেদিন প্রথম যোগাযোগ হয়েছিলো আরাভের সাথে। তারপর দেখা হয়েছিলো দেরিতে। সেদিন প্রথমে না চিনলেও পরে চিনেছিলাম। যদিও আরাভ আমাকে আগেই চিনেছিলো। হয়তো আমার মতো পাগলি আর পায় নি।


দেখা হয়েছিলো এক পশলা বৃষ্টিতে। আমি ভিজছিলাম নির্জন রাস্তায়। আজকের মতোই। আমার মতে ছিলো বৃষ্টি সব ধুয়ে দেয় কষ্টও। সেদিন মিমি আসে নি। আমি একাই রাস্তায় হাটছিলাম। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়েছিলো। হাটছিলাম বৃষ্টিতেই। হাতে ছাতা ছিলো কিন্তু খুলার ইচ্ছা একদম ছিলো না। সামনে দিয়ে একটা গাড়ি যাচ্ছিলো। গাড়িটা পাশে দিয়ে যেতেই আমার গায়ে কাঁদা ছিটকে এলো, রেগেই বলে উঠলাম,


আমি- ওই আফ্রিকান ইঁদুর। দেখে চলতে পারেন না। বাচ্চা মাইয়ার গায়ে কাঁদা ছিটালেন। তেলাপোকা কোনেকার।


এই বলার কিছু সময়ের মধ্যেই আরাভ বের হয়ে এলো গাড়ি থেকে। সেদিন তার পড়নে ছিলো সাদা শার্ট আর ব্লাক জিন্স। বৃষ্টির আড়ালে তাকে দেখে পুরোই অন্য রকম লাগছিলো। আমি ভেবে বসেছিলাম হয়তো ক্রাশ খেয়ে গেছি। ভেবেছি সরি বলবে কিন্তু সে সামনে এসেই,

আরাভ- নিজের চোখ নাই? দেখে চলতে পারেন না? এতো বৃষ্টিতে কে রাস্তার মাঝে দিয়ে হাটে? বাচ্চা আপনি? নাকি অবুঝ?

(আমি ভাবলাম আমিই দোষী ইট্টু তাই মাথা নিচু করে নিলাম। প্রথমে আরাভও চিনে নি।)

আরাভ- কি হলো? উপরে তাকান।

আমি- ইয়ে মানে সরি। আমি পালাইলাম টাটা। (এইটা বলে উল্টা দিকে হাটা শুরু করলাম। ভয়ে আর তাকাচ্ছি না। নইলে আরো বকা খাবো এই ভেবে।)


পিছন দিয়ে, "আপনি ওই পাগলি মেয়েটা না?"

এই কথাটা শুনে আমি পিছনের দিকে তাকালাম। ভালো করে তাকিয়ে বুঝলাম আমি তাকে হয়তো চিনি। কিন্তু কেমনে চিনি মনে পড়ছিলো না। মানুষ তো আমাকেই পাগলি বলে তাই অগত্যাই বললাম, "হুমম"

আরাভ- হুম বুঝেছি কনসার্টে যেমন পাগলামি করলেন তাতেই বুঝে গেছিলাম আপনি পাগলি। আজ যেভাবে হাটছিলেন বুঝেছি আপনি পুরাই মাথা খারাপ মাইয়া। (এবার মনে পড়ে গেলো সব)

আমি- হোয়াট ইজ মাথা খারাপ মাইয়া? মুই ভালো মাইয়া।

আরাভ- এই ধরনের ভাষা ভালো লাগে না ভালো করে কথা বলুন।

আমি- নো আই উইল কমু এই ভাবেই।

আরাভ- চুপচাপ ভালো করে কথা বলুন। কথা বললে ভালো করে বলুন। নইলে যান।

আমি- উকে আই উইল চলে যাচ্ছি।


পা বাড়ালাম। মনে হলো কে যেন হাত ধরছে আমার। পিছনে তাকিয়ে দেখি আরাভ।

আমি- এমা গো ছাড়েন। মোর ব্যাথা লাগে।

আরাভ- ভালো করে বলুন।

আমি- ওকে ছাড়েন ভাইয়া আমার হাত।


আরাভ হাত ছেড়ে দিলো। 

আমি- উরিমা ব্যাথা রে। কি খান? এতো শক্তি কেমনে? 

আরাভ- হাহা।

আমি- ভিলেন মার্কা হাসি ছাড়েন। ইউ গন্ডার।

আরাভ- কি? 


আরাভ রাগী লুক দিলো। 

আমি- না মানে মুই কিছু কই নাই। যাই বাড়িতে আমার ৪-৫ টা বাচ্চা আছে ওরা মনে হয় মা মা করছে। ওরে আমার টেপা, টেপি, টুপু, টাপা, টুপা আমি আইতাছি।


এই বলে আমি এক দৌড় দিলাম। আরাভ কিছু বলার ভাষা পাচ্ছিলো না আমার এ ধরণের কথা শুনার পর। কিছু সময় নির্বাক তাকিয়ে ছিলো। সেদিন বাড়ি ফিরে ঠিক করে নিয়েছিলাম আর কোনোদিন রাস্তায় কাউকে এভাবে গালি দিবো না নইলে কপালে দুঃখ।

হঠাৎ বাইরে মেঘের গুড়গুড় আওয়াজ হলো। ঘোর ভেঙ্গে গেলো। আজও বৃষ্টি হচ্ছে। কেনো যেন আমার এই বৃষ্টিকেও ঘৃণা লাগছে। আরাভের দিকে তাকাতেই,

আরাভ- কি বৃষ্টি ভিজবা? নাকি প্রথম বৃষ্টিতে ভিজার কথা মনে পড়লো।

আমি- সেটাও আমার ভাগ্যেরই হয়তো দোষ ছিলো।

আরাভ- হাহা সেটাও ঠিক। আমার সাথে দেখা হওয়া তো দোষই।

আমি- অবশ্যই।

আরাভ- গান শুনবা?

আমি- না।

আরাভ- আমি শুনবো।

আরাভ গান ছেড়ে দিলো, 

"না বলা কথা কিছু,

থাক অজানা।

কবিতার ভাষায় হোক আনাবোনা।"


আমি বন্ধ করে দিলাম। আরাভ আবার বন্ধ করে দিলো। আমি আর কিছু বললাম না। আরাভ আমাকে শহর থেকে কিছুটা দূরেই এনেছিলো। তাই যাইতে সময় লাগছিলো। আমার আবার কান্না পেতে লাগলো সব ভেবে।

****************************************
https://banglalovestory247.blogspot.com/




মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

গল্প: ১০ দিনের বউ

গল্প: ১০ দিনের বউ সকালে দরজায় পত্রিকাওয়ালার ডাক শুনে ঘুম ভাঙলো.... ঘুম ঘুম চোখে ঘড়ির দিকে তাকালাম.... ৯:২৫ বাজে... OMG........সাড়ে ন'টা বেজে গেছে... তাড়াতাড়ি শরীরের উপর থেকে কাঁথাটা একপাশে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বাথরুমের দিকে দৌড় দিলাম.... যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দাঁতে ব্রাশ ঘষাতে লাগলাম... চোখে মুখে জল দিলাম... অতঃপর ফ্রেস টেস হয়ে রুমে এলাম... একদিকে শার্ট প্যান্ট পড়ে রেডি হচ্ছি.. একইসাথে অন্যদিকে মুখে পাউরুটি ঢুকাচ্ছি... ভালো করে খাওয়ারও সময় নেই.. উফফ অনেক দেরি হয়ে গেছে... শেষে তাড়াতাড়ি মুখের পাউরুটিটা গিলে টাই টা হাতে নিয়েই তাড়াতাড়ি দরজা লক করে বেরিয়ে পড়লাম.. দ্রুত হাটা ধরলাম... ইসস বাইকটা Repair করাতে দিয়েছি.. নাহলে বাইক দিয়েই যাওয়া যেত.. যাই হোক এখন এসব না ভেবে তাড়াতাড়ি বড় রাস্তায় গিয়ে একটা রিকশায় উঠলাম.... রিক্সায় বসে বসে টাই টা বেধে নিলাম.... আজকে অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে... ব্যাচেলর মানুষ.. ঢাকায় একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করি.. একটা মেসে একাই থাকি.. সকাল সকাল যে কেউ ঘুম থেকে ডেকে তুলবে সেরকম কেউও তো নেই... যাই হোক, এখন এসব ভাবলে চলবে না.. আমাদের অফিসের বস এমন...

{গল্প: হেড মাষ্টারের দুষ্টু মেয়ে }

  গল্প: হেড মাষ্টারের দুষ্টু মেয়ে জে এস সি পাশ করে আজ নতুন একটা স্কুলে ভর্তি হলাম অবশ্য আগে বাবা মার সাথে থাকতাম এখন ভাইয়ার কাছে আসলাম কারন স্কুল টা কাছে তাই | তো আজ প্রথম স্কুলে গেলাম ক্লাসে ঢুকবো তখনি দেখি কে যানো আমাকে লেং মেরে ফেলে দিছে তখন থাপ্পর দিতে যাবো তখনি দেখি এটা আর কেও না একটা মেয়ে দেখছি হাসছে আর মেয়ে টাও অপূরুপ সুন্দর মনে হলে এক মায়াবতী দূর এই সব চিন্তা করে লাভ নাই তো দেখি মেয়েটা বলতেছে- মেয়ে: এই ছেলে চোখে দেখিস না ? আমি অবাক হয়ে গেলাম কার প্রশ্ন কাকে বলার কথা সে আমাকে বলতেছে তখন আমি বল্লাম- আমি: আজব তো আপনি তো আমাকে লেং মেরে ফেলে দিছেন ? মেয়ে: এই তুই দেখছিস আমি তোকে ফেলে দিছি ? আমি: না আল্লাহ তো আমাকে কানা বানিয়ে দুনিয়া পাঠাইছে কিছু তো দেখি না | দেখি আমার কথা শুন হাসতেছে পরে বল্লো----> মেয়ে: এই তোর সাহস তো কম না বড়দের সাথে এইভাবে কথা বলস ? আমি: বড় মানে আর আপনি এইভাবে তুই তোকারি ভাবে কথা বলতেছেন কেনো? মেয়ে: কি তোর কত্ত বড় সাহস আমার সাথে এরকম ভাবে কথা বলিস তুই আমাকে চিনিস আমি কে ? আমি: কেনো আপনি কি প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে নাকি যে ভালোভাবে কথা...

গল্প::অবশেষে ম্যামের প্রেমে পড়লাম

   Bangla Love story গল্প:: অবশেষে ম্যামের প্রেমে পড়লা আমি রনি অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ি। আমাদের কলেজের সব স্যারেরা আমাকে ভালো ভাবেই চেনেন। কারনটা হলো আমি কলেজের টপার।লেখাপড়ায় যেমন ভালো খেলাধুলায় ও তেমন ভালো।তাছাড়া কলেজের যে কোন অনুষ্ঠানেও আমাকে উপস্থাপনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়।এমনকি আন্ত কেলেজ ক্রিকেট ও ক্যরাটি টুনামেন্টেও আমার জন্যে আমাদের কলেজ চাম্পিয়ন হয়েছে এবার।সব স্যারেরা আমাকে নিয়ে গর্ব করে। আর সারা কলেজের মেয়েরাতো আমার সাথে কথা বলার জন্য পাগল।তবে আমি কারও সাথে মানে মেয়েদের সাথে কথা বলি না। আমি সব বিষয়ে পারদর্শী হলেও একটা বিষয়ে অনেক পিছিয়ে আছি আর তা হলো মেয়েদের কে খুব ভয় পায়। কলেজে কোন মেয়ের সাথে কথা বলিনা যদিও মেয়েরা আমার সাথে কথা বলার জন্য আমার পিছনে পিপড়ার মতো লাইন দিয়ে থাকে সবসময়। ।।আমাদের কলেজের প্রিন্সিপালের মেয়ে নাম মোহনা,আজ আমাদের কলেজেই ইংরেজির টিচার হিসেবে জয়েন করবে।তাকে আজ বরণ করা হবে। সেই জন্য আমাদের কলেজ ক্যাম্পাসে আজ একটা মিলন মেলা বসেছে মানে কলেজের সকল ছাত্র-ছাত্রী এবং সার, আমরা সবাই ক্যাম্পাসে অধীর আগ্রহে বসে আছি কখন নতুন ম্যামকে বরন ...